ফিচার্ড লেখালেখি

রম্য রচনা ।।  স্বপ্ন মঙ্গলের কথা ।।।। বায়াজিদ গালিব

রম্য রচনা ।।  স্বপ্ন মঙ্গলের কথা ।।।। বায়াজিদ গালিব
 
আমাকে এক রাজদরবারে উপস্থিত করা হয়েছে। সেখানে বেশ কিছু লোক। আমাকে কেন নিয়ে আসা হয়েছে বুঝতে পারছি না। দেখলাম একজনের বিচার হবে তার হাত পা বাধা অবস্থায় রাজার সামনে ফেলে রাখা হয়েছে। একজন প্রহরী বেল বাজাচ্ছে। ক্রিং ক্রিং শব্দে অনবরত বেল বেজেই চলছে। তার কলিং বেল বাজানোতে সবাই বিরক্ত, এমনকি রাজা মশায়ও, তিনি ইশারায় কি যেন বলার চেষ্টা করছেন কিন্তু লোকটি অনবরত কলিং বেল বাজিয়েই চলছে। ঘুম হালকা হয়ে গেলো তখনও ক্রিং ক্রিং শব্দ হচ্ছে। সম্পূর্ণ ঘুম ভেঙে গেলে বুঝলাম আমার মুঠো ফোন বাজছে। রাতের শেষ প্রান্তে ঘড়িতে তখন ৩ টা। এতো রাতে কে আবার ফোন করলো। ফোন ধরার আগেই কেটে গেলো। দেখলাম বাংলাদেশ থেকে। কিছুটা দুশ্চিন্তা হলেও ভাবলাম যে ফোন করেছে হয়তো তার সময় জ্ঞান নেই। দু দেশের ঘড়ির কাটার ব্যবধান সম্পর্কে কোনো ধারণা নেই। শেষ রাতের স্বপ্ন না কি সত্যি হয়। হা সত্যিই তো হলো টেলিফোনেই ক্রিংক্রিং শব্দের সাথে মিল রেখেই স্বপ্ন দেখছিলাম। সাপ্তাহিক ছুটির দিন একটু আরাম করে ঘুমাই অন্তত সকাল ন’ টা নাগাদ। এমন অদ্ভুত স্বপ্নের মানেও বুঝলাম না। অনেক সময় হালকা ঘুমে বাস্তবে চলমান কোনো ঘটনাও মানুষ স্বপ্নে দেখে। ভাবলাম তেমন কিছু হবে। 
 
 এমন স্বপ্নের একটা কৌতুক পড়েছিলাম। কৌতুকটি আমার নিজের মত করেই বর্ণনা করছি। এক মেয়ে, এক ছেলেকে ভালোবাসতো একতরফা ভাবে। ছেলেটি জানতো না। মেয়েটি তাকে নিয়ে শয়নে স্বপনে জাগরনে সব সময় কল্পনার স্বর্গ রাজ্যে বাস করে। একদিন সে স্বপ্ন দেখলো, ছেলেটি একগুচ্ছ লাল গোলাপ হাতে তাকে চিৎকার করে বলছে, আই লাভ ইউ, আই লাভ ইউ। মেয়েটি খুব একটু বিব্রত, সে কেন এতো চিৎকার করে আই লাভ ইউ বলছে ? আশেপাশের লোকজন জেনে গেলে তো লজ্জার ব্যাপার। কিন্তু তার আই লাভ ইউ কিছুতেই থামাতে পারছে না। তারপরও তার খুব ভালো লাগছিলো। সবচেয়ে শক্তিশালী কথা আই লাভ ইউ, ভালো না লেগে উপায় আছে ! হালকা হয়ে গেলো। তার পরও সে শুনতে পায় আই লাভ ইউ। ঘুম সম্পূর্ণ ভেঙে যাবার পর শুনলো ফেরিওয়ালা গলা ছেড়ে চিৎকার করছে, আই লেবু, আই লেবু। এমন স্বপ্নে কার না মেজাজ খারাপ হবে। সুখ স্বপ্নে এক ফোটা লেবু। 
 
