মিশু’র মৃত্যুতে শোকের কালো ছায়া সিলেটের আকাশ থেকে বিশ্বের দেশে দেশে
সদেরা সুজন।। একজন মানুষ এই ছোট্ট এক জীবনে কতটুকু ভালো মানুষ হলে, কতটুকু সৎ-সত্য ও সুন্দরের মননশীল হলে, কতটুকু প্রগতিশীল এবং অসাম্প্রদায়িক চেতনার পথ প্রদর্শক হলে নিজের ভৌগলিক সিমানা পেরিয়ে বিশ্বের দেশে দেশে, শহরে শহরে ধর্ম-বর্ণ জাত-জাতি নির্বিশেষে কাঁদতে পারে তাঁর আকস্মিক না ফেরার দেশে চলে যাওয়াতে। সোশ্যাল মিডিয়াতে সাম্প্রতিককালে কোনো মানুষের মৃত্যুতে দেশে-বিদেশে এমন শোক, এমন শ্রদ্ধা, শোকের স্তব্দতা, এমন ভালোবাসা, এমন কান্নার শব্দ সিলেটের আকাশ থেকে ছড়িয়ে পড়েছে বিশ্বের শহরে শহরে প্রিয় বন্ধু, প্রিয় স্বজন, প্রিয় মানুষের কাছে..।
তিনি আর কেউ নন তিনি হলেন সম্মিলিত নাট্য পরিষদ সিলেট এর প্রাণ পুরুষ, সিলেটের প্রগতিশীল নাট্য ও সাংস্কৃতিক আন্দোলনের অগ্র সৈনিক, সিলেট সম্মিলিত নাট্য পরিষদের সভাপতি ও নব্বই দশকের জনপ্রিয় মডেল সবার প্রিয়মুখ মিশফাক আহমেদ চৌধুরী মিশু। যিনি গতকাল আকস্মিক হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন চলে গেছেন না ফেরার দেশে। সম্মিলিত নাট্য পরিষদ সিলেটের সাধারণ সম্পাদক রজতকান্তি গুপ্ত জানান, শুক্রবার রাতেও একটি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মিশু। বাসায় ফেরার পর শনিবার ভোরের দিকে তিনি হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন। এরপর নগরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে নেওয়ার পর তাকে মৃত ঘোষণা করা হয়। হাসপাতালে আনার আগেই মিশু মারা যান বলে ধারণা রজতের।
মিশুর এই অসময়ে চলে যাওয়া বৃহত্তর সিলেটের তথা বাংলাদেশের প্রগতিশীল সাংস্কৃতিক আন্দোলনের অপূরনীয় ক্ষতি হলো।
সিলেট এমসি কলেজের সাবেক শিক্ষার্থী মিশুর ৯০ দশকে মডেল হিসেবে টেলিভিশন মিডিয়ায় আবির্ভাব। তিনি বেশকিছু বিজ্ঞাপনে মডেলিংয়ের পাশাপাশি টিভি নাটকেও অভিনয় করেন। টেলিভিশনে আসার আগে থেকেই মঞ্চ নাটকের সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন মিশু। তিনি লিটল থিয়েটার সিলেটের নাট্যকর্মী।
২০১৬ সাল থেকে সম্মিলিত নাট্য পরিষদ সিলেটের সভাপতির দায়িত্বপালন করে আসছেন মিশু। এছাড়া তিনি সিলেট মহানগর জাসদের সভাপতির দায়িত্বেও ছিলেন।
করোনা সংক্রমণ এবং সাম্প্রতিক ভয়াবহ বন্যায় সিলেটে সংস্কৃতিকর্মীদের ‘কলের গাড়ি’র মাধ্যমে খাদ্য ও ত্রাণ সহায়তার অন্যতম উদ্যোক্তা ছিলেন মিশু।
গতকাল রাতে মন্ট্রিয়লের একটি অনুষ্ঠানে তাঁর মৃত্যু সংবাদ পেয়ে বড্ড বেশি অবিশ্বাস হচ্ছিল। অনুষ্ঠানে মিশফাক আহমেদ চৌধুরী মিশু’র মৃত্যু সংবাদটি দিয়েছিলেন একসময় সিলেটের নাট্য আন্দোলনের আরও এক প্রিয় মুখ বর্তমানে কানাডা প্রবাসী শক্তিব্রত হালদার মানুর সহধর্মিনী পূরবী হালদার। শক্তিব্রত হালদার মানু এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত হবার কথা ছিলো কিন্তু প্রিয় বন্ধু, প্রিয় মানুষের আকস্মিক চলে যাওয়াতে তিনি কান্নায় ভেঙ্গে পড়েছিলেন শোকে মূহ্যমান ছিলেন। এই অনুষ্ঠানের মধ্যেই এমন মৃত্যু সংবাদে অনেকেই স্তম্ভিত হয়ে পড়েন কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন মন্ট্রিয়লের সংগীত শিল্পী মুনমুন দেব। তিনিও একসময় সিলেটের সাংস্কৃতিক অঙ্গনে জড়িত ছিলেন।
প্রখ্যাত সাংবাদিক গোপেন দেব মিশফাক আহমেদ চৌধুরী মিশুকে নিয়ে একটি শোকগাথা লিখেছেন যা পড়লে নিজের অজান্তেই কান্না চলে আসে আর এভাবেই বিশ্বের দেশে দেশে শহর থেকে শহরে প্রিয় মানুষগুলো তাঁকে নিয়ে-তাঁর ছবি দিয়ে শোকগাথা আর স্মৃতিচারণ করছেন।
সম্মিলিত নাট্য পরিষদ সিলেটের সভাপতি, গ্রেটার সিলেটের সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনের অতি পরিচিত মুখ, সদা হাস্যোজ্জল, চিরসবুজ, রুচিশীল ও আধুনিক মনস্ক, অত্যন্ত সজ্জন ব্যক্তিত্ব, ভদ্র ও সম্ভ্রান্ত পরিবারের সন্তান, প্রতিশ্রুতিশীল সাংস্কৃতিক সংগঠক, মিশফাক আহমদ চৌধুরী মিশুর মৃত্যুতে কানাডা-বাংলাদেশ নিউজ এজেন্সি, সিবিএনএ২৪ডটকম এবং দেশদিগন্ত মিডিয়ার প্রধান নির্বাহী সদেরা সুজন গভীর শোক এবং পরিবার-পরিজনের প্রতি শোক ও সমবেদনা জানিয়ে বলেছেন সিলেট কিংবা সারা বাংলাদেশে অসাম্প্রদায়িক চেতনা-মুক্তবুদ্ধি-সাংস্কৃতিক মনমানষিকতার বড্ড অকাল তখনই মিশুর মতো ব্যক্তিত্ব চলে যাওয়া মানে সাংস্কৃতিক অঙ্গনে প্রগতিশীল আকাশ থেকে একটি উজ্জ্বল নক্ষত্র হারিয়ে যাওয়া। যা সহজে পূরণ হবার নয় আর হবে কিনা সন্দেহ। তবুও স্বাভাবিক নিয়মে তা মেনে নিতে হবে। যেখানেই থাকুন তিনি শান্তিতে থাকুন, আত্মার শান্তি কামনা করেছেন।