দেশের সংবাদ

ক্ষুব্ধ প্রধানমন্ত্রী! আশ্রয়ণ প্রকল্পে অনিয়মের সত্যতা পেলেই ব্যবস্থা

বেশ কয়েকটি উপজেলায় উপহারের অনেক ঘর ভেঙে পড়ার দৃশ্য

ক্ষুব্ধ প্রধানমন্ত্রী! আশ্রয়ণ প্রকল্পে অনিয়মের সত্যতা পেলেই ব্যবস্থা

মুহম্মদ আকবর ।। আশ্রয়ণ প্রকল্পের আওতায় প্রথম ও দ্বিতীয় ধাপে প্রায় ১ লাখ ২৩ হাজার ভূমিহীন পরিবারকে ঘর দিয়েছে সরকার। ‘আশ্রয়ণের অধিকার, শেখ হাসিনার উপহার’ শীষর্ক এই চমৎকার উদ্যোগটি সাধুবাদ পেয়েছিল সর্বস্তরের মানুষের। মুক্তিযুদ্ধের অঙ্গীকার যেন বাস্তবায়ন হতে চলেছিল মুজিব শতবর্ষে এসে। কিন্তু ঘর বুঝিয়ে দেওয়ার পরই ধরা পড়ে নানা অসঙ্গতি।

বেশ কয়েকটি উপজেলায় উপহারের অনেক ঘর ভেঙে পড়ার খবর পাওয়া যায়। প্রধানমন্ত্রীর মহৎ উদ্যোগের এমন পরিণতিতে তীব্র সমালোচনার মুখে পড়ে সংশ্লিষ্টরা। ক্ষুব্ধ হয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজেও। অনিয়মের সত্যতা যার বিরুদ্ধে পাওয়া যাবে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। এরপর বিষয়টি খতিয়ে দেখতে তদন্ত কমিটি করে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়। গত সোমবার সেই তদন্ত কমিটিতে আসে নানা অভিযোগ। পাওয়া যায় অভিযোগের সত্যতাও।

তদন্তে উঠে আসে জায়গা নির্বাচন ও ঘর নির্মাণে অনিয়ম, দুর্নীতি এবং দায়িত্ব পালনে অবহেলার মতো অভিযোগ। ওইদিনই সংশ্লিষ্ট ৫ কর্মকর্তাকে ওএসডি করা হয়। দুজনের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা হয়। অনিয়মের অভিযোগের তালিকায় রয়েছেন ১৮০ জন। অভিযোগ প্রমাণিত হলে নেওয়া হবে ব্যবস্থা। এর মধ্যে ৩৬ জন ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানের নামও রয়েছে।

প্রাথমিক তদন্ত প্রতিবেদনে অভিযোগ আসা উপজেলাগুলোর মধ্যে রয়েছে- সিরাজগঞ্জের কাজীপুর, বরগুনার আমতলী, বগুড়ার শেরপুর, শাজাহানপুর, সুনামগঞ্জের শাল্লা, মুন্সীগঞ্জ সদর উপজেলা, বগুড়ার আদমদীঘি, কুমিল্লার দেবিদ্বার, খাগড়াছড়ির মহালছড়ি, মাদারীপুরের কালকিনি, লালমনিরহাট সদর, গাজীপুরের শ্রীপুর, সিরাজগঞ্জের তাড়াশ, নেত্রকোনার খালিয়াজুরী ও মোহনগঞ্জ, কিশোরগঞ্জের কটিয়াদী, জামালপুরের ইসলামপুর, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল, ময়মনসিংহ সদর, দিনাজপুরের ফুলবাড়ী, হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ, মাধবপুর, চুনারুঘাট, ভোলার লালমোহন, পাবনার সাঁথিয়া, মানিকগঞ্জের ঘিওর, নাটোর সদর, কুড়িগ্রামের রৌমারী, বরিশাল সদর এবং ঠাকুরগাঁওয়ের হরিপুর। এর আগে প্রথম ধাপে হাতিয়াসহ বেশ কয়েকটি এলাকায় ঘর নির্মাণে কিছু অভিযোগ আসে, সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধেও নেওয়া হয় ব্যবস্থা।

আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের নীতিমালায় আছে, অনুমোদিত নকশা ও প্রাক্কলন অনুযায়ী নির্মাণকাজ শেষ করতে হবে। কাজ শেষে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি পরিদর্শন করে সাত দিনের মধ্যে সচিত্র সমাপ্তি প্রতিবেদন জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রকল্প পরিচালক, আশ্রয়ণ-২ প্রকল্প, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় বরাবর পাঠাবে। নির্মাণকাজে নিয়োজিত শ্রমিক হিসেবে উপকারভোগী পরিবারের সদস্যদের অগ্রাধিকার দেওয়া যাবে। ১৯৮৮ সালের বন্যার বিপদসীমার ওপর পর্যন্ত মাটি ভরাট করে নকশা মোতাবেক ভিটি প্রস্তুত করতে হবে। ভূমিহীন মানুষের জীবন-জীবিকার কথা উল্লেখ করে আরও কিছু বিষয় নীতিমালায় আছে।

জানা গেছে, যেসব এলাকায় অভিযোগ উঠেছে তা মূলত নীতিমালা ভঙ্গের কারণেই। শুধু মাঠপর্যায়ে নয়, এই প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত অন্যরাও স্ব স্ব দায়িত্বে অবহেলা করেছেন কিনা তাও খতিয়ে দেখবেন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা। জানতে চাইলে প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব আহমদ কায়কাউস বলেন, আশ্রয়ণ প্রকল্পটি প্রধানমন্ত্রীর স্বপ্নের প্রকল্প। এর সঙ্গে আমাদের সবার আবেগ জড়িয়ে আছে। তাই প্রকল্পটি বাস্তবায়নে কোনো ধরনের ক্রটিবিচ্যুতি, অনিয়ম, দুর্নীতি ও শৈথিল্যের ঘটনা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া হবে না।

আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক অতিরিক্ত সচিব মাহবুব হোসেন সাংবাদিকদের জানান, মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষে ২০২০ সালের ১২ অক্টোবর শুরু হওয়া আশ্রয়ণ প্রকল্পের মাধ্যমে এ পর্যন্ত ১ লাখ ১৮ হাজার ৩৮০ জন ভূমিহীনকে দুই কক্ষের একটি ঘর বানিয়ে দেওয়া হয়েছে। ঘর নির্মাণে অনিয়মকারীদের শাস্তির আওতায় আনা হবে।

আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে তদন্ত কমিটি করা হয়েছে এবং অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে। তিনি জানান, প্রয়োজন অনুযায়ী দ্রুত সময়ে ঘর পুনর্নির্মাণ করে দেওয়া হবে। -আমাদেরসময়


সর্বশেষ সংবাদ

দেশ-বিদেশের টাটকা খবর আর অন্যান্য সংবাদপত্র পড়তে হলে CBNA24.com

সুন্দর সুন্দর ভিডিও দেখতে হলে প্লিজ আমাদের চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

আমাদের ফেসবুক পেজ   https://www.facebook.com/deshdiganta.cbna24 লাইক দিন এবং অভিমত জানান

সংবাদটি শেয়ার করুন