 আমার স্বপ্ন হৃদয় ঘটিত না হলেও অনাকাঙ্খিত ঘুমের ব্যাঘাতে মেজাজ খারাপ হয়ে গেলো। আবার ঘুমাতে চেষ্টা করলাম। তন্দ্রার মত এসেছিলো আবার ফোন বেজে উঠলো। খুবই বিরক্ত মাখা কণ্ঠে বললাম, হ্যালো। ওপাশ থেকে পাশ থেকে অপিরিচিত এক কণ্ঠ, হ্যালো ! আমি ঢাকা থেকে বলছি, আমি যুগান্তর পত্রিকার একজন রিপোর্টার। আপনার একটা ইন্টারভিউ করতে চাই। আমি অবাক হয়ে গেলাম, বললাম, ভাই আপনি ভুল নম্বরে ফোন করেছেন আমি কোনো বশিষ্ট ব্যক্তি নই যে আমার সাক্ষাৎকার নিতে হবে। বলেই ফোন কেটে দিলাম। আমার ফোনে যুগান্তর নাম সেভ করে রাখলাম কারণ পরবর্তীতে ফোন আসলে বুঝতে পারবো কে ফোন করেছে। তারপর দুই তিন দিন আর কোনো খবর নেই। এর পর আবার সেই নম্বর থেকে ফোন বেজে উঠলো আমি কেটে দিলাম। কয়েকবার কাটার পর মনে হলো, কথা বলেই দেখি না কেন ফোন করেছে কি বলতে চায়। এর কয়েকদিন পর আবার ফোন, বললাম, হ্যালো ! ওপাশ থেকে বললো, বন্ধু আমি তো হেলেই আছি তোর সাক্ষাৎকার নেবার জন্য। আমি বললাম, কে ? বললো আমার নাম ডেভিড, তুই কি জ্ঞানী বলছিস ? আমি বললাম আমার নাম তো জ্ঞানী না। বললো, দোস্ত যাহাই চাল ভাজা তাহাই মুড়ি। মনে করে দ্যাখ তোরে জ্ঞানী বলে কিডা ডাকতো ? হঠাৎ মনে পড়লো ডেভিড যে আমাকে জ্ঞানী বলে ডাকতো। জ্ঞানী বলার কারণ আমি ওই বয়সে সৃষ্টি রহস্য নিয়ে ভাবতাম এবং ডেভিডের সাথে এ নিয়ে কথা বলতাম। সে তখন থেকেই আমাকে জ্ঞানী বলতো। পাবনা আর এম একাডেমিতে আমার সহপাঠী ডেভিড। ওর পুরো নাম ডেভিড রোজারিও। পরবর্তীতে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ থেকে ডাক্তারি পাশ করেছিল। বললাম, আরে বন্ধু কেমন আছিস, ডাক্তারী পেশা ছেড়ে সাংবাদিকতা শুরু করলি কবে। বললো অরে নাহ, আমি তোর সাথে দুষ্টামী করছিলাম, দেখতে চেয়েছিলাম সাংবাদিক শুনে তোর প্রতিক্রিয়া কি হয়। আমি বললাম, বাদ দে । বল কেমন আছিস ? তা কি মনে করে এতদিন পর ফোন করলি ? ডেভিড একটু রাগ হয়েই বললো, আমাকে না বলেই ক্যানাডা চলে গেলি, শুনলাম বাংলাদেশেও এসেছিলি, তাও আমার কথা মনে করলি না। আমি একটু অপ্রস্তুত। সে বললো, দেখলাম তুই লেখালিখি করছিস। তোর দুটি বই পড়লাম ভালো লাগলো। আমার মনে একটা প্রশ্ন রয়েই গেলো। আমি বললাম, কি প্রশ্ন বন্ধু। সে বললো, ধীরে বন্ধু ধীরে, আজই তো আর কথা শেষ হচ্ছে না। বলবো, অন্য একদিন বলবো। ফোন নম্বর যখন জোগাড় করেই ফেলেছি যোগাযোগ তো আর বন্ধ করতে পারবি না। ভালো থাকিস পরে কথা হবে। 
 
