শহীদ বুদ্ধিজীবী কতজন? ৫ জন বুদ্ধিজীবীর নাম সহ শহীদ বুদ্ধিজীবীদের নামের তালিকা:
শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস কবে? বাংলাদেশে ১৪ ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবী হত্যা দিবস বা শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস হিসেবে পালিত হয়।
১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের পুরো সময়টুকুতেই পাকিস্তানি হানাদারবাহিনী কর্তৃক পরিকল্পিতভাবে দেশের জ্ঞানী-গুণী ও মুক্তবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষদের হত্যা করা হয়েছিলো। ১৯৭১ এর ডিসেম্বর মাসে স্বাধীনতা যুদ্ধের শেষ পর্যায়ে এসে পাকিস্তান বাহিনী যখন বুঝতে শুরু করে যে তাদের পক্ষে যুদ্ধে জেতা সম্ভব না। তখন তারা নবগঠিত দেশকে সাংস্কৃতিক, সামাজিক ও শিক্ষাগত দিক থেকে দুর্বল এবং পঙ্গু করে দেয়ার জন্য পরিকল্পনা করে।
সেই পরিকল্পনা অনুযায়ী ১৪ ডিসেম্বর রাতে পাকিস্তানি বাহিনী তাদের দেশীয় দোসর রাজাকার, আলবদর ও আল শামস বাহিনীর সহায়তায় দেশের শ্রেষ্ঠ সন্তানদের নিজ নিজ গৃহ হতে তুলে এনে নির্মম নির্যাতনের পর হত্যা করে। এই পরিকল্পিত গণহত্যাটি বাংলাদেশের ইতিহাসে বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ড নামে পরিচিত এবং ১৪ ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবী হত্যা দিবস হিসেবে পালিত হয়।
শহীদ বুদ্ধিজীবীদের নামের তালিকা
বুদ্ধিজীবী দিবস থাকলেও বাংলাদেশে শহীদ বুদ্ধিজীবীদের রাষ্ট্রীয়ভাবে কোন তালিকা নেই। অর্থাৎ, বাংলাদেশে শহীদ বুদ্ধিজীবী কতজন তার সঠিক কোন হিসেব নেই।
স্বাধীনতার প্রায় ৫০ বছর পরে সরকার শহীদ বুদ্ধিজীবীর একটি পূর্ণাঙ্গ তালিকা প্রণয়নের কাজ শুরু করেছে। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় ২০২০ সালের ১৩ই ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবীদের একটি প্রাথমিক তালিকা চূড়ান্ত করেছে। এতে ১২২২ জন শহীদ বুদ্ধিজীবীর নাম অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
শহীদ বুদ্ধিজীবীদের তালিকা তৈরির কাজ প্রথমে ১৯৭২ সালে শুরু হলেও, সে তালিকা কখনো সরকারি নথি বা গেজেটভুক্ত হয়নি। এখন যে ১২২২ জনের প্রাথমিক তালিকা প্রস্তুত করা হয়েছে, সেটি গেজেটভুক্ত করা হবে বলে জানা গেছে।
অনেকের প্রশ্ন যে, স্বাধীনতার এত বছরেও এ সংখ্যা নিরূপণ করে ফেলা হলো না কেন?
সদ্য স্বাধীন হওয়া যুদ্ধবিধ্বস্ত একটি দেশের পক্ষে ৩০ লাখ শহীদের মধ্যে শহীদ বুদ্ধিজীবী কতজন তা নির্ণয় করা অসম্ভব ছিল।
জাতীয় পর্যায়ে ১৯৭২ সালে বুদ্ধিজীবী দিবসের সঙ্কলনে জনপ্রিয় নিউজ ম্যাগাজিন নিউজ ওয়ার্কের সংবাদিক টমালিনের লেখায় উল্লেখ ছিল শুধুমাত্র ১৪ই ডিসেম্বর ঢাকায় শহীদ হওয়া বুদ্ধিজীবীর সংখ্যা ছিল মোট এক হাজার ৭০ জন।
শহীদ বুদ্ধিজীবীদের মধ্যে ১৫২ জনের নামে স্মারক ডাক টিকিট প্রকাশ করে বাংলাদেশ সরকার।
মুক্তিযোদ্ধাদের সর্বোচ্চ অভিভাবক প্রতিষ্ঠান মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় বর্তমানে শহীদ বুদ্ধিজীবীদের তালিকা চাইলে ১৫২ জনের সেই পুরানো তালিকাটিই সরবরাহ করে।
১৪ ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবীদের নামের তালিকা :
নিচে বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে বেশ কয়েকজন বুদ্ধিজীবির নাম উল্লেখ করা হলো–
শিক্ষকঃ
- ড. মুনির চৌধুরী (বাংলা সাহিত্য)।
- সাজিদুল হাসান (পদার্থবিদ্যা)।
- ফজলুর রহমান খান (মৃত্তিকা বিজ্ঞান)।
- এন এম মনিরুজ্জামান (পরিসংখ্যান)।
- ড. হবিবুর রহমান (গণিত বিভাগ)।
- ড. শ্রী সুখারঞ্জন সমাদ্দার (সংস্কৃত)।
- মীর আবদুল কাইউম (মনোবিজ্ঞান)।
চিকিৎসকঃ
- অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ ফজলে রাব্বি (হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ)।
- অধ্যাপক ডা. আলিম চৌধুরী (চক্ষু বিশেষজ্ঞ)।
- ডা. মনসুর আলী।
- ডা. মোহাম্মদ মোর্তজা।
- ডা. ওবায়দুল হক।
- ডা. আসাদুল হক।
৫ জন বুদ্ধিজীবীর নাম (অন্যান্য) :
- ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত (রাজনীতিবিদ)।
- রণদাপ্রসাদ সাহা (সমাজসেবক এবং দানবীর)।
- ড. আবুল কালাম আজাদ (শিক্ষাবিদ, গণিতজ্ঞ)।
- নূতন চন্দ্র সিংহ (সমাজসেবক, আয়ূর্বেদিক চিকিৎসক)।
- সিরাজুদ্দীন হোসেন (সাংবাদিক)।
পুরো বিশ্ব প্রত্যক্ষ করেছিল সেই ১৯৭১ সালের ১৪ই ডিসেম্বরের বর্বরতা, নৃশংসতা। তারা আরও প্রত্যক্ষ করেছিল কিভাবে পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী দেশের বুদ্ধিজীবীদের ধরে নিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করে গণকবরে লাশ ফেলে দেওয়া হয়। স্বাধীনতার পরও ৫২ বছর ধরে এই ক্ষত বয়ে বেড়াচ্ছে বাংলাদেশ।
আরো পড়ুনঃ স্বাধীনতা কি? স্বাধীনতার রক্ষাকবচ গুলো কি কি?
শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস পালনের উদ্দেশ্য কি?
বিশ্বের ইতিহাসে প্রতিটি জাতি তাদের শ্রেষ্ঠ সন্তানদের স্মরণ করে থাকে। ১৯৭১ সালের ১৪ ডিসেম্বর পাকিস্থানি হানাদার বাহিনীর হাতে নির্মম ভাবে খুন হওয়া দেশের বুদ্ধিজীবীদের আত্মত্যাগ বাংলার স্বাধীনতায় অপরিসীম অবদান রাখে।
এই মহান ব্যক্তিদের স্মরণ করে দেশ তাদের কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে চায়। তাই শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস পালনের উদ্দেশ্য হচ্ছে জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের কৃতজ্ঞতার সাথে স্মরণ করা।
ডেস্ক রিপোর্ট (এফএইচ/বিডি)