ফিচার্ড বাংলাদেশ রাইটার্স ক্লাব কানাডা

শব্দগুচ্ছ। বাংলাদেশ রাইটার্স ক্লাব, কানাডা জানুয়ারী ২০২৩

মুহম্মদ নূরুল হুদা

পরিচিতি-সত্তর দশকের একজন বাংলাদেশী প্রথিতযশা কবি। তিনি জাতিসত্তার কবি হিসেবেও পরিচিত। একই সঙ্গে তিনি একজন ঔপন্যাসিক ও সাহিত্য-সমালোচক।

 

জোড়াহীনজোড়া

মুনূহু
যদি তুমি
আলোর কোরক
ঘরে ঘরে ডানার সবক
চূড়া থেকে
আগাগোড়া শ্বাস
নীলিমায় দুর্বাঘাসে
আপন নিবাস

আপাদমস্তক ডাক কুহু
চর থেকে চরাচরে রুহু

দেহের সীমানাডানা ওড়ে
সেলাইবিহীন নক্শী-
কাথা ফোঁড়ে ফোঁড়ে

দেহের অধর ছেড়ে
মাটির অধর
আকাশধরণীমাতা
সোঁদা প্রাণঘর

তারপর শ্বাসে শ্বাসে শ্বাস
তারপর মূর্তামূর্ত মুহূর্তনিবাস

বাজে ঝুমঝুিমি
আমি আর তুমি
জোড়াহীন চিরজোড়া

আনত আভূমি
১৪.০১.২০২৩


মৌ মধুবন্তী

পরিচিতি- কানাডার টরন্টোবাসী মৌ মধুবন্তী বর্তমানে বাংলাদেশ রাইটার্স ক্লাব কানাডা’র সভাপতির দায়িত্বে আছেন। একজন কবি, আবৃত্তিশিল্পী, সফল সংগঠক ও সঞ্চালক। আন্তর্জাতিকভাবে সুপরিচিত একজন বাংলা ভাষার নিবেদিতপ্রাণ কর্মী। ললিতকণ্ঠ আবৃত্তি সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা। তার মোট ১৩ট কাব্যগ্রন্থ, একট গল্পগ্রন্থ। তিনি বহু আন্তর্জাতিক পুরস্কার ও এওয়ার্ড পেয়েছেন তার লেখার জন্য। তার রচিত কবিতার বই আছে তিন ভাষায়। এছাড়াও বহু ভাষায় তার কবিতা অবুবাদিত হচ্ছে।

ছিন্ন

কে আছো?
উত্তর বলাকা হাঁক দিয়ে ওঠে।
ঝাঁকে ঝাঁকে কই ভেসে যায়-
মনে যখন জোয়ার আসে।
কে কুড়াবি আয়- ঝাঁকা নিয়ে আয় মাঠে।
মাঠে যাই —ময়দানের মত চাতাল বিছানো রয়েছে
কইমাছ ভেসে ভেসে যায় দু’হাতের ভেতর থেকে।
বিধাতা এসে                                হাতচেপে ধরে।
আমার দখলে এই মন
এই নৌকার মাঝি আমি। কি আর বলি?
সব ছেড়ে ছুঁড়ে, কাদামাটি গায়ে মেখে
হাঁটা দেই মন্দারপুরের দিকে।
ইচ্ছেরা দিনে দিনে এমন করে কোদাল চেপে ধরে।
চাপা শ্বাস বুকে নিয়ে, শুয়ে পড়ি ঘাসে
অর্ধচন্দ্র সুখ এসে নিরিবিলি
ঘিরে ধরে দেহটারে-কই মাছ
হেঁটে যায়—দেহের ভেতরে

টরন্টো,কানাডা,পৃথিবী
জুলাই ৬ ২০১২


আলী আজগর খোকন

 

পরিচিতি-সঙ্গীতজ্ঞ, লেখক, সমাজসেবক ও সংগঠক আলী আজগর খোকন নবম শ্রেণিতে প্রথম কবিতা ও দশম শ্রেণিতে পড়ার সময় প্রথম ছোটগল্প লেখেন, যা স্কুল ম্যাগাজিনে প্রকাশিত হয়। ২০১৮ সাল থেকে নিয়মিত কবিতা, গল্প ও প্রবন্ধ লিখছেন,  যা বিভিন্ন ম্যাগাজিন ও পত্রিকায় ছাপা হয়েছে। তিনি বিক্রমপুর এসোসিয়েশন অফ কানাডা’র সভাপতি এবং বাংলাদেশ রাইটার্স ক্লাব কানাডা’র সচিব। প্রকাশিত গ্রন্থঃ যৌথ কাব্যগ্রন্থ ‘শত কবির দ্রোহের কবিতা’।

