Business ফিচার্ড সোশ্যাল মিডিয়া

প্রসঙ্গঃ সিলিকন ভ্যালি (SVB) ব্যাংকের কথা । তপন রায়-এর ফেসবুক থেকে 

প্রসঙ্গঃ সিলিকন ভ্যালি (SVB) ব্যাংকের কথা । তপন রায়-এর ফেসবুক থেকে 

একটা মাত্র ব্যাংক ‘ক্রাশ’ করেছে। তাতেই নাড়া পড়ে গেছে সারা দেশে। আমেরিকার second ( আসলে 16th ) largest ব্যাংক, সিলিকন ভ্যালি (SVB) ব্যাংকের কথা বলছি। তিন দিন আগের ক্রাশ। ২০০৮ র পর সে দেশের ব্যাংকিং খাতে সবচাইতে বড় ধাক্কা।

আমাদের দেশে তো কতোই ঘটেছে আবার ঘটছেও। জীবন বীমা টাওয়ারের উপরের BCCI, এর পর ওরিয়েন্টাল, ফার্মার্স আরো কি কি। নাম পাল্টে ফেলে, মানুষ যেন ভুলে যায়।

আমেরিকার এই ব্যাংকটির উত্থান ছিলো সিলিকন ভ্যালি থেকেই। সানফ্রানসিসকোর সিলিকন ভ্যালি হচ্ছে বিশ্বের সর্ব বৃহৎ Tech বা IT Hub। এখানকার টেক-ফার্ম গুলোই ছিলো ব্যাংকটির উত্থানের মূল শক্তি।

ছেলে রিং করে প্রায় প্রতিদিনই, যখন সাবওয়ে স্টেশনে যায় হাঁটতে হাঁটতে। কিন্তু সেদিন শংকার ছোঁয়া পেলাম তার ফোনে। শংকা চাকুরী নিয়ে নয়, ইকোনমিতে এর ধাক্কা নিয়ে। ওখানেও চাপে আছে ভোক্তারা।

যাকে বলে গ্রোসারি, চাল ডাল, ঘরের বাজার, সেসব নিয়ে আগে কখনো ভাবতোই না ওখানে। এখন এসব গ্রোসারীও কিনতে হচ্ছে হিসাব করে।

ঠিক আগের দিনই নাকি সে আলাপ করেছিলো SV র এক ভিপি’র সাথে। ভাবছিলো, শিফট করবে ঐ ব্যাংকে। একদিন পরই ধসে পড়বে যে ব্যাংক, সে ব্যাংকেরও কারো মাথায় ছিলো না। বুধবারের একটি মাত্র ঘোষণাই নাকি triggered this downfall।

ঘোষণাটি ছিলো তাদের মজুদ ট্রেজারি বন্ড বিক্রি আর আর শেয়ার ছাড়া নিয়ে। উদ্দেশ্য তহবিল সংগ্রহ। আগের কিনে রাখা বন্ড বিক্রি করতে হয়েছে মেয়াদ পুর্তির আগেই। আরো fund লাগবে। এজন্যই শেয়ার ছাড়ার ঘোষণা।

এতে সমস্যা কি?

সমস্যা হচ্ছে ট্রেজারি বন্ড যখন কিনে, সুদের হার ছিলো মাত্র ১%। টেক কোম্পানি গুলোর ব্যবসা ছিলো তুঙ্গে, টাকা তুলতে হতো কম, জমাই রাখতো বেশী। তাই ব্যাংকেরও fund ছিলো উদ্বৃত্ত। এই fund দিয়ে কিনে রাখে সরকারি treasury bond। এতে সুদ পাইতো মাত্র ১% বা তারো কম।

কিন্তু এর মাঝে মাত্র দুই বছরে সুদের হার বাড়ানো হয়েছে অ নে ক অ নে ক। inflation সামাল দিতে। treasury bond এর সুদের হার হয়ে গেছে আগের ৪ গুণ।

তাই এখনকার ৪% এরটার জায়গায় আগের ১% এরটা কিনবে কে? এজন্যই আগেরগুলো বিক্রি করতে হয়েছে লোকসানে। এতেও সুরাহা হয় নি। এজন্যই আরও ফান্ডের জন্য শেয়ার ছাড়ার ঘোষণা।

এই panic থেকেই ডিপোজিট তুলতে হুমড়ি খেয়ে পড়ে ডিপোজিটররা। এক যোগে এতো দ্রুত টাকা তোলার নজির ব্যাংকিং ইতিহাসে বিরল। মাত্র ৫ ঘন্টার মাঝেই বন্ধ করে দিতে হয় লেনদেন।

এমন পরিস্থিতি হলো কেন? মানে ডিপোজিটরদের টাকা না দিতে পারার পরিস্থিতি?

