প্রসঙ্গঃ চা বাগানে ভোট উৎসব
জীবন পাল।। গত ৫ জানুয়ারী শ্রীমঙ্গল উপজেলায় অনুষ্ঠিত হয়ে গেল পঞ্চম ধাপের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন। ভোটের দিন প্রতিটি চা বাগানগুলোতেই উৎসবমুখর পরিবেশ লক্ষ্য করা যায়।
সকাল থেকেই লাখাইছড়া,কালীঘাট, ফুলছড়া ও কাকিয়াছড়া প্রতিটি কেন্দ্রের বাইরে ভোটারদের দীর্ঘ লাইন দেখা যায়। তবে এসব কেন্দ্রে পুরুষদের থেকে মহিলাদের লাইনটি দীর্ঘ ছিল। উৎসব আমেজে চলছিল ভোটগ্রহণ।
শুরুর দিকেই নিজের ভোটটা দেবার আশা নিয়ে নাস্তা না করেই ভোটকেন্দ্রে এসেছিলেন তপসী। কিন্তু এত তাড়াতাড়ি আসার পরেও নিজের ভোটটা দেওয়ার আশা নিয়ে সকাল ১১ টা পর্যন্ত দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায় মধ্য বয়সী এই ভোটারকে। আরো প্রায় ১০ জনের পরে ভোট কেন্দ্রে ঢুকে বহুকাঙ্ক্ষিত ভোটটি নিজের পছন্দের প্রার্থীদেরকে দিয়ে নিজের নাগরিক দায়িত্বটা পালন করতে পারবেন তিনি।
দিন ছোট। দেখতে দেখতে সময় চলে যায়। তাই ৪ টা বেজে গেলে নিজের গুরুত্বপূর্ণ ভোট দেওয়া থেকে বঞ্চিত হবেন দেখে ভোট দিয়ে বাসায় গিয়ে নাস্তা করবে বলে তাড়াতাড়ি করে ভোটকেন্দ্রে এসেছেন পুতুল। এসে দেখেন তার মতো অনেকেই আগেভাগে ভোট দেওয়ার আশায় ভোটকেন্দ্রে উপস্থিত হয়ে দীর্ঘ লাইন তৈরি করে দিয়েছেন।
এদিকে সকাল পেরিয়ে দুপুর ঘনিয়ে আসলেও উকুমাকে আরো কয়েকজনের পরে ভোট দেওয়ার জন্য অপেক্ষা করতে হচ্ছে। তারপর নিজের ভোটটি দিয়ে বাড়ি ফিরতে পারবে।
শুধু তপসী,পুতুল,উকুমা নয়। তাদের মত অনেকেই ঘন কুয়াশার মধ্যেই ভোটকেন্দ্রে ভোট দিতে এসেছেন না খেয়ে। যাতে বেলা বাড়ার সাথে সাথে মানুষের ভীড় বাড়ার আগেই নিজেদের ভোটটা দিয়ে বাড়ি ফিরে যেতে পারে।
ভোটকেন্দ্রে পুরুষদের সারিতে ৭-১০ জন দেখা গেলোও,মহিলাদের প্রতিটি সারিতে দেখা গেছে ২০ জনের অধিক।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে অনিল পাল নামের এক ভোটার জানান, আসলে বাগান ছুটি থাকলেও বাড়িতে মহিলাদের কিন্তু কাজের শেষ নেই। সেজন্য মহিলারা এসেছেন তাড়াতাড়ি ভোট দেওয়া শেষ করে যাতে বাসায় গিয়ে বাসার কাজকর্ম করতে পারে। অন্যদিকে পুরুষরা আস্তে ধিরে এসে ভোট দিতে পারবেন বলে খুব একটা তাড়হুড়ো করেনি। যে যার সুযোগ মত ভোটকেন্দ্রে এসে ভোট দিয়ে যাচ্ছেন।
উৎসব আমেজে ব্যবসাঃ