কিছু কিছু কথা

কিছু কিছু কথা
কিছু কিছু কথা
বুকে লাগে ব্যাথা
কিছু কিছু      ক্ষণ
মনে হয় সারাক্ষণ
মনে মনে খুজিঁ
এই বঝিু তুমি।
ফলে ফলে মাছি
তুমি-আমি কাছাকাছি
ফুলে ফুলে ভোমরা
মিশে আছি আমরা।
হাতে হাত ধরে
ছুটে যাই সাগরে
ঠোঁটে ঠোঁট চেপে
ডুবে যাই নোনা জলে।

১৮ অক্টোবর ২০২০
নিউমার্কেট, অন্টারিও, কানাডা।


 

শানা হক

পরিচিতি-আমি ডক্টর আব্দুল হাই সুমন। শানা হক আমার ছদ্দ নাম। পেশায় কৃষি বিজ্ঞানী এবং বাংলাদেশে সরকারী উর্ধতন ক্যাডার কর্মকর্তা পদে মৃত্তিকা ভবন খামার বাড়ীতে কর্মরত ছিলাম। পেশাভিত্তিক লেখালেখীর পাশাপাশি সাহিত্য নিয়েও লেখতাম। বর্তমানে টরেন্টোর বিভিন্ন সামাজিক, রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও পেশাজীবি সংগঠনের সাথে কাজ করছি। আমি কানাডার প্রোভিন্সিয়ার সরকারের হরটিকালচারাল গবেষনা পেশায় চাকরি করছি। দাম্পত্য জীবনে দুই পুত্র ও এক কন্যা সন্তানের জনক। ছেলেরা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত এবং মেয়ে স্কুলে পড়ে। সহধর্মিনী সাদিয়া জেসরিন স্কুলে কর্মরত।

আমার বাংলাদেশ

নায়েগ্রা দেখেছি আরও কত ভিন্ন,
আইফেল টাওয়ারের সুউচ্চ চিহ্ন।
চায়নার ওয়ালে হেঁটেছি খেয়ালে,
আজব লেগেছে পিসার হেলানো দেয়ালে।
মিশরের পিরামিডে শতক্ষতের চিহ্ন,
বেবিলনের বাগান যেন পুরাপুরী ভিন্ন।
লিবার্টির হাতে সেই মশালের অগ্নি,
তাজমহলে শায়িত মমতাজ ভগ্নি।
হেরিলাম কত কি? কত রূপ হাল,
দিনে দিনে শেষ হলো জীবনের কাল।
সংস্কৃতি জ্ঞান বিজ্ঞান ঐতিহ্যে দেশ ছাড়িয়া,
বিশ্বজুড়ে খ্যাতি তোমার আছে বিশ্ব জুড়িয়া।
জগৎ খ্যাত গুণীজনের জন্মভূমি তুমি,
ধর্ম-বর্ণ নেই ভেদাভেদ অপূর্ব এই জমি।
তুমি আজও এই অন্তরে স্বপ্নের ভেলা,
সুখে দুঃখে সাথী তুমি, আমার জীবন মেলা।
তুমি আছো অন্তরে সুখের রেশ,
যার তুলনা তুমিই! আমার বাংলাদেশ !!


