প্রায় সাড়ে তিন বছর ধরে নানা চাপান উতোরের পর ব্রিটেন ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের ইতিহাসে সেই সন্ধিক্ষণ এসে গেল। আজ শুক্রবার মাঝরাতে ইইউ ত্যাগ করতে চলেছে ব্রিটেন। শুক্রবার আনুষ্ঠানিক বিদায়ের সম্ভবত এগারো মাস পর আক্ষরিক অর্থে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করবে বৃটিশরা।
বৃহস্পতিবার ব্রাসেলসে ব্রেক্সিটের পথে শেষ আইনি বাধা দূর হলো। ইউরোপীয় পার্লামেন্টের পর বিনা আড়ম্বরে বাকি ২৭টি সদস্য দেশের সরকারও ব্রেক্সিট চুক্তিতে স্বাক্ষর করলো। ব্রিটেনকে বিদায় জানাতে ব্রাসেলসের কেন্দ্রস্থলে বিশেষ আলোকসজ্জা ও কনসার্টের আয়োজন করা হয়েছিল। তবে প্রবল বৃষ্টির কারণে সেই উদ্যোগকে ঘিরেও তেমন উৎসাহ দেখা যায়নি।
শুক্রবার সন্ধ্যা ৭টার সময় ব্রাসেলসে ইউরোপীয় পরিষদ ভবনের সামনে আনুষ্ঠানিকভাবে ব্রিটিশ পতাকা নামিয়ে আনা হবে। ইউরোপীয় পার্লামেন্ট ভবনের ব্রিটিশ পতাকাটি মিউজিয়ামে রাখার পরিকল্পনা রয়েছে।
শনিবার ১ ফেব্রুয়ারি থেকে ব্রিটেনে এক নতুন অধ্যায় শুরু হচ্ছে। ডিসেম্বর পর্যন্ত অন্তর্বর্তীকালীন এই সময়ে দেশটিতে ইইউ-র আইনকানুন ও বিধিনিয়ম প্রযোজ্য হলেও ইউরোপীয় প্রতিষ্ঠানগুলোতে ব্রিটেনের কোনো প্রতিনিধিত্ব থাকবে না। এই সময়কালে নাগরিক ও ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলো ধীরে ধীরে নতুন পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারবেন বলে আশা করা হচ্ছে। ইউরোপীয় প্রতিষ্ঠানগুলোতে কর্মরত ব্রিটিশ নাগরিকরা চাকরি হারিয়ে দেশে ফিরতে বাধ্য হবে।
শুক্রবার লন্ডনে পার্লামেন্ট স্কোয়ারে ব্রেক্সিটের সমর্থকরা তাদের জয়ের উৎসব পালন করার উদ্যোগ নিয়েছে। ব্রেক্সিট পার্টির প্রধান নাইজেল ফারাজ সেখানে মধ্যমণি হবেন। অন্যদিকে ব্রেক্সিট-বিরোধীরা চরম হতাশায় ভুগছেন।
উল্লেখ্য, গণভোটে ৪৮ শতাংশ ভোটার ইউরোপীয় ইউনিয়নে থেকে বের হয়ে যাওয়ার পক্ষে রায় দিয়েছিলেন। সমাজে এমন বিভাজনের পরিপ্রেক্ষিতে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন বলেছেন, দেশকে ঐক্যবদ্ধ রেখে এগিয়ে নিয়ে যাওয়াই সরকার ও প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব। তবে তার মতে, এই ঘটনার মাধ্যমে কিছুই শেষ হচ্ছে না, বরং শুরু হচ্ছে।
শুক্রবার জনসন ইংল্যান্ডের উত্তর পূর্বে সান্ডারল্যান্ড শহরে মন্ত্রিসভার বিশেষ এক বৈঠক ডেকেছেন। ২০১৬ সালের গণভোটে সেখানেই প্রথম ব্রেক্সিটের পক্ষে রায় জানা গিয়েছিল। সকাল দশটায় জনসন জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণ দিচ্ছেন।
এর আগে বৃহস্পতিবার লন্ডন সফরে এসে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও বলেন, ব্রেক্সিটের ফলে ব্রিটেনের সামনে বিপুল সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। সম্ভাব্য দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য চুক্তির ফলে যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রিটেন-দুই দেশেরই উপকার হবে বলে তিনি মন্তব্য করেন।
সূত্র: ডয়েচে ভেলে।