মাস্ক না ফেস শিল্ড, করোনা প্রতিরোধে কোনটি কার্যকর?
টানা বন্ধ থাকার পর অনেকক্ষেত্রেই লকডাউন শিথিল করা হয়েছে। যদিও করোনার সংক্রমণ আগের তুলানায় বেড়েছে। তবে এভাবে দিনের পর দিন সব কিছু বন্ধ রাখাটাও সম্ভব নয়। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যতদিন করোনার টিকা আবিষ্কার না হবে ততদিনে করোনাকে সঙ্গে নিয়েই সুরক্ষিত থাকার পদ্ধতি শিখতে হবে। এ কারণে তারা বাইরে বের হবার আগে সুরক্ষিত থাকতে নানা পরামর্শ দিচ্ছেন।
করোনা এড়াতে সরকারের পক্ষ থেকেও স্বাস্থ্যবিধি ও সামাজিক দূরত্ব মেনে চলার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। কিছু ক্ষেত্রে সামাজিক দূরত্ব মেনে চললেও, কিছু কিছু ক্ষেত্রে মানা সম্ভব হয়ে উঠছে না। কাজেই এই সময়ে সতর্ক থাকার দায়িত্ব নিতে হবে নিজেদেরকেই।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সাবান দিয়ে বারবার হাত ধোয়া, মাস্ক ও গ্লাভস ব্যবহারের পাশাপাশি মেনে চলতে হবে সামাজিক দূরত্ব। বাড়তি সতর্কতা হিসেবে অনেকেই মাস্কের উপর আজকাল ফেস শিল্ড ব্যবহার করছেন। অনেকের মনে তাই প্রশ্ন, করোনাকে এড়াতে মাস্ক নাকি ফেস শিল্ড, কোনটি সবচেয়ে ভালো?
বিশেষজ্ঞদের মতে, তিন স্তরবিশিষ্ট মাস্ক সঠিক নিয়মে ব্যবহার করলে এবং সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখলে করোনার সংক্রমণ প্রায় ৯০ থেকে ৯৫ শতাংশ কমানো সম্ভব। কিন্তু অনেকেই সঠিক নিয়মে মাস্ক ব্যবহার করছেন না। কথা বলার সময় মাস্ক থুতনির কাছে নামিয়ে নিচ্ছেন, কেউ আবার নাকের নিচ থেকে মাস্ক ব্যবহার করছেন। যার ফলে বাড়ছে সংক্রমণের হার।
অনেকে আবার মাস্কের পরিবর্তে রুমাল ব্যবহার করছেন। সেক্ষেত্রে রুমালের নিচের দিকটা ফাঁকা থাকার ফলে ভাইরাস প্রবেশ করার সম্ভাবনা থেকে যাচ্ছে।
বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, করোনা ভাইরাস মূলত মুখ, চোখ ও নাক দিয়ে শরীরের মধ্যে প্রবেশ করে ফুসফুসে সংক্রমণ ঘটায়। তাই মাস্ক ব্যবহারের পাশাপাশি অনেকে আলাদাভাবে চশমা বা সানগ্লাস ব্যবহার করছেন। তবে ফেস শিল্ড ব্যবহার করলে আলাদাভাবে চশমা ব্যবহারের প্রয়োজন পড়ে না । এটি ব্যবহার করলে চোখে, মুখে বা নাকে হাত দেওয়ারও সুযোগ থাকে না। যার ফলে সংক্রমণের আশঙ্কা অনেকটাই কমে যায়। এছাড়াও এটি ব্যবহারের আরেকটি সুবিধা হলো ব্যবহারের পরে সাবান পানি দিয়ে ধুয়ে বা স্যানিটাইজ করে এটি আবার ব্যবহার করা যায়।
