জানা অজানা

দীর্ঘায়ুর দ্বীপের বিস্ময়কর গল্প

দীর্ঘায়ুর দ্বীপের বিস্ময়কর গল্প

দীর্ঘায়ুর দ্বীপের বিস্ময়কর গল্প ! জাতিসংঘের হিসেব অনুযায়ী, গোটা বিশ্বে মানুষের গড় আয়ু সর্বোচ্চ ৭২ দশমিক ৬ বছর। দেশভেদে আয়ু কম বা বেশিও হতে পারে। তবে বিশ্বে এমন এক দ্বীপ আছে যেখানকার বাসিন্দারা  বিশ্বের অন্যান্য অঞ্চলের মানুষের চেয়ে বেশিদিন বাঁচেন।

এ দ্বীপের বাসিন্দারা ১০০ বছর পর্যন্ত বাঁচেন

২৫৪ বর্গকিলোমিটার আকৃতির ছোট্ট সেই দ্বীপের নাম ইকারিয়া। রহস্যময় কোনো কারণে গ্রীসে অবস্থানরত এ দ্বীপের বাসিন্দারা অন্তত ১০০ বছর পর্যন্ত বেঁচে থাকেন। ফুসফুসের ক্যান্সারের মতো কোনো রোগ নেই এ অঞ্চলের মানুষের।

এখানকার মানুষ প্রসঙ্গে ন্যশনাল জিওগ্রাফির এক পর্যবেক্ষণে বলা হয়েছে, ‘যে দ্বীপের মানুষরা মরতে ভুলে যায়’। ওখানে আরও বলা হয়েছে, যৌণ জীবন থেকে খাদ্যাভাস, পর্যাপ্ত ঘুম, মানসিক চাপমুক্ত জীবন এখানকার মানুষকে দীর্ঘজীবী হতে সাহায্য করেছে।

ইউরোপ ও আমেরিকার চেয়ে এখানকার মানুষ কম পক্ষে ১০ বছর বেশি বাঁচেন। এখানকার জনসংখ্যার প্রায় এক তৃতীয়াংশ নব্বই বছরের বেশি বাঁচেন।

মানসিক চাপমুক্ত জীবনযাপন করেন এখানকার বাসিন্দারা

ইকারিয়ানরা ডিমেনশিয়ায় ভোগেন না বললেই চলে । এখানকার মানুষের শতকরা ২০ ভাগেরও কম ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়। এখানে হতাশায় ভোগা মানুষের সংখ্যা কম। এ কারণে হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিও কম।

ন্যাশনাল জিওগ্রাফির ফেলো এবং আমেরিকান লেখক বুয়েটনার  তার বইয়ে ষাটের দশকে ফ্লোরিডায় বসবাসকারী স্ট্যাম্যাটিস মোরাইটিসে  নামে এক ব্যক্তির গল্প উল্লেখ করেছেন। সেখানে বলা হয়েছে, স্ট্যাম্যাটিস মোরাইটিসে ক্যান্সারের সঙ্গে লড়াই করছিলেন।  চিকিৎসকরা জানিয়েছিলেন, তিনি আর নয় মাস বাঁচবেন।। স্ট্যাম্যাটিস মোরাইটিসে চিকিৎসার পরিবর্তে  নিজের বাড়ি ইকারিয়া দ্বীপে ফিরে আসেন।

ওই দ্বীপে যাওয়ার পর প্রথম দিকে মোরাইটিসের শুয়েই সময় কাটাতেন। পরে তিনি বাইরে গিয়ে বন্ধুদের সঙ্গে মিশতে, বাগান করে সময় কাটাতে শুরু করলেন। এরপর থেকে তিনি সুস্থ হতে থাকলেন। পরে চিকিৎসকের ভবিষ্যৎ বাণী মিথ্যে প্রমাণ করে তিনি নব্বই বছর পর্যন্ত জীবিত ছিলেন।

‘দ্য গার্ডিয়ান’ এ প্রকাশিত এক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ১০০ বছর বয়সী এখানকার এক বাসিন্দা জানিয়েছেন, ৭০ বছর ধরে সিগারেট খেলেও তিনি কখনোও গুরুতর অসুস্থ হননি। তবে নিয়মিত ভাবে তিনি প্রতিদিন ৪ কিলোমিটার পথ হাঁটেন।

আশ্চর্য এ দ্বীপের বাসিন্দারা নিজস্ব ঘড়িতে চলেন। উৎকণ্ঠাহীন জীবন এ দ্বীপের বাসিন্দাদের বড় বৈশিষ্ট্য।

খাদ্যাভাস এ দ্বীপের বাসিন্দাদের দীর্ঘায়ু করতে সাহায্য করে

এ দ্বীপের দোকান মালিকরা ইচ্ছামতো  তাদের দোকানগুলো খোলেন এবং বন্ধ করেন। এটা নিয়ে কারও কোনো অভিযোগও নেই। দ্বীপবাসীরা অন্যের সেবা করে কিংবা অন্যের অধীনে বাধ্য  হয়ে কাজ করার জীবনপদ্ধতি বিশ্বাস করেন না।

এখানকার বাসিন্দারা শক্তিশালী রেড ওয়াইন পান করে, গভীর রাতে ডমিনো গেমস খেলে কিংবা পার্বত্য অঞ্চলে হাঁটাচলা করে জীবনের উচ্ছলতা ধরে রেখেছেন।

দ্বীপের জনসংখ্যা ৮ হাজার ৫০০ এর কাছাকাছি। সুদৃঢ় সামাজিক সংযোগ বন্ধন এবং দ্বীপের প্রবীণ বাসিন্দাদের সক্রিয় রাখায় এ অঞ্চলের মানুষের স্বাস্থ্য ও দীর্ঘায়ু হওয়ার অন্যতম প্রধান কারণ হিসেবে ধরা হয়।

ইকারিন দ্বীপের বাসিন্দারা খুব কম পরিমাণে মাংস এবং দুগ্ধজাত খাবার খান। এর পরিবর্তে তাদের খাদ্য তালিকায় থাকে শাকসবজি, ফলমূল, মাছ, শিম, ভেষজ খাবার এবং অলিভ অয়েল।

ইকারিয়ানদের বেশিরভাগই স্বাবলম্বী । এদের মধ্যে রাখাল, কৃষক, জেলে, দোকান মালিক এবং কারিগর রয়েছে। বেশিরভাগ পরিবার তাদের নিজস্ব উৎপাদন সরবরাহ বাড়ায়।।

এ দ্বীপে উৎসব লেগেই থাকে

এখানকার মানুষ নিজেকে ফিট রাখতে নিয়মিত ব্যায়ামও করেন।

দীর্ঘায়ুর এ দ্বীপে উৎসব লেগেই থাকে। মে থেকে অক্টোবর পর্যন্ত প্রতি সপ্তাহে এ দ্বীপে নানারকম উৎসবের আয়োজন করা হয়।

এ দ্বীপের রাচে দ্বীপে পুলিশ স্টেশন থাকলেও বহু বছর ধরে তা বন্ধ হয়ে গেছে।

ইকারিয়ান দ্বীপের বাসিন্দারা তাই করেন যা তাদের করতে ভালো লাগে।

দীর্ঘায়ুতা আসলে তাদের জন্য কাকতালীয়ভাবে বোনাস।

সংবাদটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

sixteen − 13 =