বিশ্ব

১৯৪৩ সালের পর ঐতিহাসিক কারফিউর কবলে নিউইয়র্ক


করোনার মৃত্যু ছাপিয়ে যুক্তরাষ্ট্র এখন বিক্ষোভে উত্তাল। বিক্ষোভ থামাতে দেওয়া হচ্ছে কারফিউ। কিন্তু তাতে কোনো কাজ হচ্ছে না। কারফিউ ভেঙে চলছে বিক্ষোভ, অগ্নিসংযোগ। বর্ণবাদবিরোধী বিক্ষোভ দমনে সেনা মোতায়েনের হুমকি ট্রাম্পের

এর মধ্যে কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে কঠোর ঐতিহাসিক কারফিউয়ের কবলে পড়েছে নিউইয়র্ক।

মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএনের খবরে বলা হয়, নিউইয়র্ক সিটির পূর্ব উপকূলে ১৯৪৩ সালে রেস দাঙ্গার পর এত কঠিন কারফিউ দেখেনি মার্কিনীরা।

নিউইয়র্কের গভর্নর অ্যান্ড্র কুওমো ও মেয়র বিল ডি ব্লাসিও মঙ্গলবার থেকে কারফিউ জারি করেন। যুক্তরাষ্ট্রে যে শহরটি কখনো ঘুমায়নি তা এখন কারফিউয়ের কবলে।

কারফিউ দেওয়া হলেও নিউইয়র্কে তা ভঙ্গ করে রাস্তায় নেমে আসে মানুষ। পুলিশি নির্যাতনে এক কৃষ্ণাঙ্গ হত্যার প্রতিবাদে বিক্ষোভ করে।

অপরদিকে লস অ্যাঞ্জেলেসেও ঐতিহাসিক কঠোর কারফিউ দেওয়া হয়েছে। ১৯৯২ সালের দাঙ্গার পর সেখানে এটাই সবচেয়ে কঠোর কারফিউ।

আমেরিকা এখন ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস’ স্লোগানে উত্তাল। বিভিন্ন জায়গায় করা হয়েছে অগ্নিসংযোগ। এছাড়া দোকানপাটে চলে লুটতরাজ। নজিরবিহীন এই বিক্ষোভ ও সহিংসতায় এখন বেসামাল যুক্তরাষ্ট্র।

হোয়াইট হাউসের সামনেও হয়েছে বিক্ষোভ ও সংঘর্ষ। কাঁদানে গ্যাস ও রাবার বুলেট ছুড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করে পুলিশ। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দেশজুড়ে সেনা মোতায়েনের হুমকি দিয়েছেন।

ইতোমধ্যে দেশটিতে পুলিশের গুলিতে অন্তত দুই বিক্ষোভকারী নিহত এবং চার পুলিশ সদস্য গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। গ্রেফতার করা হয়েছে কয়েকশ মানুষ।

যুক্তরাষ্ট্রের লোয়া অঙ্গরাজ্যে বিক্ষোভের সময় গুলিতে ইতালিয়া মেরি কেলি নামে ২২ বছর বয়সী এক তরুণীসহ অন্তত দুজন নিহত হন।

২৫ মে যুক্তরাষ্ট্রের মিনেসোটা অঙ্গরাজ্যের শহর মিনিয়াপলিসে পুলিশের হাতে নির্মমভাবে নিহত হন জর্জ ফ্লয়েড নামে ঐ কৃষ্ণাঙ্গ।

প্রকাশ্যে শহরের রাস্তায় ঘাড়ে হাঁটু দিয়ে চেপে ধরে শ্বাসরোধে ফ্লয়েডকে হত্যা করে ৪৪ বছর বয়সী পুলিশ অফিসার দেরেক। তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে ফ্লয়েডকে হত্যার অভিযোগ আনা হয়েছে।-ইত্তেফাক

 

বর্ণবাদবিরোধী বিক্ষোভ দমনে সেনা মোতায়েনের হুমকি ট্রাম্পের

যুক্তরাষ্ট্রে পুলিশি নিপীড়নে কৃষ্ণাঙ্গ হত্যা ও বর্ণবাদের অবসানের দাবিতে চলা বিক্ষোভ দমনে সেনা অভিযান চালানোর হুমকি দিয়েছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। স্থানীয় সময় সোমবার তিনি এ ঘোষণা দিয়েছেন বলে জানিয়েছে বিবিসি। সহিংসতা ছড়িয়ে পড়া শহরগুলোর মেয়র ও রাজ্যগুলোর গভর্নররা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে সেনা মোতায়েন করে ‘তাৎক্ষণিকভাবে সমস্যা সমাধান’ করা হবে বলে জানিয়েছেন ট্রাম্প।