বিশেষজ্ঞদের মতে, ফেস শিল্ড ব্যবহারের ক্ষেত্রেও কিছু অসুবিধা আছে। যেমন- এটির দুপাশে অল্প কিছুটা ফাঁকা থাকে। সেই ফাঁকা স্থান দিয়ে হাঁচি বা কাশির ড্রপলেট প্রবেশ করে সংক্রমিত হওয়ার সম্ভাবনা থেকেই যায়। তাদের মতে, যদি তিন স্তরের মাস্ক সঠিক নিয়ম মেনে ব্যবহার করা যায় তাহলে ফেস শিল্ড পরার প্রয়োজন পড়ে না।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সাধারণ মানুষের ফেস শিল্ড পরার প্রয়োজন নেই। তবে চিকিৎসক, স্বাস্থ্যকর্মী, পুলিশকর্মী ও হাসপাতালের অন্যান্য কর্মীদের এটি ব্যবহার করা জরুরি।
বিশেষজ্ঞদের মতে, কেউ যদি সামাজিক দূরত্ব মেনে চলেন, নিজের গাড়িতে যাতায়াত করেন এবং কর্মস্থানে যদি আলাদাভাবে বসেন তাহলে মাস্ক বা ফেসশিল্ডের মধ্যে যেকোনও একটা ব্যবহার করলেই চলবে। তবে গণপরিবহন ব্যবহারের ক্ষেত্রে দুটিই ব্যবহার করতে পারেন। কিন্তু এটা মনে রাখতে হবে, ফেস শিল্ড ব্যবহার করলেও মাস্ক ব্যবহার কখনই বাদ দেওয়া যাবে না।
মাস্ক পরিষ্কার করবেন যেভাবে
করোনা প্রতিরোধে মাস্কের ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বাইরে বের হলে, এমনকী ঘরেও মাস্ক পরার ব্যাপারে পরামর্শ দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা। এ কারণে বেশিরভাগ দেশে লকডাউন উঠে গেলেও মাস্ক পরার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
তবে মাস্ক পরা যেমন জরুরি, এটি পরিষ্কার করাটাও কিন্তু ততটাই জরুরি। কিন্তু অনেকেই সেটা করছেন না।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সার্জিক্যাল মাস্ক একবার পরেই ফেলে দিতে হয়। তাদের মতে, সুতির কাপড় বা টেরিলিন কাপড়ের তৈরি মাস্ক সাধারণ মানুষের জন্য বেশি কার্যকর। তবে চিকিৎসক-স্বাস্থ্যকর্মীদের এন৯৫ মাস্ক ব্যবহার করা উচিত। তবে চাইলে তারাও সুতির বা টেরিলিন কাপড়ের তৈরি মাস্ক ব্যবহার করতে পারেন। তবে এ ধরনের মাস্ক ব্যবহারের পর প্রতিদিনই তা ধুয়ে দেয়া জরুরি।
মাস্ক পরিষ্কার করবেন যেভাবে-
১. মাস্কে সরাসরি হাত দেবেন না। ঘরে ফেরার পর মাস্কের দড়ি, ফিতে বা রাবার ব্যান্ডের অংশ ধরে খুলুন।
২. সাবান বা ডিটারজেন্ট মেশানো পানিতে মাস্কটি ভিজিয়ে ধুতে পারেন।
৩. মাস্ক ধোয়ার পর জীবাণুনাশক লোশনে ডুবিয়ে ছাদের কোনো আংটায় বা বারান্দার দড়িতে ঝুলিয়ে রাখুন। কড়া রোদে শুকাতে পারলে ভালো হয়। কারণ রোদে ভাইরাসের বেঁচে থাকার সম্ভাবনা কমে।
৪. গরম পানিতে মাস্ক ফুটিয়ে নিতে পারেন। এতে জীবাণুমুক্ত হবে মাস্ক।
৫. শুকানোর সময় মাস্কের মূল অংশে যেন ধুলোবালি লেগে না থাকে সেদিকে লক্ষ্য রাখুন।
৬. শুকানোর পর মাস্কটি ইস্ত্রি করে নিলেই সেটি আবার ব্যবহারের উপযোগী হবে।
৭. ভালোভাবে না শুকিয়ে ভেজা মাস্ক পরা ঠিক নয়। এতে সংক্রমিত হওয়ার ঝুঁকি বাড়ে।
সি/এসএস
দেশ-বিদেশের টাটকা খবর আর অন্যান্য সংবাদপত্র পড়তে হলে cbna24.com
সুন্দর সুন্দর ভিডিও দেখতে হলে প্লিজ আমাদের চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন