বিংশ শতাব্দীর অন্যতম সেরা মানবতাবাদী মাদার তেরেসা এর জন্মদিনে গভীর শ্রদ্ধাঞ্জলি জ্ঞাপন করছি
বিদ্যুৎ ভৌমিক ।। মাদার তেরেসা হলেন আলবেনীয় বংশোদ্ভূত ভারতীয় ক্যাথলিক সন্ন্যাসিনী, মানবতাবাদী এবং ধর্মপ্রচারক। মাদার তেরেসা অটোমান সাম্রাজ্যের আলবেনিয়া রাজ্যের বর্তমানে মেসিডোনিয়ার রাজধানী স্কপিয়েতে ১৯১০ সালের ২৬ আগস্ট জন্মগ্রহণ করেন। আঠারো বছর বয়স পর্যন্ত তিনি সেখানেই কাটান। ১৯২৮ সালে তিনি আয়ারল্যান্ড হয়ে তৎকালীন ব্রিটিশ উপনিবেশ ভারতে খ্রীস্টধর্ম প্রচার অভিযানে আসেন। জীবনের বাকি অংশ তিনি আর্তমানবতার সেবা করে ভারতেই থেকে যান।
১৯৫০ সালে কলকাতায় মাদার তেরেসা দ্য মিশনারিজ অফ চ্যারিটি (দাতব্য ধর্মপ্রচারক সংঘ) নামে একটি খ্রীস্ট ধর্মপ্রচারণা সংঘ প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯৫২ সালে মাদার তেরেসা কলকাতা নগর কর্তৃপক্ষের দেয়া জমিতে মুমূর্ষুদের জন্য প্রথম আশ্রয় ও সেবা কেন্দ্র গড়ে তোলেন। ভারতীয় কর্মকর্তাদের সহায়তায় একটি পরিত্যক্ত হিন্দু মন্দিরকে কালিঘাট হোম ফর দ্য ডাইং-এ রূপান্তরিত করেন। এটি ছিল দরিদ্র্যদের জন্য নির্মীত দাতব্য চিকিৎসা কেন্দ্র। পরবর্তীতে এই কেন্দ্রের নাম পরিবর্তন করে রাখেন নির্মল হৃদয়। এই কেন্দ্রে যারা আশ্রয়ের জন্য আসতেন তাদেরকে চিকিৎসা সুবিধা দেয়া হতো এবং সম্মানের সাথে মৃত্যুবরণের সুযোগ করে দেয়া হয়। এ বিষয় তেরেসা বলেন, “A beautiful death is for people who lived like animals to die like angels — loved and wanted.” এর কিছুদিনের মধ্যেই তেরেসা হ্যানসেন রোগে (সাধারণ্যে কুষ্টরোগ নামে পরিচিত) আক্রান্তদের জন্য একটি সেবা কেন্দ্র খোলেন যার নাম দেয়া হয় শান্তিনগর। এছাড়া তাঁর প্রতিষ্ঠিত মিশনারিস অফ চ্যারিটির উদ্যোগে কলকাতার বাইরে প্রত্যন্ত অঞ্চলে বেশ কিছু কুষ্ঠরোগ চিকিৎসা কেন্দ্র স্থাপন করা হয়। এই কেন্দ্রগুলোতে ঔষধ, ব্যান্ডেজ ও খাদ্য সুবিধা দেয়া হয়। পরবর্তীতে তিনি ক্ষুধার্ত ও নিঃস্বদের ডাকে সাড়া দিতে শুরু করেন। তাদের বিভিন্নভাবে সাহায্য করতে থাকেন। তার এই কার্যক্রম অচিরেই ভারতীয় কর্মকর্তাদের নজরে আসে। স্বয়ং ভারতের প্রধানমন্ত্রীও মাদার তেরেসার কাজের স্বীকৃতি দিয়েছিলেন। ১৯৯৭ সালে ৫ সেপ্টেম্বর মাদার তেরেসার মৃত্যুর পরও তাঁর নির্দেশিত পথে তাঁর অনুসারীরা আর্ত ও দরিদ্র মানুষের সেবা অব্যাহত রাখেন।
