পুরানো ছবি সংগৃহিত
প্রাণঘাতি করোনাভাইরাসে ক্রমশই বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যা। মালয়েশিয়ায় এ ভাইরাসে এখন পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছেন ৩ হাজার ১১৬ জন, সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ৭৬৭ জন এবং মৃত্যুবরণ করেছেন ৫০ জন। তবে এখনও পর্যন্ত কোন বাংলাদেশির আক্রান্তের খবর পাওয়া যায়নি। আর এই আক্রান্তের সংখ্যা ঠেকাতেই দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার পর্যটন নগরী এ দেশটিতে চলছে এক টানা ২৮ দিনের লকডাউন। প্রতিদিন মালয়েশিয়ায় করোনা আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে, খাদ্য সংকটে প্রবাসীরা দিশেহারা।
এদিকে, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা থেকে দেশটিতে এপ্রিলের মাঝামাঝি সময়ে এ ভাইরাস আরও ভয়াবহতা দেখা দিতে পারে বলে ইঙ্গিত দিয়েছিল। তাই হয়তো এ নিয়ন্ত্রণ আদেশ আরও বাড়তে পারে বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন মালয়েশিয়া স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালক দাটুক ড. হিসাম আব্দুল্লাহ। তবে তা আগামী ১০ এপ্রিল নাগাদ বলা যাবে বলেও জানান দাটুক হিসাম। ঘোষিত নিয়ন্ত্রণ আদেশ এর গতকাল ১৬তম দিন অতিবাহিত হলো ।
করোনার প্রাদুর্ভাব মোকাবিলায় সর্বসাধারণের চলাফেরা নিয়ন্ত্রণে আনতে নেয়া হয়েছে পর্যাপ্ত ব্যবস্থা। বিনাকারণে ঘর থেকে বের হলেই করা হচ্ছে জেল-জরিমানা। সরকারের দেয়া নিয়ন্ত্রণ আদেশ অমান্য করায় এ পর্যন্ত আটক করা হয়েছে প্রায় ৮২৮ জনকে। এ অবস্থায় বাংলাদেশিসহ সকল প্রবাসীরা চরম দুশ্চিন্তা ও অনিশ্চয়তায় দিনাতিপাত করছেন। এরই মধ্যে খাদ্য সংকটে ভুগছেন অনেক প্রবাসী।
বেশিরভাগ শ্রমিকদের কাছে নগদ অর্থ নেই। কোম্পানিগুলোর কাজ বন্ধ। সরকার ঘোষিত নিয়ন্ত্রণ আদেশের সময় বেতন পরিশোধের ঘোষণা দিলেও মাস শেষে এখন পর্যন্ত কেউ পায়নি বলছেন অনেকেই। অনেক কোম্পানিই চাচ্ছে না নিয়ন্ত্রণ আদেশ সময়কালের বেতন শ্রমিকদের বুঝিয়ে দিতে। এ নিয়ে শ্রমিকদের মধ্য উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠার জন্ম নিয়েছে। অবৈধ অভিবাসী যারা রয়েছেন তারা সমস্যার সম্মুখীন বেশি। এই লকডাউনে ক্ষতিগ্রস্ত বৈধ অবৈধ অভিবাসীদের বিষয়ে জরুরি পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন প্রবাসীরা।
এমতবস্থায় দেশটির সরকারের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক আলোচনার মাধ্যমে মালয়েশিয়া প্রবাসীদের থাকা, খাওয়া ও কেউ আক্রান্ত হলে তাঁর চিকিৎসা সেবার ব্যবস্থা করতে বাংলাদেশ সরকারের নিকট দাবি জানিয়েছেন মালয়েশিয়া আওয়ামী লীগ আহবায়ক কমিটির যুগ্ন- আহবায়ক রাসেদ বাদল। এই বিষয়ে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ মালয়েশিয়া আহবায়ক কমিটির সদস্য নূর মোহাম্মদ ভুঁইয়া বলেন, সরকার প্রবাসীদের সবসময় দেশের সূর্য সন্তান ও রেমিট্যান্স যোদ্ধা বলে অবহিত করেন। আজকের এই দুর্দিনে মালয়েশিয়া সরকারের পাশাপাশি বাংলাদেশ সরকারের এই বাংলাদেশি প্রবাসী শ্রমিকদের পাশে এসে দাঁড়ানোর অনুরোধ জানাচ্ছি আমাদের দূতাবাস ও সরকারকে।
এদিকে জাতীয় শ্রমিক লীগ মালয়েশিয়া শাখার সভাপতি নাজমুল ইসলাম বাবুল বর্তমান পরিস্থিতিতে সকল প্রবাসীদের মালয়েশিয়ার আইন-কানুন মেনে ধৈর্যের সঙ্গে বর্তমান পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে প্রবাসীদের প্রতি আহবান জানান। তিনি বলেন মালেয়েশিয়াস্থ বাংলাদেশ দুতাবেসের ২৪ ঘণ্টা অনলাইন সার্ভিস খুব দ্রুত বাংলাদেশ সরকার এবং দূতাবাস মালয়েশিয়া প্রবাসী ভাইদের পাশে এসে দাঁড়াবে।
এদিকে ভালোবাসি বাংলাদেশ নামক একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ইতিমধ্যে স্থানীয় এনজিও ও সরকারের সহযোগিতায় প্রবাসীদের সহযোগিতায় কাজ শুরু করেছে। এ বিষয়ে সংগঠনটির মুখপত্র মোহাম্মদ হারুন অর রশিদ জানান, এ মুহূর্তে প্রবাসী ভাইয়েরা কারা কারা অসুবিধায় আছেন এমন তথ্যের জন্যে আমরা ইতিমধ্যে গুগলে একটা ফরম তৈরি করেছি যাতে তারা পুরণ করে এবং কেমন সহযোগিতা দরকার আমাদের জানায়। এই আবেদনের প্রেক্ষিতে আমরা আমাদের সাধ্য অনুযায়ী সহযোগিতার চেষ্টা চালাচ্ছি।
এমন পরিস্থিতিতে হাইকমিশন বলছে ধৈর্য ধরে পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে হবে। মিশনের ফোন, ই-মেইলে বা মেসেঞ্জারের মাধ্যমে হাইকমিশনে যোগাযোগ করার জন্য প্রবাসীদের আহ্বান জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। হাইকমিশনার মোঃ শহিদুল ইসলাম তিনি আরও বলেন, সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় এই মহামারি থেকে আমরা উত্তরণ করব। ইতোমধ্যে ঢাকায় জানানো হয়েছে এখানকার পরিস্থিতি। দূতাবাস থকে ২৪ ঘণ্টা হটলাইন সেবা দেয়া হচ্ছে। কর্মকর্তারা পালাক্রমে ডিউটি করছেন। আমরা রাজধানীসহ অন্যান্য শহরে অবস্থানরত সবার সঙ্গে যোগাযোগ অব্যাহত রেখেছি। যেই সমস্যা নিয়ে ফোন করছেন তাদের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে।
সূত্রঃ বিডি প্রতিদিন
সি/এসএস