সুদের হার বাড়ানোয় টেক কোম্পানির ব্যবসাও সংকুচিত হয়েছে। ‘undercutting the value of tech stocks and making it tough to raise funds’। আগে যেমন মুনাফা করেছে, বাড়তি fund জমা করেছে, এখন শুরু করে ব্যাংক হতে আগের জমা তুলে ভেঙ্গে খাওয়া। এ কারণে ক্রমে টান পড়েছে SV র ফান্ডে।

কিন্তু ডিপোজিটরের টাকা দিতে পারবে না কেন ব্যাংক? SV কি ভেঙ্গে খেয়ে ফেলেছ ? না, তেমন কিছু করেছে বলে কেউ বলছে না। এই টাকা তো আটকে আছে এদের treasury bond এ।

নিজেদের মজুদ আগের বন্ড অল্প সুদের বলে pre-matured বিক্রি করতে হলে বিক্রয় করতে হয়েছে লোকসানে।

SV র downfall এর সাথে বাঁধা পড়ে গেছে টেক কোম্পানিগুলোর ভবিষ্যৎ। এদের আকাশে এখন ‘দুর্যোগের ঘনঘটা’।

টেক কোম্পানীগুলোর পরিচালন, চাকুরী বাকুরীতে প্রাধান্য মূলত ভারতীয় ইমিগ্রেন্ট দের। বাংলাদেশীরাও আছে। আমার ছেলেও ৫ বছর চাকুরী করেছে এমনই এক কোম্পানিতে, সেটা ছিলো startup tech কোম্পানি , হেলথ সেক্টরের । হাসপাতাল, ইন্সুরেন্স কোম্পানী, ড্রাগ, রোগীর ডাটা নিয়ে ডাটা ইঞ্জিনিয়ারের কাজ।

এখনো আছে হেলথ সেক্টরে, তবে টেক কোম্পানির ডাটা নিয়ে নয়, এরা বলে ‘ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংকিং’। বাংকের ইনভেস্টমেন্ট সেকশনে। ওখানে নিয়োগের সময়ই ঠিক হয় একটা ব্যাংকের কে কোন ফিল্ডে কাজ করবেন।

আর শুধু SVর মতো প্রাইভেট ব্যাংক কেন, ওখানে সরকারী হাসপাতাল বা স্কুল যখন বন্ধ হয়ে যায়, চাকরিও চলে যায় সবার। কিন্তু বসিয়ে বসিয়ে বেতন দেবে না অথবা অন্য কোন সমমানে প্রতিষ্ঠানে পোস্টিংও দেবে না। আপনি বেকার ভাতা পাবেন, কিন্তু চাকরি আপনার নাই। এমন নাকি অনেক হয়েছে প্রেসিডেন্ট ওবামার সময়।

২০০৮ এ ওখানে ব্যাংকিং জগতের ক্র্যাশের কারণ ছিলো মর্টগেজের উলটাপালটা valuation। ওখানে আবার ‘মর্টগেজ’ sale হয়। আপনি হয়তো বাড়ি বন্ধক রেখেছেন সোনালীতে, লোন নিয়েছেন ১০০ টাকা।

আপনার repayment performance ভালো হলে, valuation rating A বা A+ হলে এই মর্টগেজ হয়তো জনতা ব্যাংক কিনে নেবে ১০২ টাকায় । আপনার ঋণের টাকা এখন ফেরত নেবে জনতা ব্যাংক।

এভাবে একই মর্টগেজ ঘুরে ফিরে ‘sale’ ‘re-sale’ হয় বারবার। সেবার (২০০৮ এ) ‘jugglery’ হয়েছিলো এই মর্টগেজ রেটিং, মর্টগেজ sale re-sale প্রক্রিয়ায়। এ নিয়ে চমৎকার ডকুমেন্টারি আছে Inside Job ( 2010) নামে।

এবারকার ধসের কারণ হিসাবে তেমন কিছু আলোচনায় আসছে না এখনও। তেমন সন্দেহও করছে না কেউ। আতংকিত হয়ে টাকা না তুলতে শুরু না করলে হয়তো সামাল দিয়ে নিতে পারতো আপৎকালীন তহবিল সংকট।

আজ ছেলেকে জিজ্ঞেস করলাম, SVর লেটেস্ট খবর কি?

ভবিষ্যৎ এমন কিছুর জন্য আপৎকালীন ফান্ড করবে সরকার, কিন্তু SV-কে ‘বেইল আউট’ বা এ ধরণের কিছু করবে না।

ওখানে হুট করে যেমন চাকুরী চলে যায়, পাওয়া ও যায়। তবে আগেকার মন্দায় jobless হয়ে পড়েছিলো অনেক আইটি প্রফেশনাল। সিংহ ভাগ ছিলো ইন্ডিয়া পাকিস্তানের।

এবারকার এই সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক ধসে এমনটার আশা করছেন না কেউ। তার পরও উদ্বেগতো কিছুটা থেকেই যায় respective সব field এর professional দের। নইলে এভাবে গভীরভাবে follow করবে কেন পরিস্থিতি। ওখানে এখন প্রাথমিক আতংকে আছে টেক কোম্পানী গুলো। এরাই সরাসরি affected। যে ব্যাংক বসে গেছে, এদের চাকরিতো ‘নট’ হয়েই গেছে। সাময়িক সংকট চলে যাবে একসময়।




সংবাদটি শেয়ার করুন