২০১২ সালে এই দ্য মিশনারিজ অফ চ্যারিটি সংঘের সাথে যুক্ত ছিলেন ৪৫০০ সন্ন্যাসিনী। প্রথমে ভারতে ও পরে সমগ্র বিশ্বে তার এই মানবতার সেবা সাথে ধর্মপ্রচারণা কার্যক্রম ছড়িয়ে পড়ে। কলকাতায় মাত্র ১৩ জন সদস্যের ছোট্ট অর্ডার হিসেবে চ্যারিটির যাত্রা শুরু হয়েছিল। বর্তমানে এর অধীনে ৪,৫০০ এরও বেশি সন্ন্যাসিনী কাজ করছেন। চ্যারিটির অধীনে এতিমখানা ও এইড্স আক্রান্তদের পুনর্বাসন কেন্দ্র পরিচালিত হয়। বিশ্বব্যাপী শরণার্থী, অন্ধ, পক্ষাঘাতগ্রস্ত, বয়স্ক, মাদকাসক্ত, দরিদ্র্য, বসতিহীন এবং বন্যা, দুর্ভিক্ষ বা মহামারিতে আক্রান্ত মানুষের সেবায় চ্যারিটির সবাই অক্লান্ত পরীশ্রম করে যাচ্ছেন। ২০১৬ সালে রোমান ক্যাথলিক চার্চের প্রধান পোপ ফ্রান্সিস তাকে ‘Saint বা সন্ত হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান করেন এবং ক্যাথলিক গির্জায় তিনি ‘কলকাতার সন্ত টেরেসা’ হিসেবে আখ্যায়িত হন।
১৯৬৯ সালে বিবিসিতে সামথিং বিউটিফুল ফর গড শিরোনামে ম্যালকম মাগারিজের প্রামাণ্য তথ্যচিত্র প্রচারিত হলে তাঁঁর দাতব্য ধর্মপ্রচারণাসংঘের কার্যক্রম পশ্চিমা গণমাধ্যমে ব্যাপকভাবে প্রচারিত হয় এবং মাদার তেরেসার মানবতা ও দরিদ মানুষের প্রতি তাঁর ভালোবাসা ও সেবার খ্যাতি সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পরে। ১৯৭৯ সালে মাদার তেরেসা শান্তিতে নোবেল পুরস্কার অর্জন করেন। ১৯৮০ সালে মাদার তেরেসা ভারতের সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মান ভারতের রাষ্ট্রপতি কর্তৃক প্রদত্ত ভারতরত্ন উপাধী লাভ করেন। ১৯৯৭ সালে মাদার তেরেসার মৃত্যুর সময় বিশ্বের ১২৩টি রাষ্ট্রে মৃত্যুপথ যাত্রী এইডস, কুষ্ঠ ও যক্ষ্মা রোগীদের জন্য চিকিৎসাকেন্দ্র, ভোজনশালা, শিশু ও পরিবার পরামর্শ কেন্দ্র, অনাথ আশ্রম ও বিদ্যালয়সহ দ্য মিশনারিজ অফ চ্যারিটির ৬১০টি কেন্দ্র বিদ্যমান ছিল । আর্ত মানবতা ও দরিদ্রদের সাহায্য করার জন্য নিবেদিতপ্রাণ মহিলাদের একজন মাদার তেরেসা বিংশ শতাব্দীর অন্যতম সেরা মানবতাবাদী হিসাবে বিবেচিত ছিলেন ও একাবিংশ শতাব্দীতেও তিনি তাই থাকবেন। বিংশ শতাব্দীর অন্যতম সেরা মানবতাবাদী মাদার তেরেসা এর জন্মদিনে গভীর শ্রদ্ধাঞ্জলি জ্ঞাপন করছি।
সূত্র : উইকিপিডিয়া ও অন্যান্য গ্রন্থ
কলামিষ্ট, লেখক ও সিবিএনএ এর উপদেষ্টা, মন্ট্র্রিয়ল. ক্যানাডা , ২৫ আগষ্ট, ২০২১ খ্রী:
দেশ-বিদেশের টাটকা খবর আর অন্যান্য সংবাদপত্র পড়তে হলে CBNA24.com
সুন্দর সুন্দর ভিডিও দেখতে হলে প্লিজ আমাদের চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন
আমাদের ফেসবুক পেজ https://www.facebook.com/deshdiganta.cbna24 লাইক দিন এবং অভিমত জানান