অবিশ্বাস্য হলেও সত্য

বিড়ালের শহর

বিড়ালের শহর

সিরিয়ান ও রাশিয়ান বাহিনীর কয়েক মাস টানা বোমা হামলার পর সিরিয়ার সর্বশেষ বিদ্রোহী-অধিভুক্ত প্রদেশের কাফর নাবল শহরে এখন মানুষের চেয়ে বিড়ালের সংখ্যাই বেশি। বলা হয় বিড়ালের শহর!

বিবিসির এক প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, ওই শহরে একসময় ৪০ হাজারেরও বেশি মানুষ বসবাস করতেন। কিন্তু ক্রমাগত বোমা হামলায় অনেক মানুষই ওই শহর ছেড়ে অন্য জায়গায় চলে গেছেন। কমতে কমতে এখন সেখানকার জনসংখ্যা ১০০ জনে দাঁড়িয়েছে।

পরিত্যক্ত বাড়ি কিংবা ধ্বংসস্তূপে এখন বিড়ালের আস্তানা গড়ে উঠেছে। এ শহরে বাসিন্দা এবং স্থানীয় রেডিওতে কর্মরত ৩২ বছরের রিপোর্টার সালাহ জার জানান, লোকজন চলে যাওয়ার পর অনেকে বাড়িই বিড়ালের আবাসস্থলে পরিণত হয়েছে। তিনি আরও জানান, যেসব বাড়িতে লোকজন আছে অনেক বিড়াল সেইসব বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছে।

শহরের সর্বত্র বিড়ালের আনাগোনা

সালাহ বলেন, ‘প্রতিটি বাড়িতে অন্তত ১৫ টি করে বিড়াল বসবাস করছে। কোনো বাড়িতে তার চেয়েও বেশি।’ অবশ্য গোটা শহরে কতটি বিড়াল আছে সালাহ তা জানাতে পারেনি। তবে তার ধারণা কয়েকশো থেকে কয়েক হাজার বিড়াল এ শহরে বসবাস করে।

সালাহ আরও বলেন, ‘লোকজন ছাড়া এ শহরে বিড়ালগুলি কাছাকাছি থাকলে তা-ও সান্ত্বনা পাই’।

আরও পড়ুনঃ হাতির গায়ে উলের চাদর

সালাহ যে রেডিও স্টেশনে কাজ করেন বোমা হামলার সতর্কবাণী, কৌতুক এবং অন্যান্য অনুষ্ঠানের জন্য সেটার সুখ্যাতি থাকলেও বিড়ালের বাড়ি বলে ওই স্টেশনের আলাদা পরিচিতি রয়েছে। কারণ ওই রেডিও স্টেশনে এক ডজনের বেশি বিড়াল বসবাস করে। জানা গেছে, ওই রেডিও স্টেশনের প্রতিষ্ঠাতা এবং বিশিস্ট মানবাধিকারকর্মী রায়েদ ফারেস যিনি ২০১৮ সালে বন্দুকধারীদের গুলিতে নিহত হয়েছেন তিনিও ওই বিড়ালদের খাবারের জন্য আলাদা দুধ ও পনিরের টাকা বরাদ্দ করেছিলেন।

সালাহ জানান, রাস্তায় তারা যখন হাঁটেন তখন তাদের আশেপাশে কমপক্ষে ২০ থেকে ৩০ টি বিড়াল থাকে। কোনো কোনো বিড়াল তাদের বাড়ি পর্যন্ত চলে যায়।

সালাহ আরও জানান, যখন অন্ধকার নেমে আসে তখন প্রচুর কুকুর ও অন্যান্য নিশাচর প্রাণীর শব্দে গোটা শহর ভরে যায়। তাদের বেশিরভাগই ক্ষুধার্ত ও আশ্রয়হীন। রাতের খাবার এবং ঘুমানোর জায়গার জন্য তাদেরকে কাফর নাবলের বিড়ালের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করতে হয়। বেশিরভাগ সময়ই অবশ্য বিড়ালই জেতে। কারণ তারা সংখ্যায় অনেক বেশি।

সালাহ বলেন, ‘ আমি যা খাই, আমার আশেপাশের বিড়ালদেরও তাই খেতে দিই। সেটা শাকসবজি, নুডলস অথবা শুকনো রুটি-যাই হোক না কেন।’ তিনি আরও বলেন, ‘ আমাদের যা পরিস্থিতি তাতে আমার মনে হয় বিড়াল এবং মানুষ দুজনই এখন দুর্বল প্রাণী। এ কারণে একে অন্যের সাহায্য প্রয়োজন।’

অবিরাম বোমা হামলার মধ্যে অন্য সকলের সঙ্গে বিড়ালরাও আহত হয়। ওষুধের ঘাটতি এবং অন্য সব কিছুর পরও এখানকার মানুষ বিড়ালের যত্ন নেওয়ার চেষ্টা করেন।

সালাহ বলেন, ‘ অন্যান্যদের মতো আমাদেরও যদি এ শহর ছেড়ে চলে যাওয়ার মতো পরিস্থিতি তৈরি হয় তাহলে এখানকার বিড়ালদেরও সঙ্গে নিয়ে যাবো।

বিড়ালের শহর বলে খ্যাত  যুদ্ধের ভয়াবহতার মধ্যেও মানুষ এবং পোষা প্রাণীর মধ্যকার এমন সম্পর্ক অনেককেই অভিভূত করেছে।

কানাডা প্রবাসীদের অনুষ্ঠানের ভিডিও দেখতে হলে সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের চ্যানেল

সংবাদটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

16 − eight =