কানাডার সংবাদ ফিচার্ড

মন্ট্রিয়লে বিজয়া পুনর্মিলনী

মন্ট্রিয়লে বিজয়া পুনর্মিলনী

অনুষ্ঠানের আগেরদিনের প্রত্যাশা ছিল বিজয়া পুনর্মিলনীটি যেন আনন্দের সুবাস ছড়ায়। সেই প্রত্যাশা ষোলকলায় পূর্ণ করেই শেষ হয়েছে অনুষ্ঠান। গতকাল শুক্রবার সনাতন ধর্ম মন্দিরে ছিল এই পুনর্মিলনী। অনুষ্ঠানের প্রতিটি পর্বই এমন অসাধারণ ছিল কোনটা রেখে কোনটা বলা – সেরকম অবস্থা!

স্হানীয়দের নিয়ে করা বিচিত্রানুষ্ঠান কিংবা শিল্পী হৈমন্তী রক্ষিতের গান – দর্শকরা সমান আকর্ষণে উপভোগ করেছেন দুটোই। টানা প্রায় চার ঘন্টাই দর্শকদের দুর্বার দৃষ্টি ছিল মঞ্চে।

বিচিত্রানুষ্ঠান

মন্ট্রিয়লে প্রতিবার শ্যামা পূজায় ‘আনন্দোৎসব’ নামে একটি ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান হয়ে আসছিল বহু বছর। সব বয়সের স্থানীয়দের সমন্বয়ে, তাদের পরিবেশনায় এটি অনুষ্ঠিত হয়ে আসছিল। এটি দুই জনপ্রিয় উপস্থাপক শক্তিব্রত হালদার মানু ও শর্মিলা ধরের পরিকল্পনা, গ্রন্থণা ও পরিচালনায় গান, নাচ, আবৃত্তি, অভিনয়, কৌতুক, ফ্যাশন শো সহ নানা আইটেমের একটি আনন্দঘন অনুষ্ঠান। অনেক জনপ্রিয় ছিল অনুষ্ঠানটি। কিন্তু কয়েক বছর ধরে ‘আনন্দোৎসব’ হচ্ছে না। তবে গতকাল এটিরই আদলে ছোট একটি অনুষ্ঠান হয়। মঙ্গলপ্রদীপ হাতে শান্তির বাণী ছড়িয়ে সূচনা হয় বিচিত্রানুষ্ঠানটি। প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত অনুষ্ঠানটির প্রতিটি পর্ব দর্শকরা উপভোগ করেন। তবে সব কিছু ছাপিয়ে শিশুকিশোরদের পরিবেশনায় দলীয় নৃত্যানুষ্ঠানটি ছিল অপূর্ব! নাচের নিপুন মুদ্রা, শৈল্পিক কসরত, যুৎসই সাজসজ্জা অভিভূত করে দেয় সবাইকে। ভারতীয় নৃত্যকলার উজ্জ্বল উপস্থিতি স্পষ্ট হয়ে ধরা দেয় ওদের চৌকস ছন্দে।। নতুন প্রজন্মের এই নজরকাড়া পর্বটি অভিনন্দিত হয় মুহূর্মুহূ করতালিতে।

অশেষ ধন্যবাদ এই শিশুকিশোরদের, তাদের শিক্ষকদের এবং অভিভাবকদের।

সনাতন ধর্ম মন্দিরের শারদীয় সংকলন ‘উৎসব’র মোড়ক এবার প্রথমে শিশু কিশোররা উন্মোচন করে। এরপর ওরা বার্ষিকীটি মন্দিরের পুরোহিত শ্রী রীতিশ চক্রবর্তীর হাতে অর্পন করে। এসময় পুরোহিত সংক্ষিপ্ত বক্তব্য রাখেন। বক্তব্য রাখেন এবারের সংকলনটির সম্পাদক শ্রী কাঞ্চন চক্রবর্তীও।

বিচিত্রানুষ্ঠানটির চমৎকার উপস্থাপনায় ছিলেন এটির পরিকল্পনা, গ্রন্থণা ও পরিচালনার দায়িত্বে থাকা শর্মিলা ধর ও শক্তিব্রত হালদার মানু।

