মুক্তিযুদ্ধের সেক্টর : বাংলাদেশকে কেন ১১টি সেক্টরে ভাগ করা হয়েছিল?
সত্তরের নির্বাচনে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করলেও শেখ মুজিবকে সরকার গঠনে আহ্বান করার পরিবর্তে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান ১৯৭১ সালের ১লা মার্চ জাতীয় পরিষদ অধিবেশন অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত ঘোষণা করেন। প্রতিবাদে শেখ মুজিবের নেতৃত্বে পূর্ব পাকিস্তানে অসহযোগ আন্দোলন শুরু হয়। এরপর ২৫ শে মার্চ রাতে গণহত্যা চালায় পাকিস্তান সেনাবাহিনী এবং শুরু হয় বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ।
গণহত্যা শুরুর পর সামরিক বাহিনী, ইপিআর, পুলিশ ও আনসার বাহিনীর বাঙালি সদস্য এবং তরুণ দেশপ্রেমিকেরা স্থানীয়ভাবে প্রতিরোধ গড়ে তোলেন।
এর মধ্যে ১৯৭১ সালের ৪ঠা এপ্রিল সামরিক বাহিনীর বাঙালি কর্মকর্তারা সিলেটের তেলিয়াপাড়া চা বাগানে এক বৈঠকে মিলিত হন। সেখানেই প্রণীত হয়েছিল মুক্তিযুদ্ধের রণকৌশল, যা তেলিয়াপাড়া স্ট্র্যাটেজি নামে পরিচিত।
ইস্টবেঙ্গল রেজিমেন্টের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাসহ মোট ২৭ জন সেনা কর্মকর্তা ওই বৈঠকে অংশ নিয়েছিলেন।
‘বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধ দলিলপত্র’ বইয়ে উল্লেখ করা হয়েছে, ১৯৭১ সালে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর পাঁচটি বাঙালি রেজিমেন্ট ছিল।
এর মধ্যে দ্বিতীয়, তৃতীয়, চতুর্থ ও অষ্টম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট গণহত্যার আগে থেকেই বিভিন্ন স্থানে বিদ্রোহ করে এবং প্রতিরোধযুদ্ধ শুরু করে।
বেঙ্গল রেজিমেন্টের বাইরে ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টাল সেন্টারে প্রশিক্ষণরত সেনা সদস্যসহ সেনাবাহিনীর বিভিন্ন ইউনিটে কর্মরত বাঙালি সেনাদের বড় অংশ পালিয়ে এসে মুক্তিযুদ্ধে যোগ দিয়েছিলেন।
অসংগঠিত ও বিচ্ছিন্নভাবে শুরু হওয়া এই প্রতিরোধযুদ্ধকে সংগঠিতভাবে পরিচালনা করার জন্য তেলিয়াপাড়া বৈঠকের আয়োজন করা হয়েছিল।
সেখানে সিদ্ধান্ত হয় এম এ জি ওসমানী যুদ্ধে নেতৃত্ব দেবেন এবং বাংলাদেশকে চারটি সামরিক অঞ্চলে ভাগ করে সশস্ত্র যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়া হবে।
এর দায়িত্ব দেয়া হয় চারজন সিনিয়র কমান্ডারকে।
ওই বৈঠকে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণকারী বাহিনী সম্পর্কিত সাংগঠনিক ধারণা এবং কমান্ড কাঠামোর রূপরেখা প্রণীত হয়।
এপ্রিলের ১০ তারিখে শেখ মুজিবুর রহমানকে রাষ্ট্রপতি, সৈয়দ নজরুল ইসলামকে উপরাষ্ট্রপতি এবং তাজউদ্দিন আহমদকে প্রধানমন্ত্রী করে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের প্রবাসী সরকার তথা মুজিবনগর সরকার গঠিত হয়।
তারপর আরও চারটি সামরিক অঞ্চল ঘোষণা করে সেগুলোর সেক্টর কমান্ডারদের নাম ঘোষণা করেন তাজউদ্দিন আহমদ।
সেক্টর কমান্ডার্স ফোরামের মহাসচিব হারুন হাবীব বলেন- “প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ তার বেতার ভাষণে জানান, বিভিন্ন অঞ্চলে আটজন সেনা কর্মকর্তার নেতৃত্বে যুদ্ধ পরিচালিত হচ্ছে এতে যুদ্ধের গতি আরও বেড়ে যায়।”
তিনি বলেছেন, “মুক্তিযুদ্ধের শুরুটা যখন হয় তখনতো কোন সেক্টর, অস্ত্রপাতি ছিলো না। মুক্তিযুদ্ধের সরকার অর্থাৎ মুজিবনগর সরকার গঠিত হবার পর দেশের বিভিন্ন জায়গায় পাকিস্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধে বাঙ্গালির প্রতিরোধ যুদ্ধ সুসংগঠিত করার চেষ্টা করলো।”
এর মধ্যে ১১ই এপ্রিল প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমেদ প্রথম বেতার ভাষণ দিলেন মুক্তিযুদ্ধের অগ্রগতি দেশবাসিকে জানানোর জন্য, তাতে চারজন আঞ্চলিক অধিনায়কদের কথা বললেন, যাদের নেতৃত্বে যুদ্ধ পরিচালিত হচ্ছে।
সূত্র: মানবজমিন