মোয়াজ্জেম খান মনসুর

পরিচিতি-মোয়াজ্জেম খান মনসুর। টরন্টো প্রবাসী কবি গল্পকার কলাম লেখক। প্রবাস জীবনে গত পঁচিশ  বছর ধরে লেখালেখি করে যাচ্ছেন। নব্বই দশকের মাঝামাঝি মন্ট্রিয়ালের প্রবাস বাংলা পত্রিকায় লেখালেখির মাধ্যমে লেখালেখির জগতে প্রবেশ। টরন্টোর দেশে বিদেশে,দেশের ডাক, সময়, বাংলা পত্রিকা,রিপোর্টার এবং নিউইর্কের ঠিকানা,প্রবাসী, বাংগালী পত্রিকায়  লেখালেখি করেছেন। প্রবাস জীবনের প্রচন্ড ব্যস্ততার ভীড় ঠেলে- ঠেলে বর্তমানে টরন্টো থেকে প্রকাশিত মাসিক ম্যাগাজিন প্রবাসী কন্ঠে’র  একজন নিয়মিত কলাম লেখক হিসেবে লিখে যাচ্ছেন গবেষনা মুলক  (আদিবাসী কানাডা) এবং সমকালীন জীবন ধর্মী প্রবন্ধ। প্রকাশিত গ্রস্থ দুটি।

নব কালের কন্ঠ

নাম আব্দুল মান্নান। বাড়ী দিনাজপুর।

তার সাথে কথা হচ্ছিল গত সন্ধ্যায় । গতকাল মধ্যরাতে পাড়ার ছোটবেলার বন্ধু রেজোয়ান মেসেঞ্জারে লিখে পাঠালো তার সাথে এককাপ কফি খেতেই হবে । আমি লিখে পাঠায়েছিলাম শনিবার সন্ধ্যায় আমার প্রচন্ড ব্যস্ত থাকার সম্ভাবনা রয়েছে তবে যদি সময় বের করতে পারি অবশ্যই  দেখা হবে। যাক, সন্ধ্যায় সময় পাওয়া গেল । নিউমার্কেটে তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে  আধঘন্টা আড্ডা দিয়ে কিছু কিছু টুকটাক কেনাকাটা সেরে  একটা রিক্সা নিয়ে বাড়ী ফিরি।ইচ্ছে ছিল হেঁটে হেঁটে বাড়ী ফিরব কিন্তু রাস্তায়  প্রচন্ড ভীড় আর অসহনীয় ধুলার কথা ভেবে আর হেঁটে আসার সাহস করলাম না।

রিক্সা থেকে নেমে মনে হল তার সাথে কিছুক্ষন গল্প করি । জিজ্ঞাস করি আপনার কাজ- কর্ম কেমন চলছে ।সে উত্তর দিল ভাল । জিজ্ঞাস করলাম আপনি কতক্ষন কাজ করেন।এক বেলা না দু’বেলা । সে বলল এক বেলা । সারাদিনের আয় হয় চার-পাঁচশ  টাকা।আমি বললাম বাহ ভালইতো। সে বলল হ্যাঁ স্যার আমি ভাল আছি।  এর মাঝে আমার গিন্নীর ফোন আসে কেনেডা থেকে ,আমি হাই হ্যালো  বলে তাকে বলি আমি তোমাকে পরে ফোন করছি। এর পর জিজ্ঞাস করলাম দেশে কে কে আছে?

সে বলে স্যার আমার জীবনটা খুব দুঃখের । আমি বললাম সেটা কেমন ?

আব্দুল মন্নান বলে ছোটবেলায় তার বাবা মা’র ছাড়াছাড়ি হয়ে যায় সে তার নানার বাড়ীতে মানুষ হয় । গ্রামে বিভিন্ন কাজ কর্ম করে তার জীবিকা নির্বাহ করে । সেই সাথে কিছু কিছু করে সঞ্চয়ও করে । নানার দেওয়া অল্প একটু জায়গায় একটা ঘর তুলে সে বাস করে । এর মধ্যে তার নানা হজ্জে যাবে টাকার টানাটানি সে কারনে কিছু জমি বিক্রি করবে। সে তার নানার এক বন্ধুকে দিয়ে প্রস্তাব দিল সে তিন শতাংশ জমি কিনতে আগ্রহী এবং ন্যায্য দাম দেবে । তখন তার নানা বলল সে দুইশতাংশ জমি তার কাছে বিক্রি করবে । আব্দুল মান্নান তাতেই রাজী হল। জমি রেজিস্ট্রি করার দিন রেজেস্ট্রি অফিসে গিয়ে দেখে রেজিস্ট্রার তার নানার বন্ধু এবং তাকে খুব আদর করত। তখন রেজিস্ট্রার বলে দুইশতাংশ জমিতো বিক্রি হবে না করলে তিন শতাংশ বিক্রি করতে হবে।তখন তার নানা তিন শতাংশ জমি তার কাছে বিক্রি করল। তার পর সে ঢাকায় এসে রিক্সা চালিয়ে উপার্জন করতে শুরু করে ।পরে ধীরে ধীরে সঞ্চিত আয় দিয়ে দুই কাঠা জমি কিনল। আব্দুল মান্নানের এক ছেলে এক মেয়ে ।ছেলেটি বড়,  ক্লাস টেনে পড়ে । তাকে সে কোচিংয়ে  পড়ায় ।দেখতে ভাল তার চেয়ে অনেক স্বাস্থ্যবান এবং উঁচা লম্বায় বেশ। মেয়েটাকেও স্কুলে দিয়েছে । তার আশা, তার ছেলে তার মতন আর রিক্সা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করবে না। একটা ভাল কাজকর্ম করবে।

