সুনামগঞ্জের দিরাইয়ে দুর্বৃত্তের আগুনে পুড়ে যাওয়া বাউল রণেশ ঠাকুরের আসর ঘর পরিদর্শনে পুলিশ কর্মকর্তারা
পঙ্কজ দে, সুনামগঞ্জ ।।’যারা বাউল আসর চায় না তারাই সব পুড়িয়ে দিয়েছে’ । সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলার উজানধল গ্রামে বাউল রণেশ ঠাকুরের গানের বই, বাদ্যযন্ত্রসহ আসরের পুরো ঘরই রোববার রাতে পুড়িয়ে দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। উজানধলের বাউল সমাজ ও সুনামগঞ্জের সাংস্কৃতিক অঙ্গনে গতকাল মঙ্গলবার দিনভর ছিল এ নিয়ে আলোচনা। রণেশ ঠাকুর বাউল সম্রাট শাহ আব্দুল করিমের শিষ্য। তার বাড়ি শাহ আব্দুল করিমের বাড়ি লাগোয়া। ২০১০ সালে শাহ আব্দুল করিমের বাড়িতেও হামলা হয়েছিল। উজানধলের বাউলরা এবং স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আব্দুল কদ্দুছ মনে করছেন, শাহ আব্দুল করিমের বাড়িতে যারা হামলা করেছিল তারাই এ ঘটনা ঘটাতে পারে। তারা চায় না এ এলাকায় বাউলদের আসর থাকুক।
উজানধলের একাধিক মানুষের সঙ্গে গতকাল কথা বলে জানা যায়, গ্রামের একটি অংশ যারা শাহ আব্দুল করিমের বাড়িতে হামলার নেপথ্যে ছিল তারাই রণেশ ঠাকুরের গানের আসরের ঘর পুড়িয়ে দেওয়ায় জড়িত থাকতে পারে।
গ্রামের প্রতিবাদী তরুণ দোলন চৌধুরী জানান, শাহ আব্দুল করিমের শিষ্য বাউল রণেশ ঠাকুর এবং প্রয়াত রুহী ঠাকুরের বাবার প্রচুর জমিজমা ছিল। তাদের বাড়ির সামনের কিছু জায়গা নিয়ে গ্রামের কালাম মিয়ার সঙ্গে রণেশ ঠাকুরের বিরোধ রয়েছে। ওই জমিতে গ্রামের ইউপি সদস্য কালাম মিয়াসহ কিছু লোকজন এর আগে ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান করার উদ্যোগ নিয়েছিলেন। এ নিয়ে গ্রামবাসীর মধ্যে মতপার্থক্য দেখা দেয়।
গ্রামের অনেকে দাবি করেন, একদিকে রণেশ ঠাকুরের বাউল আসর ঘর, আরেক দিকে শাহ আব্দুল করিম সংগীতালয়সহ আব্দুল করিমের বাড়ি, আরেক দিকে মিস্ত্রীদের হাটি। ওখানে ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান না করলেই ভালো হয়। অন্য কোনো স্থানে সবার মতামতের ভিত্তিতে করার প্রস্তাব দেন গ্রামের বেশিরভাগ মানুষ। কিন্তু গ্রামের একটি পক্ষ ওখানেই ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান করতে চাচ্ছে। এ নিয়ে মতপার্থক্য দীর্ঘদিন ধরে চলছে।
শাহ্ আব্দুল করিম পরিষদের দিরাই উপজেলা শাখার সভাপতি আপেল মাহমুদ জানান, ২০১০ সালে শাহ আব্দুল করিমের বাড়িতে গানের আসরে এসে কিছু মানুষ বাধা দেয়। পরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করেন। যারা গানের আসরে বাধা দিয়েছিল, এদের একজন
এসে বন্ড সই দিয়ে বলে যায়, তারা আর গানের আসরে বাধা দেবে না। পরে আপসে বিষয়টি নিষ্পত্তি হয়।
তবে কালাম মিয়ার আত্মীয় গ্রামের ইউপি সদস্য লাল মিয়ার দাবি, জায়গাজমি সংক্রান্ত বিরোধের জের ধরে আগুন লাগানোর ঘটনা ঘটেনি। এর আগে শাহ আব্দুল করিমের বাড়িতে হামলার ঘটনাটিও অতিরঞ্জিত ছিল। এ নিয়ে আদালতে মামলা হয়েছিল। পরে আপসে নিষ্পত্তি হয় এ মামলা। বন্ড সই দেওয়ার কথাও সত্য নয়।
