এবারের পয়লা বৈশাখে আমি বাইরে যাব না। আমি বাইরে না গেলে কিছু হবে না। যেমন, কেউ আইনী নোটিশ দিলেও কিছু হবে না। আমি বাইরে না গেলে ব্যক্তিগতভাবে কারো কিছু এসে যায়। কিন্তু, এই আইনী নোটিশ কেউ ব্যক্তিগতভাবে দিলেও জাতিগতভাবে আমাদের অস্তিত্বের মর্মমূল ধরে নাড়া দেয়। আমরা এটা মানতে পারি না। এটা আমাদের হাজার বছরের সংস্কৃতি ও কৃষ্টি-প্রসঙ্গ। হাজার বছর ধরে বেড়ে ওঠা, দীর্ঘ গড়ে ওঠা ঐতিহ্যকে অস্বীকার করার মধ্য দিয়ে আমাদের সংস্কৃতিকে ভূলুণ্ঠিত করার নয়া-চক্রান্ত ও নব্য অপপ্রয়াস। এখন এমন প্রশ্ন উঠতেই পারে, এত স্বাধীনতা তাদের কে দিয়েছে? স্বাধীনতা-পূর্ব ষাটের দশকের শুরুতে রবীন্দ্রনাথকে নির্বাসনে পাঠিয়ে একবার আমাদের সংস্কৃতিকে কোণঠাসা ও নস্যাৎ তথা বিকৃত করার প্রয়াস চালায় পাকিস্তানীরা। তাদের ন্যাক্কারজনক পদক্ষেপ একবার নয় বারবার পরাজিত হয়েছে। তারা রাজনৈতিক দূরভিসন্ধির মধ্য দিয়ে ধারাবাহিকভাবে ভাষা-সংস্কৃতি-শিক্ষা-অর্থনীতিকে পঙ্গু করে একটি জাতির চূড়ান্ত সর্বনাশ চেয়েছিল। আমাদেরকে সর্বস্বান্ত ও অথর্ব করে দিতে চেয়েছিল । এইজন্যে তারা শুরুতে সংস্কৃতির ওপর হাত দিয়েছিল। প্রথম আঘাতটা করেছিল বাঙালি জাতির সংস্কৃৃতিকে। আমাদের সংস্কৃৃতির প্রধানতম অঙ্গ—মোক্ষম অস্ত্র—বাংলা ভাষার ওপর হামলা করেছিল। কেড়ে নিতে চেয়েছিল তাঁর প্রাণ। আমরা জীবন দিয়ে ঠেকিয়েছিলাম। যদি তারা সেদিন আমাদেরকে নিরস্ত্র করতে পারত, কামিয়াব হত। কিন্তু, বিসমিল্লায় গলদ। সে স্বপ্ন-সাধ তাদের ভেস্তে গেল। পঞ্চাশের দশকের এ ব্যর্থতার পর ষাটের প্রথমার্ধে বাবুল-ওয়াজিউল্লাহর জীবনের বিনিময়ে শিক্ষা আন্দোলন হল। মধ্যষাটে রবীন্দ্রনাথকে নিষিদ্ধের পর্যায়ে ফেলে আমাদের সংস্কৃতির এই মহাস্তম্ভকে গুঁড়িয়ে দিতে চেয়েছিল। কী করেনি তারা? ভাষাকে কেড়ে নিতে চেয়েছিল। শিক্ষাকে কুখ্যাত করতে চেয়েছিল। সংস্কৃতিকে দরিদ্র করতে চেয়েছিল।
বিদ্রোহী বৈশাখ |||| পুলক বড়ুয়া
