পাভেল চৌধুরী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের চতুর্থ বর্ষের ছাত্র। তিনি অনলাইন এবং অফলাইনে কলেজপড়ুয়া শিক্ষার্থীদের ইংরেজি শেখান। এভাবে বছরে আয় করেন কোটি টাকার বেশি। এখন তাঁর অধীনে কাজ করছেন ১১ জন।
গোপালগঞ্জের রঘুনাথপুর ইউনিয়নের দিঘারকুল গ্রামের সন্তান পাভেল চৌধুরী। বাবা কৃষক। মা গৃহিণী। গোপালগঞ্জের শেখ মুজিব আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয় থেকে জিপিএ ৪.৮৩ পেয়ে এসএসসি এবং হাজী লালমিয়া সিটি কলেজ থেকে জিপিএ ৫ পেয়ে এইচএসসি পাস করেছেন।
পরে ভর্তি হয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। কিছুদিন পর স্নাতক সম্পন্ন হবে তাঁর।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশির ভাগ শিক্ষার্থীই কমবেশি টিউশনির সঙ্গে জড়িত। কৃষক বাবার সন্তান পাভেলও এর বাইরে নন।
২০১৯ সালে প্রথম বর্ষের ছাত্র ছিলেন। তখন এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের ইংরেজি পড়াতেন। একজন দুজন করে ধীরে ধীরে তাঁর শিক্ষার্থীর সংখ্যা বাড়তে থাকে। একসময় ভাবলেন, ইউটিউবে চ্যানেল খুলে সেখানে নিজের পড়ানো ক্লাসগুলো আপলোড করবেন।
পরে ক্যামেরা, ল্যাপটপ কিনে নিজেই ভিডিও বানানো, এডিট সবই করতেন। এখন তাঁর চ্যানেলে এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের ইংরেজি বিষয়ের যেকোনো অধ্যায়ের ওপর আলোচনা পাওয়া যাবে।
পাভেল ও তাঁর কর্মীরা এইচএসসি ইংলিশ ও স্পোকেন ইংলিশ শেখান। এইচএসসি ইংরেজির পাঠ্যক্রমের ওপর আলোচনা তো আছেই ইউটিউবে। পাশাপাশি পেইড ব্যাচও রয়েছে অনলাইন ও অফলাইনে।
স্পোকেন বিভাগে পাভেল ছাড়াও ইনস্ট্রাক্টর আছেন চারজন। পাভেলের দাবি, এ পর্যন্ত প্রায় ১৮ হাজার ছাত্র-ছাত্রী তাঁর কোর্স করেছে। এখন কেবল অনলাইনে শিক্ষার্থী আছে চার হাজার ২৩৭ জন।
২০১৯ সালে টিউশনি করিয়ে মাসে চার-পাঁচ হাজার টাকা পেতেন। শিক্ষার্থীর সংখ্যা দ্রুত বেড়ে যাওয়ায় আয় লাখ টাকা পেরিয়ে যায় কয়েক মাসের মধ্যেই। পরে পাভেলস ইংলিশ একাডেমি নামে পান্থপথে দুই হাজার ৬৫০ বর্গফুটের অফিস নিয়েছেন, যেখানে ১১ জন কর্মী কাজ করেন। প্রতি ব্যাচে এক হাজার ৬০০ থেকে চার হাজার পর্যন্ত শিক্ষার্থী ভর্তি হয়। একেকটি কোর্সের মেয়াদ তিন মাস। এমডি পাভেল চৌধুরী নামে তাঁর ফেসবুক পেজের ফলোয়ার প্রায় সাড়ে আট লাখ। ইউটিউব চ্যানেলের সাবস্ক্রাইবার সাত লাখ ২০ হাজার। ইউটিউবে তাঁর ৪৫২টি ভিডিও ভিউ হয়েছে পাঁচ কোটিরও বেশিবার। বর্তমানে সব মিলিয়ে বছরে নিজের আয় কোটি টাকার বেশি বলে দাবি করলেন পাভেল। ছাত্র-ছাত্রী পড়ানোর টাকায় গোপালগঞ্জে তিন একর জমিও কিনেছেন।
পাভেল বললেন, ‘অত্যন্ত দরিদ্র পরিবার থেকে উঠে এসেছি। ভার্সিটি লাইফে বন্ধুদের থেকে টাকা ধার নিতে নিতে একসময় টাকা আর না পেয়ে না খেয়েও থেকেছি। তখনই আসলে উপলব্ধি করেছিলাম যে জীবনে সফলতা এবং আর্থিক সচ্ছলতা কতটা গুরুত্বপূর্ণ। এই উপলদ্ধিটা আমাকে সব সময় চালিত করেছে।’ আপনার কাছে এত শিক্ষার্থী আসার কারণ কী? এমন প্রশ্নের জবাবে পাভেল বললেন, ‘কিভাবে সহজ পদ্ধতিতে একটা টপিক শেখানো যায়, সেদিকে খেয়াল রাখি। সহজ উপস্থাপনা, সর্বোচ্চ মার্কস, ফোকাস, সাজেশন, স্টাডি ম্যাটেরিয়াল—এটাই আমাকে অন্যদের চেয়ে এগিয়ে রেখেছে। ইংরেজি আসলে একটা বিষয় না, ভাষা। এই ব্যাপারটা রিডিং, রাইটিং, লিসেনিং, স্পিকিংয়ের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের মাথায় ঢুকিয়ে দিতে চেষ্টা করি। ফলে একঘেয়েমিতে না ভুগে তারা শেখে আনন্দের সঙ্গে।’
সুত্রঃ কালের কন্ঠ ( লিখেছেন মুহাম্মদ শফিকুর রহমান)
ডেস্ক রিপোর্ট (এফএইচ বিডি)