আমাকে বলল, আমার জন্য আপনি দুয়া করবেন ।আমি বললা্‌ম, আপনার ছেলের জন্য আমার আন্তরিক শুভ কামনা রইল । আমি তার হাতে কিছু টাকা হাতে দিতে চাইলাম সে কিছুতেই নেবে না ।আমি জোর করেই তার পকেটে কিছু টাকা গুঁজে দিলাম । সে অশ্রুসজল চোখে আমাকে বলল, স্যার আমার জন্য দুয়া করবেন।

গত বিশ বছরে বাংলাদেশের সামাজিক চিত্র ধীরে ধীরে বদলে যাচ্ছে । সমাজের নিন্ম শ্রেনীর আসহায় অবহেলিত, নির্যাতিত, পরিশ্রমী মানুষেরা তাদের সন্তানদের স্কুল কলেজে পড়িয়ে নতুন স্বপ্ন বুনুন করে চলেছে । পশ্চিম বিশ্বের মতন শ্রেনীহীন সমাজের পত্তন করছে ধীরে-ধীরে । আগামীতে তারা আমাদের মতন সমাজের সামনের কাতারের চেয়ারে বসে তাদের হিস্যা ভাগ করে নেবে। গরীব দরিদ্র ঘরে জন্ম নেওয়া যে কোন জন্মান্তর অভিশাপ নয় সেটা আমাদের বুক চেতিয়ে জানান দেবে । পৃথিবীর বহু দেশে গত শতাব্দির  শ্রেনী বৈষম্যের শেকড় যেমন উপড়ে ফেলা হয়েছে তারাও অদুর ভবিষ্যতে বঙ্গদেশে শ্রেনীহীন সমাজ গড়ে তুলবে । তাদের পায়ের আওয়াজ পাওয়া যায়। বাতাসে ভেসে আসে সমাজ বিনির্মানের বাঁধ ভাংগা জোয়ারের আওয়াজ ।

কৃষক-শ্রমিক-জেলে-তাঁতী-কামার-কুমার একদিন বুঝে নেবে তাদের প্রাপ্য অধিকার। জয় হোক এই বাংলার হাজার লক্ষ নিযুত কোটি বছর।

মোয়াজ্জেম খান মনসুর
২৪শে ফেব্রয়ারী, ২০১৮
রাত ১১ঃ৫৪
নতুন পল্টন, আজিমপুর
ঢাকা ,বাংলাদেশ


হোসনে  আরা জেমী

নদীর মতো একা

নদীর মতো একা বয়ে যায় আয়াস
আমিতো চাইনি অবহেলা
চেয়েছি ভালবাসা, সুখ
মনে মনে খুঁজেছি কত দিন, কত কত রাত।
মনে পড়ে একসাথে পথ চলা, ক্যান্টিন, ক্যাম্পাস, নদীতীর।
মনে পড়ে তোমার আদরে সিক্ত দুপুর, হাওয়ায় উড়া,
মনে পড়ে বারান্দায় বসে পুকুরের জলে মাছেদের খেলা দেখা
শুধু মনে পড়ে না দূরে ঠেলে দেওয়া
খুঁজেছি কতদিন এখানে সেখানে মনে মনে
হঠাৎ হয়েছে দেখা, এক ঝলক
বলতে চেয়েছি বহুবার, ভালোবাসি তোমায়…
বেঁচেছি কয়েক যুগ তোমাকে ছাড়া
পার হয়েছি গ্রাম, গঞ্জ, শহর, দেশ, মহাদেশ
সাঁতরে পার হয়েছি নদী, সাগর
ঠিক ঠিক সাঁতার না দিলেও পার হয়েছি সাগর মহাসাগর
পাড় খুঁজে জায়গা করে নিয়েছি।