 তখনকার মতো আমাদের কথা শেষ হলেও ডেভিড আমাকে টেনে নিয়ে গেলো শৈশবের সোনালী দিনগুলিতে। ওরা পাবনা রাধানগরে থাকতো। আমাদের পাড়ায়। আমরা তখন পঞ্চম শ্রেণীর ছাত্র। ওর সাথে স্কুলে আমাদের একবার প্রচন্ড ঝগড়া হয়েছিল আমার অন্যান্য ঘনিষ্ঠ বন্ধুরদের সাথে হাতাহাতিও হয়েছিলো। ডেভিডের কান্না দেখে আমার খুব মায়া হয়েছিলো, আমি অন্যান্য বন্ধুদের বিশেষ অনুরোধ করেছিলাম মারামারি বন্ধ করতে। তারপর থেকে কেমন করে যেন আমরা খুবই ঘনিষ্ঠ বন্ধু হয়ে গিয়েছিলাম। ওর ঠাকুরদা সহ অন্যান্য আত্মীয় সহ সবাই হিন্দু। বসবাস ছিল দিনাজপুর। ওর বাবাকে ভালো স্কুলে পড়াবার জন্য খ্রিস্টান মিশনারি স্কুলে ভর্তি করেন তার ঠাকুরদা। ওদের সংস্পর্শে এসে খ্রিস্টান ধর্ম গ্রহণ করেন ডেভিডের বাবা । ডেভিডের ঠাকুরদা ওর বাবাকে ত্যাজ্য পুত্র ঘোষণা করেন। বাবার কঠিন জীবন শুরু হয়। পরবর্তীতে পাদ্রীর সহযোগিতায় পাবনা জজ কোর্টে ওকালতি শুরু করেন, এক খ্রিস্টান ব্যারিস্টারের সহকারী হিসেবে। তারপর তাকে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয় নি। ব্যারিস্টারের একমাত্র কন্যাকে বিয়ে করেন। শশুরের দেয়া বাড়ি পাবনার রাধানগরে এসে বসবাস শুরু করেন। এই ছিল ডেভিড পরিবারের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস। এখনো মনে পরে বড়দিনে ওদের বাসায় যেতাম। কি বর্ণাঢ্য আয়োজন ছিলো সেখানে। খ্রিষ্টমাস গাছ সুন্দর করে সাজানো হতো। তার নিচে প্যাকেটে কিছু উপহার। আমাকে অবাক করে একটি উপহার আমাকেও দেয়া হয়েছিলো, আমার সে কি আনন্দ। আমার আকর্ষণ ছিল মজাদার কেইক আর পেস্ট্রি। তার মা অনেক আদর করেই আমাকে ওগুলো খেতে দিতেন। দেখতাম ওদের একটি আলমারিতে সাজানো অনেক রঙের বোতল। আমার ধারণা ছিল ওগুলো বিভিন্ন রকমের শরবত। তাই পান করার ইচ্ছে মনে থেকেই যেত। আমি আমার মনের কথা ডেভিডকে বলেছিলাম। সে হেসেই খুন। বলেছিলো, শরবতই বটে তবে আমাদের জন্য না ওগুলো বড়দের শরবত। আমি ওর কথার আগামাথা কিছুই বুঝতাম না। শরবত তো শরবতই এর আবার বড়দের ছোটদের আছে না কি ! অনেক পরে বুঝেছিল বড়দের শরবত কি।
 
 রাধানগর মজুমদার একাডেমিতে মাত্র তিন বছর পড়েছি এর মধ্যেই ডেভিড আর আমি খুব ভালো বন্ধু হয়ে গিয়েছিলাম। আমি সে সময় লেখাপড়ার ব্যাপারে খুবই উদাসীন ছিলাম। সবচেয়ে আনন্দ পেতাম দ্রুত পঠনে। মূলত দ্রুত পঠনের উদ্যেশ্য ছিল ভাষার নৈপুণ্য অর্জনে পঠনের দক্ষতা বাড়ানো। তাছাড়া শুদ্ধ উচ্চারণ, স্বরের উঠানামা, আবেগ ইত্যাদির প্রতি লক্ষ্য রাখা। কিন্তু আমি মজা পেতাম অন্য কারণে তা হচ্ছে গল্প পড়া। গল্প পড়ে আমি খুব আনন্দ পেতাম। আরেকটা কারণ দ্রুত পঠনে কোনো পরীক্ষা ছিল না। পরীক্ষা না থাকার আনন্দ যে কোনো ছাত্রই এর মর্ম বুঝবে।
 
