দেশের সংবাদ ফিচার্ড

বিষ দিয়ে পাখি শিকার, হুমকিতে জীব বৈচিত্র্য

বিষ-দিয়ে-পাখি-শিকার

বিষ দিয়ে পাখি শিকার, হুমকিতে জীব বৈচিত্র্য

বাগেরহাটের রামপালে পুঁটি মাছের পেটে বিষ দিয়ে এবং চিতলমারী, ফকিরহাট ও মোল্লাহাট এলাকায় নানা ফাঁদ পেতে নির্বিচারে বক, পানকৌড়িসহ বিভিন্ন ধরনের পাখি শিকার করা হচ্ছে।

উপজেলার রাজনগর, হুড়কা, গৌরম্বাসহ বিভিন্ন এলাকায় প্রতিনিয়ত এ ধরনের কার্যক্রম চলছে। শিকারিরা এসব পাখি নিজেরা খাওয়ার পাশাপাশি চড়ামূল্যে বিক্রিও করছেন।

বিষ দিয়ে শিকার করা পাখি খাওয়ায় শরীরে দীর্ঘস্থায়ী নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। সেই সঙ্গে বিষযুক্ত মাছ খেয়ে শিকারির হাতে ধরা না পড়া মৃত পাখিরা পরিবেশ ও অন্যান্য প্রাণির জন্য মারাত্মক হুমকি হিসেবে দেখা দিচ্ছে। কঠোর আইন প্রয়োগের মাধ্যমে পাখি শিকার বন্ধের দাবি জানিয়েছেন পরিবেশকর্মীরা।

স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, রামপাল উপজেলার রাজনগর, হুড়কা, গৌরম্বা, উজুলকুর ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকার খোলা মাঠে শীত মৌসুমে অল্প পানিতে মাছ শিকারের জন্য প্রচুর পরিমাণে পাখি আসে। পুঁটি ও ছোট চ্যালা মাছের পেটে ফুরাডান বা সানফুরান জাতীয় বিষ ঢুকিয়ে ভোর হওয়ার পর পর এই মাঠে দেয়া হয়।

বক, পান কৌড়ি, বুনোহাস, চিল, কাক, ডগমখুর, শামুকভাঙ্গাসহ বিভিন্ন ধরনের পাখি এসে এসব মাছ খায়। মাছ খেয়েই অসুস্থ হয়ে নেতিয়ে পড়ে পাখিরা। তখন দূরে অপেক্ষারত শিকারি এসে অসুস্থ পাখিকে জবাই করেন।
পরবর্তীতে এই পাখি তারা খায় এবং বিক্রিও করে থাকেন চড়া দামে। এ দিকে, ফকিরহাট, চিতলমারী ও মোল্লাহাট এলাকায় লাইলোনের সুতোর তৈরি ফাঁদ পেতে দেদার পাখি শিকার করছে কতিপয় ব্যক্তি। মোবাইলের মাধ্যমে যোগাযোগ করে তারা সেই পাখি ক্রেতাদের বাড়ি বাড়ি বিক্রি করছে বলে একাধিক সূত্রে জানা গেছে।

রামপাল উপজেলার রাজনগর ইউনিয়নের কালেখারবেড় এলাকার মিকাইল শেখ বলেন, কিছু মানুষ দীর্ঘদিন ধরে পাখি শিকার করছে। স্থানীয় প্রভাবশালী ও অর্থবিত্তের মালিকরা এই পাখি ক্রয় করে থাকেন। অনেক সময় দ‚রদুরান্ত থেকেও মানুষ এসে পাখি কিনে নেয়।

নুরুল ইসলাম নুরু নামের এক স্থানীয় পরিবেশকর্মী বলেন, পাখি শিকারীদের আইনের আওতায় এনে পাখি শিকার বন্ধ করা উচিত।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কালেখারবের এলাকার এক শিকারি বলেন, প্রায় ৫ বছর ধরে পাখি ধরি। প্রথমে শখের বসে ধরতাম। এখন বছরের প্রায় ৬মাস এই পাখি বিক্রির করেই সংসার চলে। আকার ভেদে ৩শ’ থেকে ১৫ শ’ টাকা পর্যন্ত একেকটি পাখি বিক্রি হয়। এই সময়টা ভালোই চলে আমাদের। তবে একটু গোপনে করতে হয়।

পাখি বিশেষজ্ঞ শরীফ খান বলেন, পাখি শিকারের জন্য দেওয়া বিষযুক্ত মাছ অন্যান্য মাছ এবং মাংসাশী প্রাণিরাও খেয়ে থাকে। এছাড়া বিষযুক্ত মাছ খেয়ে সব পাখি সঙ্গে সঙ্গে অসুস্থ হয় না, অনেক পাখি আছে যারা কিছুদিন যন্ত্রণা ভোগের পর মারা যায়। বিষ খাওয়া পাখি শিকারিদের হাতে ধরা না পড়াটাও বেশ বিপদজনক। ওই পাখি যখন মারা যায় তখন, সাপ, ইঁদুর, শেয়াল, চিল, কাকসহ মাংসাশী প্রাণিরা খেয়ে অসুস্থ হয়ে থাকে।

এক কথায় বিষ যুক্ত মাছ দিয়ে পাখি শিকারের ফলে শুধু অতিথি পাখি বা দেশি পাখি ক্ষতিগ্রস্ত হয় তা নয়; পুরো জীব বৈচিত্র্য ক্ষতিগ্রস্ত হয়। যার ফলে পরিবেশের উপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে।’ পাখি শিকার বন্ধে আইন প্রয়োগের পাশাপাশি জনসচেতনতা জরুরী বলে তিনি উল্লেখ করেন।

বাগেরহাটের ডেপুটি সিভিল সার্জন ডা. মো. হাবিবুর রহমান বলেন, বিষ দিয়ে শিকার করা পাখি বা কোন প্রাণী বারবার খেলে মানুষের শরীরে নানা ধরণের দীর্ঘস্থায়ী জটিলতা সৃষ্টি হতে পারে। এমনকি মৃত্যু পর্যন্ত ঘটতে পারে।

জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আজিজুর রহমান বলেন, যে কোন প্রকার পাখি শিকার অপরাধ। পাখি শিকার বন্ধে প্রয়োজনীয় সকল পদক্ষেপ গ্রহণ করা হচ্ছে।

 



সংবাদটি শেয়ার করুন