ফিচার্ড মত-মতান্তর

নুতন রাষ্ট্রপতিকে অভিনন্দন

মোহাম্মদ শাহাবুদ্দিন, রাষ্ট্রপতি

নুতন রাষ্ট্রপতিকে অভিনন্দন

শিতাংশু গুহ ।।মোহাম্মদ শাহাবুদ্দিন রাষ্ট্রপতি হলেন, তাঁকে অভিনন্দন। ইতোমধ্যে তাঁর জীবনী পড়ে জানা যায়, তিনি বর্ণাঢ্য জীবনের অধিকারী। তিনি মুক্তিযোদ্ধা, তিনি আইনজীবী, তিনি দুদক, তিনি ব্যাংকার, তিনি  রাজনৈতিক, তিনি জজ, তিনি আরো বহু গুনে গুণান্বিত। বঙ্গবন্ধু হত্যার পর তিনি প্রায় তিন বছর জেল খেটেছেন। তাঁর বিরুদ্ধে দুর্নীতি’র কোন অভিযোগ শোনা যায়নি। তিনি অনুগত, বিশ্বস্থ, অ-বিতর্কিত, এবং অভিজ্ঞ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা হয়তো এসব কারণে তাঁকে মনোনয়ন দিয়েছেন। আশা করা যায় তিনি একজন ভালো রাষ্ট্রপতি হবেন। ক্ষমতাহীন হলেও রাষ্ট্রপতি ‘ঐক্যের প্রতীক’, তিনি জাতীয় ঐক্য ধরে রাখতে সচেষ্ট থাকবেন।

এ নির্বাচন জাতিকে ক’টি ‘মেসেজ’ দিয়েছে। এর ভাল-মন্দ দু’টি দিকই রয়েছে। এর ভালো দিক হচ্ছে, কেউ ঘুনাক্ষরেও টের পাননি মোহাম্মদ শাহাবুদ্দিন রাষ্ট্রপতি হচ্ছেন। গুজব, আলোচনা কিছুতেই তিনি ছিলেন না? অথচ শেখ হাসিনা হবু রাষ্ট্রপতি’র সাথে কথা বলেননি তা তো হতে পারেনা! তাঁর সাথে কথা না বলে তো আর তাঁকে মনোনয়ন দেয়া হয়নি? যদিও সিদ্ধান্ত শেখ হাসিনা নিয়েছেন, তিনি নিশ্চয় উপদেষ্টা কারো কারো সাথে আলোচনা করেছেন! সংখ্যাটি যত কমই হোক, শেখ হাসিনা কিছু মানুষের সাথে অবশ্যই যাচাই-বাছাই করেছেন, বিষয়টি কেউ প্রকাশ করেননি-এটি শুভ সংবাদ।

 

বাংলাদেশের-ভবিষ্যৎ-কি

খারাপ সংবাদ হচ্ছে, এ ঘটনা ইঙ্গিত দেয় যে, দেশের মিডিয়া’র মান কতটা নেমে গেছে। এটি দু:সংবাদ। এটি রাজনীতি, সামরিক গোপনীয়তার বিষয় নয়? কোন একটি মিডিয়া আঁচ করতে পর্যন্ত ব্যর্থ হলো? একই কথা প্রযোজ্য রাজনৈতিক নেতা, বিশেষত: আওয়ামী লীগের বড়বড় নেতাদের জন্যে? তারা কিছু টেরই পেলেন না? সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত মারা যাবার আগে নিউইয়র্কে আমায় একটি কথা বলেছিলেন, তা হচ্ছে, ‘আজকের শেখ হাসিনা’র যে অবস্থান, সেটি তিনি নিজেই সৃষ্টি করেছেন’। হ্যাঁ, শেখ হাসিনা আবারো প্রমান করে দিলেন, রাজনৈতিক প্রজ্ঞায় তাঁর আশেপাশেও কেউ নেই! ধারণা করি, শেখ হাসিনা সিদ্ধান্তটি বেশ আগেই নিয়ে রেখেছিলেন।

আমরা নব-নির্বাচিত রাষ্ট্রপতিকে জানি শাহাবুদ্দিন কমিশন রিপোর্টের কারণে। ২০০১-এর নির্বাচন পরবর্তী সংখ্যালঘু’র ওপর বিএনপি-জামাতের নির্যাতন তদন্তে শেখ হাসিনা একটি কমিশন গঠন করেছিলেন, যা শাহাবুদ্দিন কমিশন নামে সমধিক পরিচিত। আমার মনে আছে, ২০০৯-এ শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী হ’ন, সেপ্টেম্বরে তিনি জাতিসংঘে আসেন। আমরা তাঁর সাথে দেখা করি এবং সংখ্যালঘু নির্যাতনের বিরুদ্ধে একটি কমিশন গঠন করার অনুরোধ জানাই। তিনি কথা দিয়েছিলেন, তিনি কথা রেখেছেন, নভেম্বরে শাহাবুদ্দিন কমিশন গঠিত হয়, সম্ভবত: ২০১১-তে কমিশন একটি চমৎকার রিপোর্ট দেন্। কমিশন সুনির্দিষ্টভাবে প্রায় ৫হাজার ঘটনার বিচারের পরামর্শ দেন্। যদিও আজ পর্যন্ত তা হয়নি, তবুও মোহাম্মদ শাহাবুদ্দিন ধন্যবাদার্হ।

এক বিচারপতি শাহাবুদ্দিন ৯০’র দশকে শেখ হাসিনাকে বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখিয়েছেন, তাই তিনি আর এক শাহাবুদ্দিনকে নিয়ে এসেছেন, হয়তো প্রমান করতে চাইছেন, সব শাহাবুদ্দিন খারাপ না! পাবনার লোক মোটামুটি ভদ্দরলোক হয়! ১৫ই মার্চ তিনি মোহাম্মদ আব্দুল হামিদের স্থলাভিষিক্ত হবেন। কাতার থেকে ফিরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নব-নির্বাচিত রাষ্ট্রপতির প্রশংসা করেছেন। এটি নির্বাচনী বছর, এ সময় রাষ্ট্রপতি’র গুরুত্ব কিছুটা বাড়ে। সমস্যা হলে তিনি কিভাবে সামাল দেন্ তা ভবিষ্যৎ বলবে, আপাতত: রাষ্ট্রপতি ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন।  [email protected];

সংবাদটি শেয়ার করুন