নির্বাচন উপলক্ষে রাস্তার পাশে ছোটখাটো একটি খাবার হোটেল খুলে বসেছে জাকির। ইট দিয়ে তৈরি করা চুলায় উপর কড়াইয়ে ভাজা হচ্ছে গরম গরম সিংগারা। দোকানের চারপাশে মানুষের ভীড়। গরম সিংগারা খাওয়ার তর যেন সইছে না কারো। কড়াই থেকে সিংগারা নামতে না নামতেই অপেক্ষামান মানুষগুলো যে যার মত করে কাগজ দিয়ে সিংগারা নিয়ে দোকানের সামনে দাড়িয়েই খাওয়া শুরু করে দিচ্ছে গরম গরম সিংগারা। কেউ ২ টা,কেউ ৪ টা,কেউবা গ্রুপ মিলে দাড়িয়ে ৭-৮ টা সিংগারা একসাথে নিয়ে সবাই মিলে খাওয়া শুরু করে দিচ্ছে। সিংগারার সাথে সালাদ বা পেঁয়াজ না থাকায় কেউবা আবার অসন্তোষ প্রকাশ করতেও দেরি করছে না।
এদিকে জাকিরের দোকানের পাশেই চা,বনরুটি,বিস্কুটের দোকান খুলে বসেছে স্কুল পড়ুয়া ছেলে সুমন। দোকানে পান,সিগারেট রাখতেও ভুল করেনি সে। তার দোকানেও মানুষের কমতি ছিলনা। কেউ চা বানানোর কথা বলে ক্ষুধা নিবারনের জন্য নিজ হাতেই বনরুটি নিয়ে খাওয়া শুরু করে দিয়েছে। কেউবা চা,বিস্কুট খাওয়া শেষ করে মুখের মধ্যে পান পুরে দিয়ে গল্প করে যাচ্ছে। আবার কেউবা পছন্দের সিগারেটটা হাতে নিয়ে বিলটা পরিশোধ করে মানুষের আড়ালে চলে যাচ্ছে।
জাকির,সুমনের মত অরুণও ভোটকেন্দ্রের কিছু দূরে খুলে বসেছে চানাচুর, চটপটির দোকান। যার দোকানে কিছুক্ষন পর পর বাচ্চাদের ছুটে যেতে দেখা গেল বেশি।
বিভিন্ন ভোটকেন্দ্র ঘুরে দেখা গেছে এদের মত অনেকেই নির্বাচন উপলক্ষে ভোটকেন্দ্রের আশেপাশে এভাবে দোকান খুলে বসেছে।
কথা বলে জানা যায়, জাকির,সুমন,অরুণরা কেউই ব্যবসার সাথে জড়িত নয়। তাদের প্রত্যেকে বিভিন্ন পেশার সাথে জড়িত। কেউ দিনমজুর, কেউবা রিকশাচালক আবার কেউ কেউ শিক্ষার্থী। মূলত নির্বাচন উপলক্ষে অস্থায়ীভাবে দোকান খুলে বসেছে।
ভোটকেন্দ্রের আশেপাশে এসব দোকান বসার কারণে ভোটকেন্দ্রের চারপাশে একটা উৎসবমুখর পরিবেশ বিরাজ করে বলে মনে করেন সাধারণ মানুষ।
এদিকে কিছুক্ষণ পর পর কানের মধ্যে ভেসে আসছে বিভিন্ন প্রার্থীর সমর্থকদের স্লোগান।
উল্লেখ্য, গত বুধবার (৫ জানুয়ারী) পঞ্চম ধাপে শ্রীমঙ্গল উপজেলায় ভোটগ্রহণ সম্পন্ন হয়। উপজেলার ৯টি ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) ৬টিতে আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী জয়ী হয়েছেন। বাকি ৩টির মধ্যে ২টি স্বতন্ত্র প্রার্থী ( বিএনপি) ও ১টি আওয়ামী লীগ বিদ্রোহী প্রার্থী জয়লাভ করেন।
এস এস/সিএ
দেশ-বিদেশের টাটকা খবর আর অন্যান্য সংবাদপত্র পড়তে হলে CBNA24.com
সুন্দর সুন্দর ভিডিও দেখতে হলে প্লিজ আমাদের চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন
আমাদের ফেসবুক পেজ https://www.facebook.com/deshdiganta.cbna24 লাইক দিন এবং অভিমত জানান