 তবে দুটি বিষয় আমার বেশি অনাগ্রহ ছিল। এক পাটিগণিতের অংক বিশেষ করে যখন একটি বাঁশে তেল মেখে বানরকে উঠানামা করানো হতো। কি দরকার ছিল বাঁশে তেল মাখানোর ! তেল মারবি তো মার জায়গামত যেখানে তেল মাখলে লাভ হবে। ইংরেজদের তেল মারতে মারতে অভ্যস্ত হবার কারণে, ইংরেজ যাবার পরও তেলমারার অভ্যেস যায় নি। তখন চিন্তা কাকে তেল মারা যায়? অনেক চিন্তা ভাবনা করে বের করা হলো বাঁশ হচ্ছে তেল মারার মোক্ষম স্থান। শুধু বাঁশে তেল মেখেও শান্তি পেলো না। তাই বানরকে পোষ মানিয়ে সেই বাঁশে উঠানামা করানো যথার্থ মনে হলো। বেচারা বানরকে কষ্ট দেবার কি দরকার ? জীবে প্রেম করে যেই জন, সেই জন সেবিছে ঈশ্বর। নাহ ! আমার মনে হয় বানরের ক্ষত্রে হবে জীবে দয়া করে যেই জন। কারণ বানরের সাথে প্রেম করা ঠিক হবে না। 
 
 পরের বিষয়টি ছিল বাংলা ব্যাকরণ। আমার মনে কেবলই প্রশ্ন, কেন আমি অকারণে ব্যাকরণ পড়বো ? সমাস , কারক ও বিভক্তি, সন্ধিবিচ্ছেদ! খুবই জটিল বিষয়। বাংলা ব্যাকরণের শিক্ষক ছিলেন পন্ডিত মহাশয় আমার জন্য সাক্ষাৎ যমদূত। তাঁর আন্তরিক চেষ্টা ছিলো কি ভাবে স্কুলের ছেলেদের পিটিয়ে মানুষ বানানো যায়। অবশ্য এ দায়ভার তার একার নয় সে শুধু শিশুদের পিতার কথা অক্ষরে অক্ষরে পালন করতেন। স্কুলে দেবার সময়কোনো কোনো কোনো অভিভাবক বলেই দিতেন, এই যে ছেলেকে দিয়ে গেলাম, লেখাপড়ায় অমনোযোগী হলে করা শাসন করতে হবে। মনে হয় অভিভাবকদের এমন বাণীই ছিল শিক্ষকদের জন্য ছাত্রকে পিটিয়ে মানুষ বানানোর সনদ। এতো বড় দায়িত্ব যখন কোনো কোনো পিতা শিক্ষকদের দেন তখন তা পালনে তাদের জন্য ফরজ হয়ে যায়। পন্ডিত মহাশয় যাকে বেশি স্নেহ করতেন তাকেই বেধড়ক পেটাতেন। এ ব্যাপারে বন্ধু সুকুমারের পিঠ ছিলো পন্ডিত মহাশয়ের বেত মারার মোক্ষম স্থান। আমি খুব বেশি স্নেহ পাই নি তাই বেত্রাঘাত আমার পিঠে তেমন পরে নি, পরিবর্তে নীল ডাউন হয়ে থাকা। পন্ডিত মহাশয় কখন কোন প্রশ্ন করে বসেন সে ভয়েই ভীত সন্ত্রস্ত থাকতাম বাংলা ব্যাকরণের ক্লাশে। ওই শিক্ষক মহোদয়কে নিয়ে প্রায়ই দুঃসপ্ন দেখতাম। ঘুম ভেঙে গেলে মনে মনে বলতাম, ওরে ব্যাকরণ তুই অকারণে কেন আমাকে জ্বালাতন করিস? আমার ব্যাকরণ ভীতি বা ব্যাকরণের মূর্খতা নিয়ে সবচেয়ে বেশি ঠাট্টা করতো এই বন্ধু ডেভিড। তারপরও সে আমার ভাল বন্ধু। আমার ব্যকরণ পান্ডিত্য যখন সবার কাছে ধরা পড়লো তখন বন্ধু ডেভিড আমাকে বললো, তুই এক দিক দিয়ে যেমন জ্ঞানী অন্য বিষয়ে বোকা তাই তোর নাম হয় উচিত জ্ঞানী বোকা। বাহ্ ! বেশ ভালো নাম। অবশ্য যারা বোকার স্বর্গরাজ্যে বাস করে তাদের মত জ্ঞানী বোকা কি আর আছে?   
 
