দেশের সংবাদ ফিচার্ড

রং-তুলির খেলায় প্রতিমাকে সাজাতে ব্যস্ত মন্ডপগুলোর মৃৎশিল্পীরা

কমলগঞ্জের পূজা মন্ডপগুলোতে চলছে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি

রং-তুলির খেলায় প্রতিমাকে সাজাতে ব্যস্ত মন্ডপগুলোর মৃৎশিল্পীরা

সজীব দেবরায়:: দরজায় কড়া নাড়ছে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গোৎসব। আগামী ৩০ সেপ্টেম্বর (শুক্রবার) মহাপঞ্চমীর মধ্য দিয়ে শুরু হবে শারদীয় উৎসব। সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় এই উৎসবকে ঘিরে মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জের সর্বত্র চলছে ব্যাপক প্রস্তুতি ও মন্ডপে মন্ডপে চলছে প্রতিমা তৈরির শেষ মুহূর্তের কাজ। ইতিমধ্যে উপজেলার অধিকাংশ পূজামন্ডপে শেষ হয়েছে প্রতিমা তৈরির কাজ। এখন রং তুলির আঁচড়ে সৌন্দর্য বর্ধণের কাজ চলছে। মাটির কাজ শেষ করে রং-তুলির খেলায় প্রতিমাকে সজ্জিত করতে ব্যস্ত সময় পাড় করছেন মন্ডপগুলোর মৃৎশিল্পীরা। মৃৎশিল্পীদের রাত দিনের কাজ আর পূজা কমিটির ব্যস্ততা অত্যাসন্ন দুর্গোৎসবের জানান দিচ্ছে।

উপজেলার বিভিন্ন পূজা মন্ডপ ঘুরে দেখা যায়, মাটির কাজ শেষ করে প্রতিটি প্রতিমাকে রঙ-তুলির নিপুণ আঁচড়ে রাঙাতে ব্যস্ত শিল্পীরা। চলছে সাজ-সজ্জার কাজও। দেবী দূর্গার সাথে সাজিয়ে তোলা হচ্ছে কার্তিক, গণেশ, লক্ষ্মী আর সরস্বতী দেবীকেও। যেন দম ফেলার ফুসরত নেই মৃৎশিল্পীদের। তবে এবারের পূজার প্রতিমায় ব্যতিক্রম আনার চেষ্টা করেছেন বেশ কয়েকটি পূজামান্ডপ। দব্যমূল্যের উর্দ্ধগতির কারণে বিগত বছরের তুলনায় এ বছর দূর্গোৎসবে দ্বিগুন ব্যয় বৃদ্ধি পাওয়ায় কিছুটা হিমশিম খেতে হচ্ছে আয়োজকদের। এরপরও থেমে নেই কোন আয়োজন। রকমারী আলোক সজ্জার বর্ণালী বাহারে সাজানো হবে মন্ডপ ও তার আশপাশ। হাতে আর কয়েকদিন বাকি। তাই রাত-দিন চলছে সাজ-সজ্জার কাজ।

কমলগঞ্জ উপজেলার মুন্সিবাজার ইউনিয়নের কুমারটেকি পালপাড়ার মৃৎশিল্পী অজিত রুদ্র পাল জানান, এ বছর করোনার প্রভাব কম থাকায় গত বছরের চেয়ে পূজা  মন্ডপের সংখ্যা বেড়েছে। এবার তিনি ১০টি দূর্গা প্রতিমা তৈরির কাজ করছেন। সবকটি প্রতিমার মাটির কাজ প্রায় শেষ। এখন রং তুলির কাজ চলছে। ইতিমধ্যে ৩টি প্রতিমার রঙের কাজ শেষ করেছেন। আগামী তিন চার দিনের মধ্যেই বাকি প্রতিমাগুলোর রঙের কাজ শেষ হয়ে যাবে বলে তিনি জানান।

এবার কমলগঞ্জ উপজেলায় ১৬০টি মন্ডপে পূজা আয়োজন করা হয়েছে। তার মধ্যে সার্বজনীন ১৪৩টি, পারিবারিক ১৭টি পূজোর আয়োজন হয়েছে। জানা যায়, কমলগঞ্জ উপজেলার ১টি পৌরসভা ও ৯টি ইউনিয়নে মোট ১৬০টি মন্ডপে পূজার আয়োজন করা হয়েছে। কমলগঞ্জ পৌর এলাকায় ০৮টি মন্ডপে পূজার আয়োজন করা হয়েছে।। ১নং রহিমপুর ইউনিয়নে ২০টি মন্ডপে, ০২নং পতনঊষার ইউনিয়নে ১৪টি মন্ডপে, ৩নং মুন্সিবাজার ইউনিয়নে ১৬টি মন্ডপে, ৪নং শমসেরনগর ইউনিয়নে ১৪টি মন্ডপে, ৫নং কমলগঞ্জ ইউনিয়নে ৮টি মন্ডপে, ৬নং আলীনগর ইউনিয়নে ২২টি মন্ডপে, ৭নং আদমপুর ইউনিয়নে ১৩টি মন্ডপে, ৮নং মাধবপুর ইউনিয়নে ১৯টি মন্ডপে, ৯নং ইসলামপুর ইউনিয়নে ০৯টি মন্ডপে পূজার আয়োজন করা হয়েছে। এছাড়া পারিবারিক ১৭টি পূজার আয়োজন করা হয়েছে।