এসে বন্ড সই দিয়ে বলে যায়, তারা আর গানের আসরে বাধা দেবে না। পরে আপসে বিষয়টি নিষ্পত্তি হয়।
তবে কালাম মিয়ার আত্মীয় গ্রামের ইউপি সদস্য লাল মিয়ার দাবি, জায়গাজমি সংক্রান্ত বিরোধের জের ধরে আগুন লাগানোর ঘটনা ঘটেনি। এর আগে শাহ আব্দুল করিমের বাড়িতে হামলার ঘটনাটিও অতিরঞ্জিত ছিল। এ নিয়ে আদালতে মামলা হয়েছিল। পরে আপসে নিষ্পত্তি হয় এ মামলা। বন্ড সই দেওয়ার কথাও সত্য নয়।
স্থানীয় তাড়ল ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল কদ্দুছও মনে করেন ‘যারা বাউল আসর চায় না তারাই সব পুড়িয়ে দিয়েছে’ যারা শাহ আব্দুল করিমের বাড়িতে হামলা করেছিল, তারা কোনো না কোনোভাবে রোববারের অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় জড়িত।
এদিকে গতকাল দুপুরে সহকারী পুলিশ সুপার বেলায়েৎ হোসেন ও দিরাই থানার ওসি কেএম নজরুল ইসলাম উজানধলে গিয়ে এই বিষয়ে গ্রামের একাধিক ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলেছেন। পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান জানান, তারা ঘটনাটি নিবিড়ভাবে তদন্ত করছেন।
রোববার রাতের ওই ঘটনায় ৫৫ বছর বয়সী বাউল রণেশ ঠাকুর ও তার শিষ্যসামন্তের সব বাদ্যযন্ত্র পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। গ্রামের বাসিন্দারা জানান, উজানধলের রবনী মোহন চক্রবর্তী কীর্ত্তনীয়া ছিলেন। তার ছেলে রুহী ঠাকুর ও রণেশ ঠাকুর বাউল সল্ফ্রাট শাহ আব্দুল করিমের অন্যতম শিষ্য বাউল। ওস্তাদ শাহ আব্দুল করিম ও বড় ভাই রুহী ঠাকুর মারা যাওয়ার পর ভাটি অঞ্চলের গ্রামে গ্রামে যে ক’জন বাউল জনপ্রিয় তাদের মধ্যে রণেশ ঠাকুর অন্যতম।
এদিকে গতকাল দুপুরে সহকারী পুলিশ সুপার বেলায়েৎ হোসেন ও দিরাই থানার ওসি কেএম নজরুল ইসলাম উজানধলে গিয়ে এই বিষয়ে গ্রামের একাধিক ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলেছেন। পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান জানান, তারা ঘটনাটি নিবিড়ভাবে তদন্ত করছেন।
রোববার রাতের ওই ঘটনায় ৫৫ বছর বয়সী বাউল রণেশ ঠাকুর ও তার শিষ্যসামন্তের সব বাদ্যযন্ত্র পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। গ্রামের বাসিন্দারা জানান, উজানধলের রবনী মোহন চক্রবর্তী কীর্ত্তনীয়া ছিলেন। তার ছেলে রুহী ঠাকুর ও রণেশ ঠাকুর বাউল সল্ফ্রাট শাহ আব্দুল করিমের অন্যতম শিষ্য বাউল। ওস্তাদ শাহ আব্দুল করিম ও বড় ভাই রুহী ঠাকুর মারা যাওয়ার পর ভাটি অঞ্চলের গ্রামে গ্রামে যে ক’জন বাউল জনপ্রিয় তাদের মধ্যে রণেশ ঠাকুর অন্যতম।
রণেশ ঠাকুরের বাড়িতে করোনাকালের আগে পর্যন্ত প্রায় প্রতিদিনই বাউল আসর বসতো। বসতঘরের উল্টোদিকে তার বাউল আসর ঘর। ওখানেই তার নিজের ও শিষ্যদের বাদ্যযন্ত্র থাকত। রোববার রাত ১১টার দিকে পরিবারের সবাই ঘুমাতে যান। রাত ১টার পর রণেশ ঠাকুরের বড় ভাইয়ের স্ত্রী সবাইকে চিৎকার করে ডাকতে থাকেন। অন্যরা ঘুম থেকে উঠে দেখেন গানের ঘর পুড়ে যাচ্ছে। পরে আশপাশের লোকজন চেষ্টা করে আগুন নেভালেও পুরো ঘরই পুড়ে ছাই হয়ে যায়।