যাপিত জীবন

‘ভালো থেকো বাংলাদেশ’

ভালো থেকো বাংলাদেশ
করোনাভাইরাসের কারণে ইতালিতে দীর্ঘদিন ধরে ঘরবন্দি প্রবাসীরা। ভেনিস শহরের বাসায় বসে এই দুই ভাইবোন তিশা ও রেজওয়ান ‘ভালো থেকো বাংলাদেশ’ ছবি এঁকে বাংলাদেশের জন্য জানিয়েছে শুভকামনা- সংগৃহীত
‘ভালো থেকো বাংলাদেশ’ ‘পরিস্থিতিটা স্বাভাবিক থাকলে বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবসে ছেলেমেয়েদের নিয়ে হয়তো ঘুরতে বের হতাম, স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে বাঙালি কমিউনিটি আয়োজিত নানা অনুষ্ঠানে যোগ দিতাম। কারণ ইউরোপে বসবাস করলেও হৃদয়ে বাংলাদেশটাই থাকে। সন্তানদেরও পাশ্চাত্যের সংস্কৃতির বাইরে বাঙালি সংস্কৃতির মধ্যেই রাখার চেষ্টা করি।’ ইতালির ভেনিস শহরে মেসরে এলাকায় বসবাসরত আলী আহাম্মেদ একটানেই কথাগুলো বলে যাচ্ছিলেন। অনলাইন মেসেঞ্জারে তার সঙ্গে যখন কথা বলছিলাম, বোঝা যাচ্ছিল ওই প্রান্তে তার গলা যেন শুকিয়ে আসছে।

গত প্রায় দেড় যুগ ধরে ইতালিতে বসবাস করছেন আলী আহাম্মেদ। বছর তিনেক ধরে স্ত্রী, ছেলেমেয়েও তার সঙ্গেই বসবাস করছেন। ছেলে রেজওয়ান আহম্মেদ আর মেয়ে জান্নাতুল তিশা ভেনিসে স্থানীয় একটি স্কুলে পড়ালেখা করে। দেশটিতে করোনাভাইরাস মহামারি আকার ধারণ করলে গত মাসে ছেলেমেয়ের স্কুল বন্ধ হয়ে যায়। একই সময়ে আলী আহাম্মেদের কর্মস্থলও বন্ধ হয়। তবে চলতি মাসের শুরু থেকে অন্য আরও বাসিন্দার মতো তারা বাসায় অবরুদ্ধ রয়েছেন।

আলী আহাম্মেদ বলছিলেন, শহরটিতে নিয়ম মেনে খাবার ও ওষুধ কিনতে বাইরে বের হওয়া যায়। কিন্তু সব সময় পরিবার নিয়ে একটি আতঙ্কের মধ্যে থাকেন। সেই আতঙ্কটা আরও বেশি করে ভর করেছে বাংলাদেশেও করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর খবরে। নিজেদের নিয়ে চিন্তার পাশাপাশি এখন গ্রামে থাকা স্বজনদের নিয়েও চিন্তা করতে হচ্ছে।

তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের নানা জাতীয় দিবসে বাঙালি কমিউনিটির পক্ষ থেকে ভেনিসে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন থাকে। বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী এবং মহান স্বাধীনতা দিবসেও সে ধরনের প্রস্তুতি ছিল। তবে করোনাভাইরাসে সব বন্ধ হয়ে গেছে। এখন যেন মৃত্যুর প্রহর গুনছি বাসায় বসে। তবে ছেলেমেয়েদের নিয়ে বাসাতেই উদযাপন করেছি স্বাধীনতা দিবস। তারা জাতীয় স্মৃতিসৌধ আর গ্রামের ছবি এঁকে বাংলাদেশের জন্য শুভ কামনা জানিয়েছে।’