ইতিমধ্যে উপজেলার ১৪৩ টি সার্বজনীন পূজামন্ডপের অনুকুলে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে ৫০০ কেজি করে জিআর এর চাল এর ডিও বিতরণ করা হয়েছে। এই বছর প্রশাসনের পক্ষ থেকে উপজেলার ৯টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভায় সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষায় সবধর্মের লোকজনদের নিয়ে কমিটি গঠন করা হয়েছে।

নারায়নপুর সার্বজনীন দূর্গাবাড়ির পূজা কমিটির সভাপতি স্বর্ণজ্যোতি পাল, গোপালনগর সার্বজনীন দূর্গাবাড়ির পূজা কমিটির সাধারণ সম্পাদক শেখর ঘোষ সন্তোষ ও মইদাইল সার্বজনীন দূর্গাবাড়ির পূজা কমিটির সভাপতি অমল চন্দ্র কর জানান, গত দুই বছর করোনার কারণে পূজার আয়োজন তেমন ঝাকঝমক ছিল না। এবছর পূজাকে ঘিরে উৎসবের আমেজ দেখা যাচ্ছে। পূজার দিনও ঘনিয়ে এসেছে তাই হিন্দু সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব দূর্গাপুজাকে কেন্দ্র করে মন্ডপে মন্ডপে চলছে ঝাকঝমক প্রস্তুতি। ইতিমধ্যে মন্ডপের সৌন্দর্য বর্ধণ ও সাজসজ্জার কাজও শুরু হয়ে গেছে।

মৌলভীবাজার জেলা জাতীয় হিন্দু মহাজোট এর নির্বাহী সভাপতি সুব্রত দেবরায় সঞ্জয় জানান, কমলগঞ্জ উপজেলাসহ জেলার পূজা মন্ডপগুলোতে সচেতনতামূলক প্রচার প্রচারণা চালানো হচ্ছে। পূজা সংশ্লিষ্ট নির্দেশনাগুলো প্রতিপালনের জন্য মন্ডপ কমিটিগুলোকে অনুরোধ করা হয়েছে। তাছাড়া ধর্মীয় নিয়ম নীতি পালন করে সাত্ত্বিকভাবে ও শান্তিপূর্ণভাবে উৎসব পালনের জন্য প্রতিটি পূজা মন্ডপ কমিটির প্রতি আহবান জানানো হয়েছে।

কমলগঞ্জ উপজেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক প্রণীত দেবনাথ জানান, প্রতিটি মন্ডপে কেন্দ্রীয় পূজা উদযাপন কমিটির ২১ দফা নির্দেশনা প্রতিপালনের জন্য অনুরোধ করা হয়েছে। গত বছর কমলগঞ্জ উপজেলার ১৫টি পূজামন্ডপে হামলার ঘটনা ঘটায় এবার প্রশাসন কঠোরভাবে অবস্থানে থেকে সার্বিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে যাচ্ছেন। প্রশাসনের সাথে সমন্বয় করে নিজস্ব স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী রাখার জন্য প্রতিটি মন্ডপ কমিটিকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

কমলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সিফাত উদ্দিন বলেন, শারদীয় দূর্গাপূজা উৎসবমুখর ও শান্তিপূর্ণভাবে উদযাপনের লক্ষে উপজেলার পূজা মন্ডপ কমিটির নেতৃবৃন্দদের নিয়ে বিশেষ আইন শৃঙ্খলা সভা করা হয়েছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে উপজেলার প্রতিটি স্থানে শান্তিপূর্ণভাবে শারদীয় দুর্গোৎসব পালনের জন্য সার্বিক পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে।

কমলগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ইয়ারদৌস হাসান বলেন, পূজা উপলক্ষে সকল ধরণের নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।


সর্বশেষ সংবাদ

দেশ-বিদেশের টাটকা খবর আর অন্যান্য সংবাদপত্র পড়তে হলে CBNA24.com

সুন্দর সুন্দর ভিডিও দেখতে হলে প্লিজ আমাদের চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

আমাদের ফেসবুক পেজ   https://www.facebook.com/deshdiganta.cbna24 লাইক দিন এবং অভিমত জানান

সংবাদটি শেয়ার করুন