তোমাকে রেখেছি যেখানে
সেখানে বিপুল কাঁটা অপ্রাপ্তির
ফিনকি দিয়ে বেরোতে চায় অনল
মুছে দিয়েছি টিসু পেপারে,
ফেলে দিয়েছি ডাস্টবিনে।

যাপিত জীবনের ছন্দ কেটে গেছে
তবুও বলিনি তোমায় কষ্টে  আছি
তোমাকে কিছু বলিনি,
দাবী আদায়ে করিনি অনশণ,

তোমার কাছে চিরকাল মূল্যহীন
হয়ে যাওয়ার আগেই
জানলাম তুমি অনেকটা পথে হেঁটে
চলে গেছো দূরে
ধরা ছোঁয়ার  বাইরে অনন্তলোকে।।
_______________________

জেমী/টরন্টো/০৯ জানুয়ারি ২০২৩


তৌহিদা হানফি মাহমুদ

 

পরিচিতি-টরন্টো প্রবাসী । ভালোবাসি ভ্রমন করতে, বই পড়তে । পেন্সিল ও পেন্সিল কানাডার সাথে জড়িত আছি।চেষ্টা করি লিখতে, হয় কিনা আপনারা বলবেন । তিন কন্যার জননী।নতুন প্রজন্ম যাতে বই পড়ার অভ্যাস করে ও নিজের প্রতিভা বিকাশ করতে পারে তাই পেন্সিল প্ল্যাটফর্ম নিয়ে এগিয়ে যাবার চেষ্টা করছি । পেন্সিল পাবলিকেশনসেও জড়িত আছি। বাংলা সাহিত্য ও সংস্কৃতিকে হৃদয়ে ধারণ করে সবাইকে নিয়ে এগিয়ে যেতে চাই । বেশ কিছু কবিতা পেন্সিল ম্যাগাজিন ও সংকলনে প্রকাশ পেয়েছে। বিভিন্ন সোস্যাল ওয়ার্কের সাথে আছি ,শুধু একটু যদি কাজে আসতে পারি কারো জীবনকে সুন্দর করে গড়তে তোলার।

অলৌকিক দ্যুতি চাই

একটি করে দিন চলে যায়
হারানো কেউ ঘরে ফেরে,
কেউবা নতুন করে পথ হারায়–
কেউ প্রেমে পড়ে, কেউ প্রেম করে জিতে হারে
আমারও অপেক্ষা, এমন কিছুর আশায়

সন্ধ্যা নেমে আসে,
ফেরার তাগিদ বাড়ে,সব পাখি ঘরে ফেরে-
আমার আর ফেরা হয় না; কারণ
আমার গন্তব্য অচেনা,
হারিয়ে ফেলা জীবন এবং ফেলে আসা সৃষ্টি নিয়ে
পাখি হয়ে উড়ি, ঘুরি মানব দেহে বন্দি হয়ে।

 

দ্বি খণ্ডিত আমি

আবেগের প্রশ্রয়ে প্রশান্তি পাই
চলমান জীবন আয়ত্বে নেই- আমার।
সৃষ্টির নেশায় ফেরারি মন অতৃপ্ত
একটি অলৌকিক দ্যুতি চাই
আর্তনাদ করে চাই, শুধু একটি চমৎকার প্রয়োজন।

তবে কি ফিরে যেতে চাই-
আমি কী হেরে যাওয়া কবি?
নাকি, নতুন সৃষ্টির আগে অশান্ত আত্মার ছবি ..

