মেধাবি উদ্যোক্তা, পরিশ্রমী এবং স্বপ্নবাজ প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ ফাহিম সালেহ (৩৩) হত্যাকাণ্ডে জড়িত সন্দেহে বৃহস্পতিবার রাত ৮টায় এক ব্যক্তিকে নিউইয়র্কের পুলিশ গ্রেফতার করেছে। সিটি থেকে গ্রেফতারের পর ঐ ব্যক্তিটি এমন আচরণ করে যে, সে মানসিকভাবে অসুস্থ। এজন্য তাকে মানসিক হাসপাতালে নেয়া হয়েছে বলে বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত সাড়ে ১২টায় এ সংবাদ লেখার সময় জানা গেছে।
চাঞ্চল্যকর এই হত্যা মামলার তদন্তকারিদের পক্ষ থেকে গ্রেফতারকৃত ব্যক্তিটির নাম, বয়স এবং বিস্তারিত জানাতে অপারগতা প্রকাশ করা হয়েছে তদন্তের স্বার্থে। তবে হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে তাকে পুলিশ হেফাজতে আনা হবে জিজ্ঞাসাবাদের জন্যে।
নিউইয়র্ক সিটির লোয়ার ম্যানহাটানে অভিজাত শ্রেণির একটি ভবনের সপ্তম তলায় ২.২৫ মিলিয়ন ডলারে কেনা এপার্টমেন্টে ১৩ জুলাই বেলা একটা ৪০ মিনিট থেকে ১৪ জুলাই মঙ্গলবার বিকেল সাড়ে ৩টার মধ্যে খুন হন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ফাহিম। তারপরই পুলিশ বাহিনী মাঠে নামে এ খুনের মোটিভ উদঘাটনের পাশাপাশি ঘাতককে গ্রেফতারের জন্যে।
ঐ ভবনের সিসিটিভিতে দেখা গেছে যে, জগিং শেষে ভবনের নিচ তলা থেকে ইলেভেটরে সপ্তম তলায় উঠার সময় ফাহিমের পেছনেই কালো পোষাক (নিনজা স্টাইল) পরিহিত এক ব্যক্তি স্যুটকেস হাতে ছিলেন। এমনভাবে সে ভবনে ঢুকে এবং ইলেভেটরে উঠেছে, নিরাপত্তা রক্ষী অথবা রিসিপশনিস্ট হয়তো মনে করেছেন যে, লোকটি ফাহিমের সাথেই যাচ্ছে। এমন ধারণা পোষণ করেছেন কেউ কেউ।
এদিকে, মেডিকেল এক্সামিনার অফিস থেকে বৃহস্পতিবার বলা হয়েছে যে, ফাহিমের বুকে, গলা ও ঘাড়ে বেশ কয়েকবার ছুরিকাঘাতের চিহ্ন রয়েছে। এভাবেই তাকে হত্যার পর বৈদ্যুতিক করাত দিয়ে দেহকে খণ্ড খণ্ড করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, ফাহিমের পালিত কুকুর ছিল এপার্টমেন্টে। তবে তাকে আলাদা রুমে আটক করা অবস্থায় পাওয়া গেছে বলে পুলিশ জানায়।
ফাহিমের বাবা সালেহ আহমেদ পকিস্পী থেকে নিউইয়র্ক সিটির ব্রঙ্কসে এসেছেন স্ত্রীসহ। ফাহিমের বড়বোন এঞ্জেলা দুবাই থেকে ছুটে এসেছেন ছোট ভাইয়ের এই দু:সংবাদ জেনেই। আর তদন্ত প্রক্রিয়ায় বিস্তারিত সমন্বয়ের দায়িত্ব পালন করছেন ছোট বোন রিফায়েত রিপি। পুত্র এবং ভাইয়ের শোকে কাতর এই পরিবারের পক্ষ থেকে ১৬ জুলাই গণমাধ্যমে প্রদত্ত এক বিবৃতিতে শুধু বলা হয়েছে, ‘ঘাতক গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি পেলেই ফাহিমের আত্মা শান্তি পাবে এবং আমরাও স্বস্তি পাবো।’ ‘আমরা প্রয়োজনবোধ করছি এবং এনওয়াইপিডিসহ অন্যান্য সংস্থার প্রতি আহবান রাখছি, যেন খুব দ্রুত এই হত্যাকাণ্ডের মোটিভ উদঘাটিত হয়। নৃশংসভাবে ফাহিমকে হত্যার সাথে জড়িতরা বিচারে সোপর্দ হয়’-উল্লেখ করা হয়েছে বিবৃতিতে।
