মন্ট্রিয়ল প্রবাসী নাজমুল ইসলামের মৃত্যুতে শোকসভা
গোপেন দেব।। একজন নাজমুল ইসলাম এই শহরে থাকতেন। এখন অন্য কোনোখানে! চির প্রস্থানের গন্তব্যটি বাস্তবতায় একেবারেই অস্পষ্ট! এই শহরের মানুষ আর তাঁকে দেখবে না।দেখবে না অন্য কোনো শহরের মানুষ, এই পৃথিবীর কোনো মানুষ।পড়বে না তাঁর পায়ের চিহ্ন এখানে সেখানে কোনোখানেই!
কেমন করে একজন মানুষ মানুষের এত প্রিয় হয়! কেমন করে একজন মানুষ জীবনটা ত্যাগের সমুদ্রে ভাসিয়ে দেয় অবলীলায়! নাজমুল ভাইকে দেখলে এরকম প্রশ্ন উঁকি দিতো খুব।সেই নাজমুল ভাই হঠাৎ করেই চলে গেলেন, একেবারে হঠাৎ করেই।
আজ রবিবার অপরাহ্ণে মন্ট্রিয়লের কোট ডেজ নিজ’র একটি হলরুমে নাজমুল ভাইর চিরচলে যাওয়া নিয়ে শোকসভা হবে ভাবিনি, ভাবেনি কেউই।মন্ট্রিয়লে ‘সাহিত্য আড্ডার বন্ধু সভা’ নামে একটি সুহৃদ সংগঠন আছে। সংগঠনটির সাথে নাজমুল ইসলামেরও সম্পৃক্ততা ছিল। সংগঠনের বন্ধুরা তাঁদের প্রাণের বন্ধুটির স্মরণে ছোট পরিসরে এই সভাটির আয়োজন করেন।তবে পরিসর ছোট হলেও শোক সভাটির আন্তরিকতার ব্যাপ্তি ছিল বেশ বড়।
“সকাতরে ওই কাঁদিছে সকলে
শোনো শোনো পিতা,
কহো কানে কানে
শুনাও প্রাণে প্রাণে মঙ্গলবারতা,
…………
ফুরায় বেলা, ফুরায় খেলা,
সন্ধ্যা হয়ে আসে,
কাঁদে তখন আকুল মন, কাঁপে তরাসে।”
মণিকা মুনা, দেবপ্রিয়া কর রুমা আর অনুজা দত্তের কন্ঠে এই প্রার্থনা সঙ্গীতটি দিয়ে শুরু হয় সভা।এরপর সংক্ষিপ্ত স্মৃতিচারণ করেন অনেকেই। সভার অন্যতম আয়োজক সাহিত্য, সংষ্কৃতির পৃষ্ঠপোষক ইসরাত আলমের ভূমিকা-বক্তব্য কিংবা কবি অপরাহ্ণ সুসমিতোর স্মৃতিচারণা হল রুমের শোকার্ত পরিবেশটাকে আরো বেদনাবিধুর করে তুলে। কেউ বলেন কথা নাজমুল ভাইকে নিয়ে, কেউ করেন শোকসঙ্গীত, কেউ পড়েন কবিতা। কথা বলতে গিয়ে যেমন কেঁদেছেন, কেঁদেছেন কবিতায়, কেঁদেছেন সঙ্গীতে, কেঁদেছেন সবাই। শিক্ষা, সংষ্কৃতি, সাহিত্য, বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, রাজনীতি প্রতিটি বিষয়ে অগাধ জ্ঞান ছিল নাজমুল ভাইর। একটি মধুর দাম্পত্য জীবন ছিল। কিন্তু বেশিদিন ঠিকেনি সেই দাম্পত্য সুখ। বহুবছর আগেই হারান প্রিয়তমা স্ত্রীকে। শিশু-সন্তান ছেলেমেয়ে দুটিকে মাবাবার স্নেহ যত্ন দিয়ে বড় করছিলেন, বহু কষ্টে। কিন্তু ছেলেমেয়েকে এতিম করে দিয়ে জীবন যুদ্ধের ইতি টানেন নাজমুল ইসলাম।এসব নানা বেদনার কথা উঠে আসে কথোপকথনে। একজন সৎ, উদার, মানবিক,সুন্দর মনের মানুষের জীবনটা এতো সংগ্রামমুখর কেনো হয়েছিল – এ প্রশ্নের উত্তর খুঁজছিলেন অনেকেই। একজন মানুষ যে ধর্ম বর্ণ জাতি দল মত নির্বিশেষে প্রতিটি মানুষের হৃদয়ে স্থান করে নিতে পারে নাজমুল ইসলাম সেই বিরল উদাহরণ সৃষ্টি করেছিলেন। তাঁর মৃত্যুতে মন্ট্রিয়লে প্রকৃতই নেমেছিল শোকের ছায়া। ইসরাত আলম এতই আবেগতাড়িত হয়ে পড়েছিলেন যে,তিনি সভাটি পরিচালনা করতে যেয়ে বারবার থেমে যাচ্ছিলেন, চোখ মুচছিলেন। সবসময় হাসিখুশি ভাব নিয়ে থাকা কবি অপরাহ্ণ সুসমিতোর ভেতরটা কোমল আবেগে ভরা সেটা জানি। কিন্তু সেটির প্রকাশ্য রূপ আমি আজ প্রথম দেখলাম তিনি যখন নাজমুল ভাইকে নিয়ে লেখাটা পড়ছিলেন।তাঁর পঠিত লেখাটি যেন বেদনার স্মৃতি আলেখ্য। অক্ষরগুলো যেন থরে থরে সাজানো অসময়ে ঝরে যাওয়া গোলাপের পাপড়ি।
অনানুষ্ঠানিক রূপে আয়োজিত এই সভায় কথা, কবিতা, সঙ্গীতে প্রয়াত নাজমুল ইসলামকে আরো যাঁরা স্মরণ করেন তাঁরা হচ্ছেন, লুৎফুর রহমান, আফাজ উদ্দিন তোতন, সন্জীব দাস উত্তম, মুফতি ফারুক, ডা.তাহমিনা, তৌফিকুর রহমান রাঙ্গা প্রমুখ।
“আগুনের পরশমণি ছোঁয়াও প্রাণে, এ হৃদয় পুণ্য করো দহন দানে ….” গানটির সমবেত পরিবেশনা দিয়ে শোক সভাটি শেষ হয়।
দেশ-বিদেশের টাটকা খবর আর অন্যান্য সংবাদপত্র পড়তে হলে CBNA24.com
সুন্দর সুন্দর ভিডিও দেখতে হলে প্লিজ আমাদের চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন
আমাদের ফেসবুক পেজ https://www.facebook.com/deshdiganta.cbna24 লাইক দিন এবং অভিমত জানান