ঢাকা
৬/০১/২০২৩


বিদ্যুৎ সরকার-

নোঙর

সে সময় ঢাকা থেকে শ্রীনগর যেতে  একমাত্র নদী পথেই তা সম্ভব হতো এবং লঞ্চ ছিল দ্রুততম মাধ্যম।ঢাকা – শ্রীনগর রুটের হরিরামপুরা লঞ্চ ঘাট পুরনো ঘাটগুলোর মধ্যে একটি। শুরুতে এর অবস্থান মজবুত ছিল, নদীর ভাংগনে এর অবস্থান ও আকৃতির আমূল পরিবর্তন ঘটেছে।বাঁধানো ঘাট,যাত্রীদের উঠা-নামার সুবন্দোবস্ত ছিল শুরুতে, এখন শুধুই স্মৃতি। তখনকার হরিরাম চন্দ্র জমিদারের আমলেই লঞ্চ ঘাট ও অন্যান্য জন কল্যাণমূলক কাজগুলো সাধিত হয়েছে।হরিরাম চন্দ্র ছিলেন একজন জনদরদী, গরীবের একান্ত বন্ধু। তাই, জনগণের দাবীর মুখে এ অঞ্চল ও লঞ্চ ঘাটের নামাকরন হয় তারই নামানুসারে।কিন্তু সময়ের সাথে সাথে অন্যান্য সব কিছুর মতো হরিরামপুর গ্রামেরও পরিবর্তন আসে।সর্বত্রই জীর্ণতার ছাপ পড়তে থাকে হরিরাম চন্দ্রের মৃত্যুর পর থেকেই। তার মৃত্যুর প্রায় দেড় যুগের ভিতর পরিবারের অনেকেই স্বর্গবাসী হয়েছেন।আর বাকী যারা ছিলেন অভাব অনটনের কারনে ওপার বাংলায় পাড়ি দিয়েছেন। জীর্ণশীর্ণ দ্বীতল বাড়িটিই শুধু কালের সাক্ষী হয়ে এখনও কোনভাবে দাঁড়িয়ে আছে।চুন-সুরকী,ইট-পলেস্তারা খসে পড়া দেয়ালে আগাছা পরগাছায় আচ্ছাদিত হতে হতে এক সময় ঢাকা পড়ে যায় হরিরাম চন্দ্রের আস্ত দোতলা দালান। জন-মানবশূন্য পরিত্যক্ত একটি দালান হিসেবে অনেকদিন ধরে দাঁড়িয়ে।পরবর্তীতে ওখানেই নিচতলার কয়েকটি  ঘরে কিছু ছিন্নমূল পরিবার  বসবাস করতে থাকে।কলি সে পরিবারেই বেড়ে ওঠা এক পিতৃহীন শিশু।

সুখী বালার খুব ইচ্ছে ছিল তার হবু সন্তান যেন মেয়ে হয়। মেয়ে হলে তার নাম রাখবে কলি।যে একদিন পরিপূর্ণ ফুল হয়ে সুবাস ছড়াবে, ম ম করেবে চারিধার।ঈশ্বর তার আশা অনেকটাই পূরণ করেছে।সত্যি সত্যি তার কোল আলোকিত করে এক কন্যা সন্তানের জন্ম হলো।কথা মতো সদ্য জন্মগ্রহণ করা সন্তানের নামও রাখা হলো ‘কলি’।সুখী বালার কতো না স্বপ্ন কলিকে নিয়ে। নানা রঙের ফ্রক পড়বে ছোট ছোট  দুটো বেনী দুলিয়ে প্রজাপতির মতো এ-বাড়ি ও-বাড়ি ঘুরে বেড়াবে তার সাথে, একটু বড় হলে সবার মতো সেও স্কুলে যাবে।লেখা-পড়া শেষে চাকরি করবে। কিছুতেই ওকে তার কাছ থেকে দূরে চলে যেতে দেবে না সুখী বালা।একদিন সে-ই তাদের ছোট্ট সংসারের মস্ত আকাশটাকে আলোকময় করে তুলবে।

লালন সাহার গ্রোসারি শপ হরিরামপুর বাজারের মধ্যিখানে অবস্থিত। কম দামে ভালো মালামালের চাইতে ওর ভাল ব্যবহারের জন্য বেশির ভাগ লোক তার দোকানেই ভীড় জমায়।দোকান সময় মত বন্ধ করে সরাসরি ছুটে যাবে ছোট্ট পুতুল পুতুল মেয়ের কাছে।সারা দিনের অদেখায় ব্যাকুল হয়ে ওঠে লালন সাহার হৃদয়।কলি,সুখী বালা এ দু’জকে নিয়েই লালনের অসীম সুখের সংসার।ছোট্ট ছোট্ট ভালোবাসা,ছোট্ট ছোট্ট গল্প কথা, সুখের ছোঁয়া সেই খানেতে থাকে বুঝি সংগোপনে। লালনও স্বপ্ন দেখতে ভালবাসে ওদের কলিকে নিয়ে।অন্ধকার থেকে আলোর পথে ছুটে যাবার স্বপ্ন।অলিই যেন ভবিষ্যতের সেই প্রজ্জ্বলিত প্রদীপখানি।একদিন বড় হয়ে কলিই তাদের নিয়ে যাবে আলোকিত পথের সন্ধানে।