আরো বলা হয়েছে, ফাহিম সম্পর্কে গণমাধ্যমে যা বলা হচ্ছে, তার চেয়ে অনেক বেশী গুণে গুনান্বিত ছিলেন তিনি। কারণ, নিজের চেয়ে অন্যের কল্যাণের কথাই বেশী ভাবতেন। ২০১৩ সালে বাংলাদেশে যাবার পর ফাহিমের সাথে পরিবারের সদস্যদের বাক-বিতণ্ডা হয় মামুলি একটি ইস্যুতে। মা-বাবা বলেছিলেন যে, বাংলাদেশের আবহাওয়া এতটাই গরম এবং সামাজিক পরিবেশ এতটাই জটিল যে, ফাহিম হয়তো তার সাথে তাল মিলিয়ে চলতে পারবে না। এমন কথার প্রতিবাদ জানিয়ে ফাহিম বলেছিলেন, ‘শুধু শুধু তোমরা নিজের দেশ সম্পর্কে নেতিবাচক মনোভাব পোষণ করছো। আমার কিন্তু সবকিছুই ভালো লাগে। কারণ, আমি চাই বাংলাদেশের উদ্যমী যুবসমাজকে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করতে।’
ফাহিমের হত্যাকাণ্ডের নেপথ্যে ব্যবসায়িক হিংসা বড় রকমের ভূমিকা রেখেছে বলে মনে করা হচ্ছে। কারণ, উন্নয়নশীল বিশ্বের যুব সমাজকে কর্মসংস্থানের মধ্যদিয়ে বাংলাদেশসহ দারিদ্রের কষাঘাতে জর্জরিত বিভিন্ন দেশের রাজধানীতে বিকল্প যানবাহন হিসেবে মোটর সাইকেলে রাইড শেয়ারিং এর প্রচলন ঘটানোয় ট্যাক্সি শিল্পের মাফিয়ারা হিংসায় জলছিলেন। তেমন প্রতিহিংসারই হয়তো বলি হলেন বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত ফাহিম। হত্যাকাণ্ডের তদন্তে নিয়োজিত এনওয়াইপিডির হোমিসাইড বিভাগের এক কর্মকর্তা জানান, ফাহিমের হত্যাকারীর মোটিভ আর্থিক প্রকৃতির বলে দৃশ্যমান হচ্ছে। ওই কর্মকর্তা আরও বলেছেন, কোনও খারাপ বাণিজ্যিক চুক্তির ফলে এই হত্যাকাণ্ড হয়ে থাকতে পারে।
এদিকে, রাইড শেয়ারিং জগতে খ্যাতি অর্জনকারি ‘পাঠাও’ এবং ‘গোকাডা’র জনক ফাহিমের আত্মার শান্তি কামনায় যুক্তরাষ্ট্রে বিভিন্ন সিটিতে ফাহিমের ভক্ত-অনুরক্ত এবং সালেহ আহমেদের ঘনিষ্ঠজনেরা ভার্চুয়াল দোয়া-মাহফিলে মিলিত হচ্ছেন। পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, ফাহিমের লাশ শনিবারের মধ্যে পাওয়া গেলে রবিবার পকিস্পীতে মুসলিম কবরস্থানে তাকে দাফন করা হবে। করোনা পরিস্থিতির কারণে লোক-সমাগম এড়িয়ে চলার চেষ্টা করা হচ্ছে বলে জানা যায়।
ঘাতক গ্রেফতার হওয়ায় এখন সকলে অপেক্ষা করছেন হত্যার মোটিভ এবং নেপথ্যের কাহিনী জানতে।
সিএ/এসএস
দেশ-বিদেশের টাটকা খবর আর অন্যান্য সংবাদপত্র পড়তে হলে CBNA24.com
সুন্দর সুন্দর ভিডিও দেখতে হলে প্লিজ আমাদের চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন