প্রবাসের সংবাদ

ফিলাডেলফিয়ায় লুটতরাজের শিকার বাংলাদেশিরাও

ফিলাডেলফিয়ায় লুটতরাজের শিকার বাংলাদেশিরাও । কৃষ্ণাঙ্গ হত্যার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ, গ্রেফতার ৪ হাজার ৮০০ । ট্রাম্পের ভাষণে তুঙ্গে উঠেছে বিক্ষোভ, সেনাাবিহিনী মোতায়েনের বিরুদ্ধে স্টেট গভর্নররা

যুক্তরাষ্ট্রের মিনেসোটা অঙ্গরাজ্যের মিনিয়াপলিস শহরে বাংলাদেশির রেস্টুরেন্ট জ্বালিয়ে দেওয়ার পর একই পরিস্থিতির অবতারণা হয়েছে ফিলাডেলফিয়া সিটিতেও। রবিবার এই সিটির কয়েকশত ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ভাংচুরের পর সমস্ত মালামাল লুট করা হয়। এরমধ্যে এক বাংলাদেশির দুটি স্বর্ণের দোকানসহ মোট ৩৫ দোকান লুটে নিয়েছে দুর্বৃত্তরা।

ফিলাডেলফিয়ার ৪০৮৯, লেনক্যাস্টার এভিনিউর এবং ১১৩ ওয়েস্ট সেলটন এভিনিউতে অবস্থিত ‘মমি জুয়েলার্স এ্যান্ড পারফিউম ইনক’ নামক প্রতিষ্ঠানদ্বয়ের মালিক কামরুল ইসলাম জানান, রবিবার রাতে কারফিউ চলাকালে তালাবদ্ধ দোকান ভেঙ্গে সবকিছু লুটে নেয়া হয়েছে। দুই দোকানে কমপক্ষে ৬ লাখ ডলারের মালামাল ছিল বলে পুলিশে অভিযোগ করেছেন। দীর্ঘ ২৪ বছরের পুরনো দোকান দুটি ছিল তার পরিবারের একমাত্র অবলম্বন। শুধু তাই নয়, নোয়াখালীর সেনবাগে টেকনিক্যাল ইন্সটিটিউট স্থাপন করেছেন এখানকার উপার্জিত অর্থেই। এখন সবকিছুই হুমকির মুখে পড়লো।

শহরটির আপার ডারবি টাউনশিপের কাউন্সিলম্যান শেখ সিদ্দিক সোমবার রাতে জানান, সিটির বড় বড় কয়েকটি চেইনস্টোরসহ কয়েকশত দোকান পাটে ভাংচুর ও লুটতরাজ হয়েছে। আমরা সবগুলো পরিদর্শন করেছি। ক্ষতিপূরণ আদায়ের কৌশল উদ্ভাবনের জন্যে শীঘ্রই সিটি অব ফিলাডেলফিয়া এবং আপার ডারবি টাউনশিপের যৌথ সভা হবে। সিটিতে কারফিউ অনির্দিষ্টকালের জন্যে বহাল থাকবে। লুটতরাজে লিপ্ত দুর্বৃত্তদের আচরণে সবাই ব্যথিত এবং ক্ষুব্ধ।

কৃষ্ণাঙ্গ হত্যার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ, গ্রেফতার ৪ হাজার ৮০০

কৃষ্ণাঙ্গ যুবক জর্জ ফ্লয়েডকে নির্মমভাবে হত্যার প্রতিবাদে যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে বিক্ষোভ চলছে। সোমবার গভীর রাতে প্রাপ্ত সংবাদে জানা গেছে, এ যাবত ৪৮০০ বিক্ষোভকারিকে গ্রেফতার করেছে বিভিন্ন সিটির পুলিশ। এরমধ্যে অবশ্য লুটতরাজ, ভাংচুর কিংবা অগ্নি সংযোগে লিপ্ত থাকার অভিযোগ নেই কারো বিরুদ্ধে।

যদিও দেশটির প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প নির্দেশ দিয়েছেন, গ্রেফতারকৃতরা যেন দীর্ঘ মেয়াদে কারাগারে থাকে-এমন মামলা দিতে হবে।