কলি  বুঝি একটু একটু করে পাপড়ি মেলে ধরার স্বপ্ন দেখায় ওর মাকে, ওর বাবাকে।স্বপ্নময় এক বৃত্তের মাঝে আবর্তিত হতে থাকে দু’জন।স্বপ্ন কি শুধুই স্বপ্ন দিয়ে ঘেরা?  নাকি কখনো কখনো বাস্তবের দোরগোড়ায় এসে দাঁড়ায়? প্রতিটি মানুষেরই একটি স্বপ্ন বিলাসী মন থাকে নিভৃতে। কখনো সে মনের মাঝেই লালন করে বেড়ায় আবার কখনো তা বাস্তবায়নে অনেকটাই উদগ্রীব হয়ে পড়ে।

লালনকে প্রতি এক সপ্তাহ পর পর বন্দরে যেতে হয় দোকানের জন্য মালামাল ক্রয় করতে।শেষ বারে বন্দর থেকে ফেরার পথে ভীষণ ঝড়ের কবলে পড়তে হয় তাকে বহনকারি নৌকাটির।মাঝ দরিয়ায় সে নৌকায় উপস্থিত সবাই আতংকিত হয়ে পড়ে।এক দমকা হাওয়ায় নৌকা ডুবে যায়।এদের অনেকেই সাঁতরে তীরে এসে জীবন রক্ষা পায়।কিন্তু লালন সাহার শেষ রক্ষা হয়নি।দু’দিন পর তার মৃত দেহ প্রায় দু’কিলোমিটার দূরে ভেসে উঠে । শনাক্তকরণের পর মরদেহ তার পরিবারের কাছে পৌঁছে দেয়া হয়।লালন-সুখী বালা পরিবারের স্বপ্ন এমন করেই নদীর গভীর জলের আহ্বানে হারিয়ে যায়। ধুয়ে যায়,মুছে যায় কলির স্বপ্নে দেখা রাজকন্যা হবার বাসনা।শীতের কুয়াশার মতো ধীরে ধীরে অভাব অনটন সুখী বালার ছোট্ট সংসারকে বড় চাদর হয়ে ঢেকে দিতে থাকে।দিনের আলো ক্রমশ দূরীভূত হয়ে রাতের অন্ধকারে নিমজ্জিত হতে থাকে সময়ের সাথে সাথে।স্বামী হারা সুখী বালার নতুন ঠিকানা হয়ে যায় পলেস্তারা পড়া জীর্ণশীর্ণ দালানের নিচুতলার আলো বিহীন অন্ধকারাচ্ছন্ন গৃহকোণ।সুখী বালা-লালনের লালিত স্বপ্নগুলো আর ফিরে আসে না সুখী বালার নিদ্রাহীন দু’চোখের উঠোনে।কলির প্রজাপতি মন মুখ থুবড়ে পড়ে থাকে ঘরের স্যাঁতস্যাঁতে মেঝেতে।ফুল হয়ে ফোটার প্রত্যাশা ভেঙে চুরমার হয়ে যায় ভাঙা কাঁচের টুকরোর মতো।হরিরাম পুর লঞ্চঘাট সুখী বালার একমাত্র ঠিকানা এখন।যেখানে সুখী বালার হৃদয় অলিন্দে দুঃখ বোঝাই একটি জাহাজ নোঙর করে আছে ভাগ্য-রেখা হয়ে।

টরন্টো


আমি তাসরীনা শিখা

দীর্ঘ সময় থেকে আমি লিখা লিখির সাথে জড়িত ।    তরুন বয়েস থেকে প্রবাসে বসবাস । অনেক বছর থেকে দেশের এবং  বিদেশের নানা পত্র পত্রিকাতে লিখে যাচ্ছি । তাছাড়াও এই পর্যন্ত বই মেলাতে আমার পাঁচ টি বই প্রকাশিত হয়েছে। গল্প, উপন্যাস,  প্রবন্ধের  বই।