শিল্পী হৈমন্তী রক্ষিত ও এক অপরূপ সুর সন্ধ্যা

বিচিত্রানুষ্ঠানের পরই শুরু হয় বাংলাদেশ থেকে আগত অতিথি শিল্পী হৈমন্তী রক্ষিতের একক সঙ্গীত সন্ধ্যা। হৈমন্তী মঞ্চে উঠেন আলো জ্বলমল আসরটি আরো আলোকিত হয়ে ওঠে। গান ধরেন, সুরময় হয়ে ওঠে পুরো হল। নিজের গাওয়া মৌলিক গান, প্রখ্যাত শিল্পীদের গীত পুরনো দিনের জনপ্রিয় গান, ফোক ও আঞ্চলিক গান – সব ঘরানার গানই করেন তিনি। গানে, কথায়, হাস্যরসে মাতিয়ে রাখেন পুরোসময়।

হৈমন্তী যখন কন্ঠে তোলেন, কিংবদন্তী শিল্পী রুনা লায়লার “…আকাশের উজ্জ্বল তারাটা, মিটমিট করে শুধু জ্বলছে, বুঝে নিও তোমাকে আমি ভাবছি, তোমাকে কাছে ডাকছি …..” তখন হলের দর্শকরা হৈমন্তীর মাঝে রুনার প্রতিচ্ছায়া দেখেন। আবার যখন গেয়ে ওঠেন আরেক কিংবদন্তী শিল্পী নির্মলা মিশ্রের সেই কালজয়ী গান “তোমার আকাশ দুটি চোখে, আমি হয়ে গেছি তারা, .. … গানে নতুন করে এলো সুর, এ যেন আগের চেয়ে সুমধুর …..” মনে হয় তখন এমন নিমগ্ন দর্শকদের পেয়ে হৈমন্তী আসলেই নতুন করে সুর পেয়েছেন, সত্যিই পেয়েছেন আগের চেয়ে সুমধুর সুর!

সুর লয় তাল কন্ঠের অপরূপ ব্যন্জনায় হৈমন্তীর প্রতিটি গানই ছিল বিমূর্ত।অনুষ্ঠানের শেষের দিকে বিশিষ্ট শিল্পী তপন চৌধুরীও হৈমন্তীর সাথে গানে অংশ নেন। শিল্পীর সাথে অনেক দর্শকও নেচে গেয়ে আনন্দ করেন।

শিল্পীর সাথে যন্ত্রসঙ্গীতে লিটন ডি কস্টা, ঝলক দেব চৌধুরী, মেহেদী ফারুক ও মিথুন দাস। বরাবরের মতোই অসাধারণ সঙ্গত করেছেন তাঁরা।

এই পর্বের উপস্থাপনায় ছিলেন, মৌমিতা সরকার।

অতিথি শিল্পীর পর্বটির সার্বিক ব্যবস্থাপনায় ছিলেন অনুপ চৌধুরী মিঠু। পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানের দুটি পর্বেরই সাউন্ড সিস্টেমও নিয়ন্ত্রণ করেন তিনি। অতিথি শিল্পীর স্পন্সরে ছিলেন মন্ট্রিয়লের চারজন বিশিষ্ট সংষ্কৃতি অনুরাগী। বিজয়া পুনর্মিলনীর সমন্বয় সহযোগী ছিলেন সনাতন ধর্ম মন্দিরের সাংষ্কৃতিক সম্পাদক অনিমেষ কর টিংকু।

শুরুতে কফি সিঙ্গারা, সালাদ, ক্যান্ডি এবং শেষে তপন মোদকের রান্না করা নানা পদের সুস্বাদু নিরামিশ খাবারে আপ্যায়িত করে সনাতন ধর্ম মন্দিরের বিজয়া পুনর্মিলনীর মনোমুগ্ধকর অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘটে।

ছবি: গোপেন দেব

 

সংবাদটি শেয়ার করুন