আরও জানা গেছে, নিউইয়র্কে কারফিউ বহালের পরও হাজার হাজার মানুষ মিছিল করে ব্রুকলিন ব্রিজ অতিক্রম করছেন। এর দু’ঘন্টা আগে বড়বড় শপিং মলে হামলা, ভাংচুরের পর মালামাল লুটের ঘটনা ঘটেছে। এমনকি ট্রাম্প টাওয়ারের নিকটে কয়েকটি স্টোরেও ভাংচুর ও লুটের ঘটনা টিভিতে সরাসরি প্রচারিত হয়েছে। লুটেরাদের দমনে পুলিশের কোন ভূমিকা পরিলক্ষিত হয়নি বলে অভিযোগ উঠেছে।

উল্লেখ্য গত ২৫ মে গ্রেফতারের পর পুলিশি হেফাজতে হত্যা করা হয় জর্জ ফ্লয়েডকে। এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় গ্রেফতার হওয়া পুলিশ কর্মকর্তা ডেরেক চোভিনকে (৪৪) ১ জুন স্থানীয় আদালতে সোপর্দ করার কথা ছিল। সেটি পিছিয়ে ৮ জুন করা হয়েছে। ধারনা করা হচ্ছে যে, তার বিরুদ্ধে থার্ড ডিগ্রি মার্ডার চার্জ করা হয়েছে। সেটি পরিবর্তন করে ফার্স্ট ডিগ্রিতে আনার পাশাপাশি তার সাথে থাকা অপর তিন অফিসার থমাস লেন, আলেক্সান্দার কিউং এবং টৌ থাওকেউ গ্রেফতার করে একই মামলায় অভিযুক্ত করার স্বার্থে শুনানির তারিখ পিছিয়ে দেয়া হয়েছে। কারণ, মিনেসোটা অঙ্গরাজ্যের মিনিয়াপলিস শহরের পুলিশ প্রধান মেডারিয়া এরাডান্ডো ইতিমধ্যেই গণমাধ্যমে স্বীকার করেছেন যে, ওরা তিনজনও একইভাবে দোষী। তারা নিষ্ঠুরতম ঐ আচরণের সময় কোন বাধা দেয়নি। অধিকন্তু সায় দিয়েছে। উল্লেখ্য, এই তিন অফিসারকে বরখাস্ত করা হলেও এখন পর্যন্ত গ্রেফতার করা হয়নি বলে বিক্ষোভকারিরা জানান।

ট্রাম্পের ভাষণে তুঙ্গে উঠেছে বিক্ষোভ, সেনাাবিহিনী মোতায়েনের বিরুদ্ধে স্টেট গভর্নররা

লাবলু আনসার, যুক্তরাষ্ট্র

বর্ণবাদ বিরোধী আন্দোলনের সপ্তম রাতে নতুন করে কারফিউ জারি করা হলো নিউইয়র্ক সিটিতে। দুইদিন আগে থেকেই ২৫ স্টেটের ৪৪ সিটিতে কারফিউ জারি করা হয়েছে। ৫০ স্টেটের ১৬৩ সিটিতে বিক্ষোভের আগুন ছড়িয়ে পড়েছে। সারা আমেরিকায় এই উত্তাল পরিস্থিতির শান্তিপূর্ণ অবসানে জাতীয় ঐক্যের ডাক এবং জর্জ ফ্লয়েড হত্যায় জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির অঙ্গীকারের পরিবর্তে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প উল্টো হুমকি দিলেন সামরিক শক্তি নিয়োগের মাধ্যমে আন্দোলন থামিয়ে দিতে। অর্থাৎ আমেরিকার নাগরিকদের বিরুদ্ধে একরকম ‘যুদ্ধ’ই ঘোষণা করলেন প্রেসিডেন্ট।

