দেশের সংবাদ

বাংলাদেশে মৃত্যুর কাফেলা

আমরা শোকাহত, ব্যথিত

 বাংলাদেশে মৃত্যুর কাফেলা

সাজেদুল হক

মৃত্যু। মানব জীবনের অনিবার্য এক পরিণতি। রাজা, বাদশাহ, ধনী, গরিব সবাই এ পথের যাত্রী। নিস্তার নেই কারোই। চলে যেতে হবে- এটাই নিয়ম। কিন্তু কখনো কখনো এ নিয়ম তৈরি করে বড় মর্মান্তিক দৃশ্যের। মানুষ তার ইতিহাসে মহামারি কম দেখেনি। কিন্তু করোনা যেভাবে সারা দুনিয়াকে অচল করে দিয়েছে তা অতীতে কখনো হয়নি।

ক্ষুদ্র এক ভাইরাস তছনছ করে দিয়েছে সব। দেশে দেশে ঘরবন্দি মানুষ এখন ঘর থেকে বের হওয়ার লড়াই করছে। মৃত্যুর মিছিলে এরই মধ্যে যোগ হয়েছে তিন লাখ ৬৭ হাজারের বেশি নাম। আতঙ্ক, উদ্বেগ তাড়া করছে কোটি কোটি মানুষকে। কেউ জানেন না কখন তারা আক্রান্ত হবেন। কখন হারিয়ে ফেলবেন প্রিয় কোনো মুখ। করোনা শুধু মানব শরীরেই আঘাত হানছে তা নয়, অর্থনীতিকেও ইতিমধ্যে বহুলাংশে পঙ্গু করে দিয়েছে তা।
আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশের দৃশ্যপটও একই। প্রতিদিন কেউ না কেউ তাদের প্রিয়জন হারাচ্ছেন। গতকালই ২৮ জনের মৃত্যুর রেকর্ড হয়েছে। সরকারি হিসাবে এ পর্যন্ত করোনায় মারা গেছেন ৬১০ জন। এ ছাড়া, করোনার উপসর্গ নিয়ে মৃত্যুর খবর প্রায়শই বের হচ্ছে সংবাদমাধ্যমে। প্রবাসেও সাত শতাধিক বাংলাদেশি করোনায় মৃত্যুবরণ করেছেন। সব মৃত্যুই মর্মান্তিক। পাহাড়ের মতো ভারী এসব মৃত্যু শোকাহত করেছে তাদের স্বজনদের, শোকাতুর করেছে পুরো জাতিকে। বিশেষ করে মৃতদের শেষ বিদায়ের দৃশ্য ছিল সবচেয়ে মর্মান্তিক। মৃত্যুর সময়ও প্রিয় মানুষটির পাশে তাদের স্বজনদের কেউ থাকতে পারছেন না। আবার বহুক্ষেত্রে দাফনেও অংশ নিতে পারছেন না তারা। আবার কিছু কিছু জায়গায় দাফনে বাধা দেয়ার মতো নিষ্ঠুর ঘটনাও ঘটেছে।

এই নিষ্ঠুরতার কারণেই সম্ভবত বহুক্ষেত্রে করোনায় মৃত ব্যক্তির নামও আমরা জানতে পারছি না। বিশেষ করে সাধারণ মানুষদের নাম, ছবি থেকে যাচ্ছে দৃশ্যপটের বাইরে। করোনায় আমরা হারিয়েছি জাতীয় অধ্যাপক ড. আনিসুজ্জামানকে। যদিও তিনি আরো নানা ধরনের রোগে ভুগছিলেন। মৃত্যুর পরই জানা যায়, তিনি করোনায় আক্রান্ত ছিলেন। করোনায় সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হচ্ছেন ফ্রন্টলাইন যোদ্ধারা। শুরুতে চিকিৎসকদের আক্রান্তের হার ছিল বেশি। এ পর্যন্ত অন্তত আট জন চিকিৎসক করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। করোনার উপসর্গ নিয়ে মারা গেছেন আরো দুইজন চিকিৎসক। গত ২৩শে মে পর্যন্ত আইএসপিআরের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, দুইজন কর্মরত সেনা সদস্য ইন্তেকাল করেন। কর্মরত দুই সদস্য দীর্ঘদিন যাবৎ বিভিন্ন অসুস্থতায় ভুগছিলেন। তারা মৃত্যুকালে কোভিড-১৯ এ সংক্রমিত হয়েছিলেন বলে জানায় আইএসপিআর। এ পর্যন্ত পুলিশের ১৫ সদস্য করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। করোনায় মৃত সাধারণ মানুষের দাফনের ক্ষেত্রেও অত্যন্ত প্রশংসনীয় ভূমিকা পালন করছে পুলিশ বাহিনী। করোনায় একজন সাংবাদিকের মৃত্যু হয়েছে। আর উপসর্গ নিয়ে মারা গেছেন আরো চার সংবাদকর্মী। করোনায় মৃতের তালিকায় রয়েছেন সাবেক সংসদ সদস্য মকবুল হোসেন, এস আলম গ্রুপের পরিচালক মোরশেদ আলম, শান্ত-মারিয়াম ইউনিভার্সিটির চেয়ারম্যান ইমামুল কবির শান্ত। আরো অনেক বিশিষ্টজন রয়েছেন এ তালিকায়।

মৃত্যু এক চির বিচ্ছেদের নাম। বিচ্ছেদ পৃথিবীর সঙ্গে, স্বজনদের সঙ্গে। যেখান থেকে ফেরার কোনো উপায় থাকে না। করোনায় মৃত্যুর এই মর্মান্তিক মিছিলে আমরা ব্যথিত, শোকাহত। মৃতদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করি আমরা। প্রার্থনা করি, পরম করুণাময় যেন তাদের শহীদের মর্যাদা দেন। তাদের স্বজনদের প্রতি সান্ত্বনা জানানোর কোনো ভাষা নেই। কোনো কিছুই তাদের প্রিয়জনদের ফিরিয়ে দিতে পারবে না। দোয়া করি, স্রষ্টা যেন তাদের ধৈর্য ধারণের শক্তি দেন। আশা করি, এই আঁধার একদিন কেটে যাবে। দুনিয়া আবার স্বাভাবিক ছন্দে ফিরবে। ভালো থাকুক বাংলাদেশ, ভালো থাকুক পৃথিবী। এমন দিনে আমরা কেবল প্রার্থনাই করতে পারি। – সূত্রঃ মানবজমিন

 

সি/এসএস


সর্বশেষ সংবাদ

দেশ-বিদেশের টাটকা খবর আর অন্যান্য সংবাদপত্র পড়তে হলে cbna24.com

সুন্দর সুন্দর ভিডিও দেখতে হলে প্লিজ আমাদের চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

সংবাদটি শেয়ার করুন