প্রবাসের সংবাদ ফিচার্ড

বৃটেনে প্রথম বাণিজ্যিকভাবে বাংলাদেশের সবজি চাষ

bangladesher-sobji-chas

আমদানি নির্ভর দেশ বৃটেন। নিত্য প্রয়োজনীয় সবকিছুর সিংহভাগ বিদেশ থেকে আমদানি করে থেকে দেশটি। বাংলাদেশি শাকসবজি ফল-ফলাদি বৃটেনে চাষ হয় না। নিজ বাসার ছোট বাগানে শখের বসে কিছু শাকসবজি চাষ করলেও আবহাওয়ার বৈরিতার কারণে তা পরিপূর্ণ সফলতা পায় না। প্রবাসী বাংলাদেশিদের শাকসবজির চাহিদা মেটাতে ইতালি, গ্রীস, ভারত, শ্রীলংকা, মায়ানমার, পাকিস্তান, বাংলাদেশ, আফ্রিকার কিছু দেশ থেকেই শাক সবজি আসে।

বৃটেনে দেশীয় শাকসবজির চাষের এক অনন্য নজির স্থাপন করলেন ইতালি থেকে আসা তিন যুবক। ইতিহাসের প্রায় অসম্ভবকে সম্ভব করে বৃটেনে নতুন দিগন্তের সূচনা করলেন ৩ বাংলাদেশী যুবক। কুমিল্লার ২ যুবক হাবিবুর রহমান, আব্দুর রাজ্জাক ও নওগাঁর ইমদাদ উল্লাহ নামের ৩ বন্ধু মিলে ব্রিটেনের রাজধানী লন্ডনের অদূরে ইপিং এলাকায় ৩ হেক্টর জমিতে গ্রীন হাউজের ভেতরে চাষ করছেন বাংলাদেশী লাউ, লাল শাক, পুঁইশাক, ডাটা, কলমী শাক, বেগুন, ঢেরস, শিম! তাদের এই ফার্মের নাম ‘ফ্রেশ কৃষি’।

বৃটেনের বিরুপ আবহাওয়ার মধ্যে বাংলাদেশের শাকসবজি শুধু সামারের ৩ মাস হলেও গ্রীন হাউজের কল‍্যাণে তাদের প্রায় ৭-৮ মাস নানা শাকসবজি ফলন হচ্ছে।

ফ্রেশ কৃষির বিপনন দেখেন উদ্যোক্তা আব্দুর রাজ্জাক। তিনি বলেন, প্রতিদিন তাদের ফ্রেশ কৃষি নামের ফার্ম থেকে ২ হাজার কেজি ফসল উত্তোলন করে পূর্ব লন্ডনে বাংলাদেশী অধ্যুষিত হোয়াইট‍ চ‍্যাপেল ও গ্রীন স্ট্রিটে সাপ্লাই দেয়া হচ্ছে। এই বছর তাদের টার্গেট হচ্ছে প্রায় ৩ লাখ পাউন্ড মানে বাংলাদেশী টাকায় প্রায় ৫ কোটি টাকার সব্জি বিক্রি করা।

উল্লেখ‍্য বৃটেনে শুধু বাংলাদেশী অধ‍্যুষিত এলাকায় বাংলাদেশী সব্জির বাজার আছে ৫০০ কোটি টাকার।

ফ্রেশ কৃষির অন‍্যতম উদ‍েদ্যাক্তা হাবিবুর রহমান বলেন, শুরুটা সহজ ছিলো না। ইতালীতে ২০০৩ সালে ভাগ‍্য বদলের আশায় পাড়ি জমান। এরপর সেখানে কৃষি কাজের সাথে জড়িত ছিলেন। ইউরোপসহ ব্রিটেনে সব্জি সাপ্লাই দিতেন। ব্রেক্সিটের আগে বৃটেনে পাড়ি জমান সবাই। ৩ বন্ধু মিলে জায়গা খুঁজতে থাকেন, অচেনা ব্রিটেনে কেউ সহযোগিতা করেনি! তবে অনেক চেষ্টার পরে ছোট একটি জায়গায় ভাংগা একটি গ্রীন হাউজ থেকে শুরু করেন।

হাবিব বলছিলেন, ছোট জায়গা, ব্রিটেনের আবহাওয়া সম্পর্কে ধারনা কম, গ্রীনহাউজ সম্পর্কে ধারনা না থাকায় প্রথম বছর তাদের প্রজেক্ট পুরোদমে ফেইল করে। তবে ২০২৪ সালে হারলো এলাকায় ৩ হেক্টরের এই গ্রীন হাউজ খুঁজে পান। আগের বছর লস খেয়ে পুঁজি কম, তাই একটি হাতে চালিত ট্রাক্টর দিয়ে অমানুষিক পরিশ্রম করে প্রথম বছর ফসল শুরু করেন। এবার ঘুরে দাড়ানোর পালা, প্রথম বছরেই ১ লাখ ৮০ হাজার পাউন্ডের সব্জি বিক্রি করেন।

আরেক উদোক্তা ইমদাদ উল্লাহ বলেন, পুরো বৃটেনে বাংলাদেশের সব্জি বলতে ইতালী থেকে আসা সব্জি, আর কিছু সব্জি আসে বাংলাদেশ থেকে। ইতালী থেকে শাক জাতীয় যে সব্জি আসে সেগুলো ব্রিটেনে পৌঁছাতে পৌঁছাতে অনেকটা নষ্ট ও পুরাতন হয়ে যায়। তাই লাল শাক, কলমি শাক, পুঁইশাকের মতো প্রতিদিনের ফ্রেশ খাওয়ার চাহিদা যেগুলো সেই সব্জি তারা উৎপাদন করছেন। এছাড়া বাংলাদেশী লাউয়ের চাহিদা এখানে ব‍্যাপক, তাই এটিও তাদের অন‍্যতম ফসল। প্রতিদিন সকালে তাদের এখান থেকে ফ্রেশ সব্জি চলে যাচ্ছে পূর্ব লন্ডনের বাজারে। ইমদাদ জানান, তাদের শতভাগ বীজ বাংলাদেশ থেকে আনা হয়, পাশাপাশি তাদের ফার্মে শুধুমাত্র জৈব সার ব‍্যবহার করা হয়।

৩ তরুণ উদ্যোক্তা বলছিলেন, বৃটেনে বাংলাদেশের ফ্রেশ সব্জির বাজার হাজার কোটি টাকার উপরে। আমরা প্রথম উদ্যোগ নিয়ে সফল হয়েছি। নতুন যারা ব্রিটেনে বাণিজ্যিকভাবে সব্জি চাষে আগ্রহী হবেন তাদেরকে সব ধরনের সহায়তা দিতেও তারা প্রস্তুত।

সূত্র: মানবজমিন

এফএইচ/বিডি


CBNA24  রকমারি সংবাদের সমাহার দেখতে হলে
আমাদের ফেসবুক পেজে ভিজিট করতে ক্লিক করুন।
আমাদের ইউটিউব চ্যানেল ভিজিট করতে পোস্ট করুন।

সংবাদটি শেয়ার করুন