বরিশালের ঘটনা সমাজের বাস্তব চিত্র
শিতাংশু গুহ, নিউইয়র্ক।। বরিশালের ঘটনা দু:খজনক। রেস্তোরাঁয় খেয়ে পয়সা না দেয়ার প্রবণতা যথেষ্ট পুরানো, এজন্যে বিভিন্ন অজুহাতের বহু গল্প আছে, তবে এই প্রথম এজন্যে ধর্ম টেনে এনে সমষ্টিগতভাবে বিক্ষোভ ও হিন্দুর দোকান ভাংচুর স্মার্ট বাংলাদেশে নুতন প্রবণতা। ঘটনা তুচ্ছ, বরিশাল লঞ্চঘাটে ঘোষ মিষ্টান্ন ভাণ্ডারে এক কাষ্টমার ব্রেকফাষ্ট করেন, বিল ৪০ টাকা, গ্রাহক বলেন, ৩০টাকা। এনিয়ে বচসা, কথা কাটাকাটি। গ্রাহক দোকান থেকে বেরিয়ে গিয়ে প্রচার করলেন, দোকানে হিন্দু কর্মচারী তাঁর দাঁড়ি ধরে টান দিয়েছেন, এতে ইসলাম ধর্মের অবমাননা হয়েছে। পরবর্তী দৃশ্যে’র ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে গেছে। একদল মানুষ ইসলাম রক্ষায় নেমে পরে এবং হিন্দুর দোকান আক্রমন করে দোকানটি ধ্বংসস্তুপে পরিণত করে, লুটতরাজের অভিযোগ আছে। https://fb.watch/
পুলিশ আসে। হামলাকারীদের কাউকে পুলিশ ধরতে পারেনি, তবে হিন্দু দোকানীকে থানায় নিয়ে গেছে। বলা হয়েছে, নিরাপত্তার স্বার্থে পুলিশ হিন্দু দোকানীকে থানায় নিয়েছে, এটাই বলা হয়ে থাকে। রাকেশ রায়-কে পুলিশ নিরাপত্তার অজুহাতে ধরে নিয়ে গিয়েছিলো, সদ্য ধর্ম-অবমাননার অজুহাতে রাকেশ রায়-র ৭বছর কারাদন্ড ও ১লক্ষ টাকা জরিমানা হয়েছে। বলার কিছু নাই, আদালতের রায়! ছেলেবেলায় পড়েছিলাম, ‘কাজীর বিচার’; কাজী বিচার করেন আল্লাহ’র নামে, রায় দেন্ সম্রাটকে খুশি করার জন্যে? দারাশিকো’র বিচার নিয়ে ইতিহাসে এ প্রবচন বহুলভাবে প্রচারিত। এপ্রিলে বরিশালে আদালত বাপন দাসকে ধর্ম অবমাননার দায়ে ৮বছর কারাদন্ড দিয়েছে। দোকানীকে পুলিশ ধরে নিয়ে গেছে, তাঁর বিরুদ্ধে চার্জ গঠিত হবেনা তো?
ঝুমন দাস জেল থেকে সবে ছাড়া পেয়েছেন। ২০২১-এ কুমিল্লায় ঘটনার খলনায়ক ইকবাল হোসেন’র কি সাঁজা হয়েছে? মামুনুল হক-কে নিয়ে ষ্ট্যাটাস দেয়ায় সুনামগন্জের শাল্লার ঘটনা কি মনে আছে? নাসিরনগরের জাহাঙ্গীরের খবর কি? রসরাজ দাস এবং শতাধিক পরিবার এখনো স্বাভাবিক হয়নি। ২০১২ সালের রামু সাম্প্রদায়িক সহিংসার নায়ক শিবির নেতা কই? উত্তম বড়ুয়া নিখোঁজ কেন? রামু থেকে কুমিল্লা কোন ঘটনার বিচার হয়নি, হবার কারণ নেই! বরিশালের ঘটনা বড়বড় মিডিয়ায় স্থান পায়নি, অনেকেই এসব ঘটনাকে স্বাভাবিক বলেই মেনে নিচ্ছেন, কেউ কেউ স্বীকারই করেন না! ‘ডিজিটাল সিকিউরিটি এক্টের’ অজুহাত তো আছেই? পুরো দেশ যখন সাম্প্রদায়িক বিষবাষ্পে ভরপুর, মিডিয়া’র লোকজন তো সেই সমাজের অংশ, তাইনা?
বরিশালের ঘটনাই এখনকার সমাজের বাস্তব চিত্র। এদিকে পাইওনিয়ার ডেন্টাল কলেজে হিন্দু শিক্ষার্থীদের খাঁসির বিরানী বলে গরুর বিরানী খাওয়ানো হয়েছে। এটি ইচ্ছাকৃতভাবে করেছেন ‘রুমি’ নামে এক শিক্ষক, চেয়ারম্যান। শিক্ষার্থীরা বারবার জিজ্ঞাসা করলেও তাঁদের ইচ্ছাকৃতভাবে মিথ্যা বলা হয়েছে। এতে হয়তো রুমি চেয়ারম্যান ‘বিজাতীয়’ আনন্দ পেয়েছেন। পরে বাবুর্চি সবকিছু ফাঁস করে দেন্। শিক্ষার্থীরা এঘটনায় ফুঁসে উঠলে রুমি স্যার পদত্যাগ করেছেন বলে রটানো হয়। ৫ই জানুয়ারি ২০২৩ দেখা যায় তিনি স্বপদে বহাল। বলা হয় ডীনস্যার চাননি রুমি স্যার চলে যাক। মিডিয়া কিন্তু চুপ। ডিজিটাল আইন এখানে অচল। আশার কথা, শিক্ষার্থীরা ধর্মনির্বিশেষে চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে আন্দোলন করছেন (ভিডিও সংযুক্ত)। ১৪ই জানুয়ারি ২০২৩। [email protected];