১ জুন সোমবার সন্ধ্যায় হোয়াইট হাউজ থেকে এ বক্তব্য প্রদানের সময় নিজেকে ‘প্রেসিডেন্ট অব ল’ এ্যান্ড অর্ডার’ হিসেবে অভিহিত করে ট্রাম্প বলেন, শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলনকারীদের বিভ্রান্ত করে জঙ্গিরূপ ধারণে লুটতরাজে লিপ্ত করছে যে অপশক্তি, সেই সন্ত্রাসী আর চরম উগ্রপন্থিদের দমনে প্রয়োজনে সামরিক বাহিনী মোতায়েন করা হবে। জনগণের জানমালের নিরাপত্তায় এমন পদক্ষেপ নিতে আমি বাধ্য হচ্ছি।

উল্লেখ্য, রুজ গার্ডেনে স্থাপিত পোডিয়ামে ট্রাম্প যখন এ বক্তব্য দিচ্ছিলেন তার মিনিট দশেক আগে সামরিক বাহিনী, সিক্রেট সার্ভিট এবং মিলিটারি পুলিশের শতশত সদস্য হোয়াইট হাউজের আশপাশে স্লোগানরতদের ওপর হামলে পড়ে। তারা কাদুনে গ্যাস নিক্ষেপ করে, রাবার বুলেট ছুড়ে সকলকে ছত্রভঙ্গ করতে থাকে। এ সময় আন্দোলনকারিরা দু’হাত ওপরে উঠিয়ে বলতে থাকেন, ‘আমরা আত্মসমর্পণ করছি, তবুও গুলি করো না। কিন্তু কে শোনে কার কথা, প্রেসিডেন্টের নির্দেশ অনুযায়ী এই ছত্রভঙ্গ করার অভিযানে ঘোড়াসহ নিরাপত্তা রক্ষীরাও অংশ নেয়। পুরো এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। ক্ষণে ক্ষণে কাদুনে গ্যাস ছোড়া এবং রাবার বুলেট ছোড়ার শব্দ আসতে থাকে। তারমধ্যেই ট্রাম্প তার সংক্ষিপ্ত বক্তব্য উপস্থাপন করেন।

ট্রাম্পের ‘সামরিক বাহিনী নামানোর’ বক্তব্যে সকলেই প্রচণ্ডভাবে হতাশ হয়েছেন। কারণ, জাতির এই সংকটে প্রেসিডেন্ট হিসেবে তিনি সকলকে শান্ত হবার আহবান জানাবেন বলে প্রত্যাশা ছিল। তুমুল আন্দোলন চলছে এমন স্টেটসমূহের কয়েকজন গভর্নর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় ট্রাম্পের বক্তব্যকে আন্দোলনকে আরও উসকে দেয়ার মতো বলে মন্তব্য করেছেন।

কৃষ্ণাঙ্গ যুবক জর্জ ফ্লয়েডকে নির্মমভাবে হত্যায় জড়িতদেরই শুধু নয়, এর আগে আরও যারা এমন বর্ণবৈষম্য আচরণের নিষ্ঠুর বলি হয়েছেন, তাদের স্মরণ করে পুলিশ বাহিনীর বিদ্যমান আইনকে সংস্কারের কথা বলতে পারতেন ট্রাম্প। তা না করে তিনি নিজের ক্ষমতার অপপ্রয়োগের স্বার্থে ১৮০৭ সালের আইন রহিত করার হুমকিও দিয়েছেন।

সোমবার দুপুরে স্টেট গভর্নরদের সাথে এক টেলিকনফারেন্সে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সকলকে নিজ নিজ ক্ষমতা প্রয়োগ করে আন্দোলন দমনের আহবান জানান। ন্যাশনাল গার্ডের পাশাপাশি সামরিক বাহিনী নামানোর পরামর্শও দেন। হমকির সুরে ট্রাম্প উল্লেখ করেন, যদি কোন সিটি অথবা স্টেট তার এলাকার জনসাধারণের জীবন এবং সম্পদের নিরাপত্তা বিধানে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে সম্মত না হয়, তাহলে আমি সামরিক বাহিনী মোতায়েন করবো দ্রুত পরিস্থিতি শান্ত করতে।

সি/এসএস


সর্বশেষ সংবাদ

দেশ-বিদেশের টাটকা খবর আর অন্যান্য সংবাদপত্র পড়তে হলে cbna24.com

সুন্দর সুন্দর ভিডিও দেখতে হলে প্লিজ আমাদের চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

সংবাদটি শেয়ার করুন