 

আমার ভেতরে আমি

নির্জনতা নিসংগতা নিয়ে মানুষ অনেক চিন্তিত হয়। নির্জনতা, নিসংগতার কথা ভেবে মানুষ ব্যথিত হয় ,ভীত হয়, জীবনকে অর্থহীন ভাবতে শুরূ করে।।

কিন্তু আমার কাছে নির্জনতার আছে একটা অসাধারন শব্দ যা কিনা আমাকে ভাসিয়ে নিয়ে যায় আমার চেনা জগৎ থেকে অনেক দুরে। কাজেই নির্র্জনতাকে আমি ভয় পাই না সে যে আমার জীবনের পরম বন্ধু । নির্জনতার যেমন একটি অদ্ভুত শব্দ আছে তেমনি নিসংগতার মাঝেও আমি খুঁজে পাই একজন সংগী। সে সংগীটি আমাকে নিজেকে নিয়ে ভাববার সময় দেয়। নিজের সামনে নিজেকে দাঁড় করিয়ে দেয়। যে কথা কাউকে বলা হয়নি বা বলতে ইচ্ছা করেনি, সে রকম অনেক কথা আমাদের হৃদয়ের মাঝে বসে আছে গোপনে। নিসংগতার সংগীটি আমাকে হাত ধরে নিয়ে চলে আমার না বলা কথার জায়গাটিতে । সেখানে বসে আমি কথা বলি আমার নিসংগতার সংগীটির সাথে। যেখানে আর কারো কোন প্রবেশের অধিকার নেই। সেখানকার বাসিন্ধা শুধু আমরা তিনজন, আমি , নির্জনতা আর আমার নিসংগতার সংগী ।

তেমনি এক নির্জন নিসংগ রাতে সেন্ট লোরেন্স নদীর পাশে বহু রাত অব্দি বসে আকাশের দিকে তাঁকিয়ে ভাবছিলাম এত তারাতো আমি আগে কখনো দেখিনি।। এত উজ্জ্বল এত জ্বল জ্বলে তারা সেভাবে আমার দেখা হয়নি। কত রাতইতো আকাশের দিকে তাঁকিয়ে তারা গুনেছি কই কোন দিনতো মনে হয়নি তারাগুলি আমার এত কাছে। নদীর চারপাশটা ঘুট ঘুটে অন্ধকার ছিল বলেই হয়তো এ উজ্জ্বলতা। অন্ধকারে তারাদের উপস্থিতি ও উজ্জ্বলতা অনেক বৃদ্ধি পায়।

আজ লিখতে বসে আমি সেন্ট লোরেন্স নদীর নামটা মনে করতে পারছিলাম না। আজকাল প্রায়ই এরকম হচ্ছে। অনেক কিছুই আমি ভুলে যাই। অনেক সাধারন কিছুও মনে করতে মাঝে মাঝে আমার অনেক কষ্ট হয়। তখন আমার ভীষন কান্না পায়। ভেবে ভয় পেয়ে যাই , আমার কি স্মৃতি শক্তি কমে যাচ্ছে? কিন্তু কেন? এত তাড়া তাড়ি কি কারো স্মৃতি শক্তি কমে যায়? নিজের কাছে নিজে প্রশ্ন করি , এটা কি এক ধরনের অসুস্থতা? যা ধীরে ধীরে আমার স্নায়ু গুলিতে এবং মস্তিষ্কের বিভিন্ন কোষে ছড়িয়ে পড়ছে। এমনতো একদিন হতে পারে আমি ভুলে যাবো আমার বাড়ীর নাম্বার কিংবা আমার টেলিফোন নাম্বার । এমনতো কয়েক বার হয়েছে আমি গাড়ী ড্রাইভ করার সময় হঠাৎ করে ভুলে গেছি আমি কোন রাস্তার উপর আছি। কিন্তু মুহূর্তের মধ্যে আমি মনে করতে পেরেছি। আমার আজকাল আতংক হয় যদি আমি ভুলে যাই অনেক কিছু আর সেটা কিছুতেই মনে করতে না পারি তাহলে আমি কি করবো? তখন কি আমার এই অবস্থা থেকে আমাকে বের করে আনবে আমার দুজন প্রিয় বন্ধু নির্জনতা এবং নিসংগতা?

 


সংবাদটি শেয়ার করুন