ফিচার্ড সাহিত্য ও কবিতা

শীতল চট্টোপাধ্যায়- এর তিনটি কবিতা

শীতল চট্টোপাধ্যায়- এর তিনটি কবিতা


ফোটোর মেয়ে

একটি মেয়ের ফোটো হাতে নিয়ে
বালি ভাঙছে একটি জীবন ৷
কবে একদিন মেয়েটি
নিজেকে রঙিন ছবিতে দেখতে চেয়েছিল
পুরীর সমুদ্রের বীচ ক্যামেরা ম্যানের ক্যামেরায় ৷
সেদিন তটে ভাঙা সাগরঢেউয়ের ফেনা ছুঁয়ে –
সাগরকে ছুঁইয়েছিল মেয়েটি তার উচ্ছ্বাস ঢেউ,
জীবনের সেই স্বপ্নিল মুহূর্তকে ধরেছিল
বীচ ক্যামেরা ম্যানের ক্যামেরায়,
দিয়েছিল তার জীবিকার বিনিময় দামও ৷
তারপর যখন মহামারিতে মানবহীন
সমুদ্র সৈকত,
ছবিহীন উপোসে কাটা ক্যামেরার প্রতিদিন,
ক্যামেরা ম্যানের ভাতের থালা নাগাল থেকে
সরে যায় ক্রমশ৷
সেই বিষাক্ত নীল সময় পেরিয়ে, নির্বিষ নীল সমুদ্রের কাছে নতুন ক’রে আসছে মানুষ,
সবার হাতেই নব প্রযুক্তির নতুন মোবাইলে ছবি হচ্ছে সমুদ্র,
ফোটোর মেয়েটিও মোবাইল হাতেই
জলমাখা তট ধরে ফিরে হাঁটছিল আজ আবার৷
হঠাৎ নিজের ছবি দেখে, জীবন্ত মেয়ে থমকে দাঁড়ায়, ক্যামেরা ম্যানের সামনে,
ক্যামেরা ম্যানও তার হাতে ধরা
ফোটোর মেয়েটিকে সামনে দেখে ভাবছিল-
অচেনা মেয়েকে চেনায় বাঁচিয়ে রেখেছে আমার ক্যামেরাই, কিছু বলার আগেই-
জিন্সের পকেটে মোবাইলটা ঢুকিয়ে
মেয়েটি ক্যামেরা ম্যানকে বলল-  ছবি৷

——————

মূর্তির খোঁজে

সন্ধ্যে কালো রূপেও
লুকিয়ে জাগলে, চিনে নেবো রূপ৷
নিশ্চিদ্র রাতের গভীরে ফুটলেও
চিনে নেবো মূর্তিকে৷
আমার সঙ্গী রাতের কালো আর
রাত ভেঙে দূরে ছুটে যাওয়া
রেলগাড়ির হর্ন৷
অনেক -অনেক দূর হাঁটার ক্লান্ত পায়ে
ঘাসেরা ছিটিয়ে দেয় শিশির,
অন্ধকার জড়িয়ে ঝাপসা করে দেওয়া দৃষ্টিকে
মাঝে – মাঝে ধুইয়ে দেয় পাতা গড়ানো শিশিরজল ৷
রাতের অন্ধকার গুহার ভেতর দিয়ে
স্রোত অস্তিত্ব হয়ে পিছনের দূরত্ব বাড়িয়ে
হাঁটা আর হাঁটা, ধস নামলেই-
না থাকায় থেকে যাওয়া হবে
মানবী মূর্তির খোঁজে ……..

———————–

হেমন্তপাখি

শিশিরের ফোঁটায় মিশে
শেষ রাত ঝরে পড়ে
মাটিতে ৷
ঝরা রাত হারিয়ে যায়
ঘাস – মাটির ভেতরে ৷
লালচে পদ্মের মতো
ভোর ফোটে পুবে ৷
ভোরের পথে কুয়াশামাখা
হেমন্ত জাগে ৷
শিশিরমাখা পাতার ভেতরে
পাতা ঘেরা পাখির বাসা ৷ সে বাসায়
এইমাত্র পাখির ডিম থেকে
যে বাচ্চাগুলো ফুটল, ওরা
যে নামের পাখিই হোক,
হেমন্তপাখি সবাই ৷

 



সংবাদটি শেয়ার করুন