পুরো ইতালি লকডাউন হলেও এখনও কর্মস্থলে যেতে হয় মো. মামুনের। তিনি স্ত্রী ও দুই মেয়ে নিয়ে সান্দোনা শহরে থাকেন। মামুন জানান, মেয়েদের স্কুল বন্ধ হয়ে গেছে আগেই। শহরের সবকিছু বন্ধ। কিন্তু তিনি খাদ্য উৎপাদনকারী একটি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন। এ জন্য তার প্রতিদিনই কর্মস্থলে যেতে হচ্ছে। ডিউটির সময়ও বেড়েছে চার ঘণ্টা। মন সায় না দিলেও তাকে প্রতিদিনই বের হতে হচ্ছে। অবশ্য ব্যক্তিগত সুরক্ষার সব সামগ্রী নিয়ে তিনি কর্মস্থলে যাতায়াত করছেন।

তিনি বলেন, দুই মেয়ে আর স্ত্রীকে নিয়ে আতঙ্কে থাকলে একটি বিষয় নিয়ে তিনি গর্ববোধ করেন। গোটা দেশ যখন বন্ধ, বাসায় বাসায় খাবারের অভাব। এমন পরিস্থিতিতে খাদ্য উৎপাদনে ভূমিকা রাখতে পারাটাও তার কাছে বড় কিছু। তিনি তা ভেবেই কাজ করে যাচ্ছেন।

দেশটির জেনোয়া শহরের বাসিন্দা বাংলাদেশি সৌরভী ডলি বলছিলেন, দুই সন্তান নিয়ে বাসায় বন্দি আছেন। অ্যাম্বুলেন্সের শব্দ শুনলেই আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। আতঙ্ক এতটাই ভর করেছে, টেলিভিশন পর্যন্ত চালু করেন না। সেখানে এখন শুধুই দুঃসংবাদ। পুরো পরিবার নিয়ে এখনও ভালো আছেন। কিন্তু সব সময় একটি আতঙ্ক থেকেই যাচ্ছে। নিজেদের চিন্তা ছাপিয়ে এখন বড় চিন্তা বাংলাদেশ নিয়ে।

তিনি জানান, মনে সাহস ধরে রাখতে তিনি সব সময় ইতালির বিভিন্ন শহরে থাকা স্বজনের সঙ্গে ভিডিওকলে যোগাযোগ রক্ষা করে চলেছেন। গ্রামে থাকা বাবা-মায়ের সঙ্গে নিয়মিত কথা বলছেন। কিন্তু এখন তাদের নিয়েই চিন্তায় রয়েছেন। বাংলাদেশ যাতে ভালো থাকে সেই প্রার্থনা করেন তিনি।

ভেনিস শহরে থাকেন বাপ্পি ঢালী। তিনি বলেন, গোটা ইতালি এখন মৃত্যুপুরী। টেলিভিশন ও অনলাইন নিউজ পেপারগুলো খুললেই শুধু মৃত মানুষের খবর দেখা যায়। এর মধ্যেই তারা ইতালি সরকারের নির্দেশ মেনে বাসায় থাকছেন। কিন্তু বাংলাদেশ থেকে যখন খবর পান দেশে ফিরে যাওয়া প্রবাসীদের অনেকেই নিয়ম মানছেন না, সরকারি নির্দেশনা মানছেন না, তখন খুব কষ্ট লাগে। তারা নিশ্চয়ই ইতালিতে থাকলে সবকিছু মেনে চলতেন। দেশের স্বার্থেই দেশে ফেরা প্রবাসীদের বাসায় থাকতে হবে। বিদেশে অনেক কষ্ট করে টাকা রোজগার করতে হয়। তারা দেশের অর্থনীতিতে ভূমিকা রাখছেন। অথচ সেই প্রবাসী কারও জন্য দেশের ক্ষতি হবে- এটা কাম্য নয়। বাংলাদেশ ভালো থাকুক, এই চাওয়া সবার।

তিনি বলেন, তারা বাসায় অবরুদ্ধ থাকলেও ইতালির স্থানীয় কাউন্সিলরসহ সরকারি প্রতিনিধিরা নিয়মিত খোঁজখবর নিচ্ছেন। বাংলাদেশেও জনপ্রতিনিধি বা সরকারিভাবে এমনটা করলে সবার মনে স্বস্তি থাকবে।

 

 

সি/এসএস



সংবাদটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

seventeen − 7 =