টানা সপ্তম দিনের মতো সোমবারও যুক্তরাষ্ট্রের প্রায় সবগুলো শহরেই বিক্ষোভ-সহিংসতা অব্যাহত ছিল। ২০টি রাজ্যের ৪০টি শহরে রাত্রিকালীন কারফিউ জারি ছিল। বিক্ষোভের অন্যতম কেন্দ্রস্থল নিউইয়র্কে স্থানীয় সময় মঙ্গলবার পর্যন্ত কারফিউয়ের মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে। মিনিয়াপোলিসে গত সোমবার জর্জ ফ্লয়েড নামে এক কৃষ্ণাঙ্গ পুলিশের হাতে খুন হওয়ার পর থেকে বর্ণবাদবিরোধী বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে।

সোমবার সন্ধ্যায় হোয়াইট হাউসের রোজ গার্ডেনে সংবাদ সম্মেলন করেন ট্রাম্প। সেখানে সেনা মোতায়েনের ঘোষণা দেওয়ার পাশাপাশি বর্ণবাদবিরোধী বিক্ষোভকারীদের ‘দাঙ্গাবাজ, লুটেরা ও পেশাদার নৈরাজ্যবাদী’ বলে উল্লেখ করেন তিনি। আগের দিন রোববার ফ্যাসিবাদবিরোধী গোষ্ঠী অ্যান্টিফাকে ‘সন্ত্রাসী সংগঠন’ বলেও আখ্যা দেন ট্রাম্প।

‘শৃঙ্খলা’ ফেরাতে রাজ্যের গভর্নরদের ন্যাশনাল গার্ড মোতায়েনের আহ্বান জানিয়েছেন ট্রাম্প। ইতোমধ্যে বিক্ষোভ দমনে দেশটিতে ন্যাশনাল গার্ডের ১৬ হাজার সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। সেনা মোতায়েনের বিষয়ে ট্রাম্পের হুমকির সমালোচনা করেছেন ডেমোক্রেট দলীয় প্রেসিডেন্ট প্রার্থী জো বাইডেন। তিনি বলেছেন, ‘আমেরিকার জনগণের বিরুদ্ধেই আমেরিকার সেনা ব্যবহার করতে চান ট্রাম্প’।

ট্রাম্প যখন সংবাদ সম্মেলনে কথা বলছিলেন তখন হোয়াইট হাউসের বাইরে বিক্ষোভকারীরা ফ্লয়েড হত্যার বিচার ও বর্ণবাদের অবসান চেয়ে স্লোগান দিচ্ছিলেন। ট্রাম্পের সংবাদ সম্মেলন থেকেও তা শোনা যাচ্ছিল।

সংবাদ সম্মেলন শেষে হোয়াইট হাউসের পাশেই সেন্ট জোনস গির্জায় যান ট্রাম্প। রোববার রাতে এ গির্জাটিতে আগুন লেগেছিল। সেখানে গিয়ে বাইবেল হাতে ছবি তোলেন তিনি। তবে তার গির্জায় যাওয়ার পথ ‘পরিষ্কার’ করতে হোয়াইট হাউসের সামনে অবস্থান নেওয়া শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভকারীদের ওপর টিয়ার শেল ছোঁড়ে ও লাঠিপেটা করে পুলিশ।

দ্য গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভকারীদের ওপর পুলিশের শক্তি প্রয়োগে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন সেন্ট জোনস গির্জার বিশপ। ওয়াশিংটন ডিসির মেয়র মুরিয়েল বাউসার বলেছেন, কারফিউ শুরু হওয়ার ২৫ মিনিট আগে শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভকারীদের ওপর পুলিশের এ ধরনের শক্তিপ্রয়োগ মেনে নেওয়া যায় না। কংগ্রেসের নিম্নকক্ষের ডেমোক্রেট দলীয় স্পিকার ন্যান্সি পেলোসি ও উচ্চকক্ষ সিনেটের নেতা চাক শুমার বিবৃতি দিয়ে ঘটনার নিন্দা জানিয়েছেন।

শুধু ওয়াশিংটনেই নয়, যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন স্থানে শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভকারীদের ওপর সোমবার চড়াও হয়েছে পুলিশ। বার্তা সংস্থা এপি পুলিশের দেওয়া তথ্য উল্লেখ করে জানিয়েছে, এক সপ্তাহ ধরে চলা বর্ণবাদবিরোধী বিক্ষোভ থেকে পাঁচ হাজার ৬০০ মানুষকে আটক করা হয়েছে। এর মধ্যে শুধু নিউইয়র্ক ও লস অ্যাঞ্জেলস শহর থেকেই আটক করা হয়েছে এক হাজার ৭০০ জনকে।

সংবাদটি শেয়ার করুন