 পরবর্তীতে যখন পাবনা রেসিডেন্সিয়াল মডেল স্কুলে ভর্তি হলাম, শুরু হলো আমার নতুন জীবন। আমাদের আমাদের বাংলা ব্যাকরণ পড়াতেন যিনি তাঁর বাংলা ব্যাকরণে অগাধ জ্ঞান। তাঁর পড়ানোর পদ্ধতি ছিল খুব ভালো। কঠিন বিষয়কে তিনি খুব সহজ ভাবে বুঝিয়ে দিতেন। আমার ব্যাকরণ ভীতি দূর হয়ে বাংলা ব্যাকরণের প্রতি আমার আগ্রহ বেড়ে গিয়েছিলো। মডেল স্কুলে পড়ার সময় ডেভিডের সাথে আর যোগাযোগ তেমন ছিল না। কারণ আমাদের বাধ্যতামূলক ছাত্রাবাসে থাকতে হতো। প্রতি চার মাসে দুই সপ্তাহের জন্য বাড়ি যেতাম, সে সময় তার সাথে দেখা হতো। তবে মনে মনে ওকে বলতে ইচ্ছে হতো বাংলা ব্যাকরণে আমার আগ্রহ ও কিছু উন্নতির কথা। তাকে আর সে কথা জানানো হয় নি। ডেভিডের সাথে দেখা কম হলেও যোগাযোগ ছিল। এস এস সি পরীক্ষার পর আমি যখন ঢাকা চলে গেলাম তখন পাঁচ ছয় বছর যোগাযোগ একেবারেই ছিল সে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ থেকে এমবিবিএস করেছে। আমি যখন ঢাকায় কর্মজীবন পালন করছিলাম তখন হঠাৎ ডেভিডের সাক্ষাৎ পেয়েছিলাম। তখন তাঁর পসার খুব ভালো। তার অনেক পরিবর্তন হলেও আমার সাথে দোস্তি বাল্যকালের মতই ছিল। মানুষের অনেক বন্ধু থাকলেও দুএকজন বিশেষ বন্ধু থাকে। আমার সেই বিশেষ বন্ধুদের মধ্যে ডেভিড অন্যতম। 
 
 অনেকদিন পর ডেভিডের সাথে যোগাযোগ হলো তাও স্বপ্নের মাধ্যমে। তার সাথে কি আর যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হতে পারে? আমি এবং সে নিয়মিত যোগাযোগ রেখেই চলেছি। আমার সেদিনের স্বপ্ন ছিল মঙ্গলময়, তাই এ স্বপ্নকে স্বপ্নমঙ্গল বলতেই পারি। রবীন্দ্রনাথের কবিতার মতই “স্বপ্ন মঙ্গলের কথা অমৃত সমান”। স্বপ্নে পাওয়া ওষুধ বা মন্ত্রের মতোই ডেভিড আমার স্বপ্নে ফিরে পাওয়া বন্ধু। ডেভিড একদিন ফোন করে আমাকে বললো, বন্ধু তোকে একটা প্রশ্ন করতে চাই। বললাম, সে তো প্রায় প্রতিবারই বলিস কিন্তু প্রশ্ন তো করছিস না। সে বললো, এ বয়সে আর খোঁচাতে ভালো লাগে না বন্ধু, তবুও কৌতূহল থেকে বলছি। তুই তো বাংলা ব্যাকরণে যাচ্ছেতাই ছিলি, তার জন্য পন্ডিত মহাশয়ের বেত যথেষ্ট পড়েছে তোর হাতে-পিঠে । আমার প্রশ্ন বাংলায় দুর্বল একজন মানুষের পক্ষে এমন সুন্দর লেখা আশা করা যায় না। তোর লেখার মান দেখে মনে হয় না যে তুই লিখেছিস। শুনেছি বাংলাদেশের কোনো এক প্রেসিডেন্টের কবিতা অন্য কেউ লিখে দিতো, তোর ব্যাপারটিও কি তেমন?
 
          
-বায়াজিদ গালিব, ক্যালগেরি, ক্যানাডা।
সংবাদটি শেয়ার করুন