সাহিত্য ও কবিতা

সরস্বতী পূজাতে রচিত শ্রুতিনাটক ।।। সুশীল কুমার পোদ্দার

সরস্বতী পূজাতে রচিত শ্রুতিনাটক ।।। সুশীল কুমার পোদ্দার
——————————————————————
জয় জয় দেবী

ভক্তঃ জয় জয় দেবী, চরা চর সারে, কুঁচ যুগ শোভিত মুক্তা হারে, বীণা রঞ্জিত পুস্তক হস্তে, ভগবতী ভারতী দেবী সরস্বতী নমস্তে।
মা, তোমায় অভিবাদন কানাডার এ শ্বেতশুভ্র তুষার ভূমিতে।
তা মা, তোমার বাহন- মানে হংসীকে তো দেখছি না?

দেবীঃ আর বলিস না। ওর জন্য মনটা বড় কষ্টে ভরে আছে রে, ও এখন আলীপুর চিড়িয়াখানায়।
তোদের কি যেন বিমানবন্দর, নাম শুনলেই মনে হয় বোমা ফাটছে – ধমধম

ভক্তঃ মা, ওটা দম দম

দেবীঃ ওই হোল আর কি। কেবল নেমেছি। কোথা থেকে এক মিছিল এলো। হৈ হৈ করে লোক জন এসে তোদের হংসী টিকে কেড়ে নিয়ে গেলো। যাবার সময় শাসিয়ে গেলো ওরা নাকি বন্য প্রাণী নির্যাতন আইনে আমার বিরুদ্ধে কেস ঠুকে দেবে

ভক্তঃ তা হলে তো মা তুমি মহা বিপদের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছ!

দেবীঃ তাই তো বাবা বিলম্ব না করে তোদের কলিকাতার পূজা মন্ভবে তোদের কি যেন এক নায়িকা … মনে
পড়েছে – সায়ন্তনী কে proxy বানিয়ে তোদের ডাকে চলে এলাম

ভক্তঃ তা মা সায়ন্তনী মেনে নিলো?

দেবীঃ অনেক দেন দরবার করে অবশেষে fifty-fifty তে দফারফা হলো

ভক্তঃ যাক, মা তোমার বীণা কৈ? বীণা ছাড়া তোমায় কেমন যেন অচেনা লাগছে

দেবীঃ যে দিন কাল পড়েছে ! বীণা কে শুনে বল? তাই ছেড়ে দিয়েছি। তোদের কার্তিক দার পরামর্শে hawiwan guiter শিখছি

ভক্তঃ তা মা ভালই করেছো। বাজারে demand আছে।
ভালো কথা- তোমার হাতের বই গেল কৈ? নিচ্ছয় airport এ আটকে দিয়েছ! অত্যন্ত অন্যায় … একি মা তোমার হাতে এটা কি?

দেবীঃ Ipad. গতবছর আমেরিকা গিয়েছিলাম। আমার এক ভক্ত এটা কিনে দিয়েছে। আজকাল সারা জ্ঞান তো ঐ Ipad এর মধ্যেই । তা ছাড়া অতো মোটা মোটা বই নিয়ে stage য়ে দাড়িয়ে থাকতে বড় কষ্ট হয় রে। তোদের program গুলো ভালো করে দেখতে পারিনা।

ভক্তঃ মা, পথে কোন অসুবিধে হয় নি তো?

দেবীঃ কি সুবিধে হবে বল? পাঠিয়েছিস economy class এর টিকেট। সারা রাস্তায় ঝাঁকুনি খেতে খেতে সারা শরীর ব্যথা হয়ে গেছে রে। হাত পা ছড়িয়ে বসার জো নেই

ভক্তঃ কি করবো মা, চাঁদা রেখেছি ৪০ ডলার। কেউ দেয় কেউ দেয় না। সব সময় ভয়, এই বুঝি পকেট থেকে গেল। একটু কষ্ট কর মা। সন্তানের জন্য এটুকু কষ্ট কর। মা, immigration এ তো কোন সমস্যা হয়নি?

দেবীঃ তোদের কলিকাতার বিমানবন্দরে security issue দেখিয়ে পূজা মণ্ডপে যা পেয়েছিলাম সব রেখে দিল। দুই একটা নাডু-বড়ী তোদের গণেশ দার জন্য লুকীয়ে রেখেছিলাম – তাই নিয়ে তোদের canada এর airport এ কি যে ঝামেলা গেল

ভক্তঃ সে কি মা!

দেবীঃ বলিস না, ওরা নাড়ু গুলোকে mini বোমা মনে করে আমায় counter এ বসিয়ে রাখল পরীক্ষার জন্য। তার পর বাবার নাম শুনে কি যে হুলুস্তুল কাণ্ড!

ভক্তঃ সে কি মা, বাবা মহাদেবকে নিয়ে আবার কি সমস্যা?

দেবীঃ তোদের বাবার নাম যে ‘ম’ দিয়ে শুরু। ‘ম’ দিয়ে শুরু হলেই নাকি black listed. তার পর পুরা গুষ্ঠির ঠিকুজি বেড় করলো। প্রায় সবার নামেই প্রাণী নির্যাতনের অভিযোগ। তোদের কার্ত্তিক দা সেনাপতি থাকা কালীন সময়ে কোন কোন দেশে মানবাধিকার লঙ্ঘন করেছে তার যাবতীয় বৃত্তান্ত।
তোদের বাবা যক্ষ রাজের যজ্ঞে যে লঙ্কা কাণ্ড ঘটিয়েছিলেন তার জন্য তার নাম terror list এ।
ভাগ্যিস আমার নামে তেমন কিছু ছিল না। তাই ওরা দুদিনের entry permit দিয়েছে।
বাবা, কালকেই কিন্তু আমায় plane এ তুলে দিবি।

ভক্তঃ ঠিক আছে মা। আজ ই আমরা ষষ্টি, স্ প্তমি, অষ্টমী, নবমী, দশ্ মী করে তোমায় বিদায় দেব

দেবীঃ তোরা বড় ভালো রে। সময়ের দাম বুঝিস। দীর্ঘ সময় আমার stage এ দাড়িয়ে থাকতে ভালো লাগে না। আর একটি কথা – আমার payment টা কিন্তু আমেরিকান ডলারে করিস।

ভক্তঃ কেন মা, আমেরিকান ডলারে কেন?

দেবীঃ আমাদের কুবেরের ব্যাংক তোদের canadian ডলার নেবে না। বড্ড বেশী volatile তো …
জানিস, এবার যাবার পথে দুবাই হয়ে যাবো।

ভক্তঃ কেন মা, দুবাই কেন?

দেবীঃ কতো দিন সোনা দানা কিনি না। এখন তো সোনা সস্তা। তাছাড়া ভাবছি, তোদের বাবার জন্য একটা nano কিনে দেব। তাই বাবা rate টা একটু বাড়িয়ে দিবি, ছুটির দিন তো

ভক্তঃ তাই হবে মা। তুমি এত কষ্ট করে এসেছ। এত দীর্ঘ পথ পরিক্রম করে।

দেবীঃ বল, সারা বছর বসে থাকি এই একটা দিনের প্রতীক্ষায়। আগে তাও – গান বাজনা শিখিয়ে দুই একটা পয়সা আসত। এখন তো তোরা track এর সাথে গান গাস।

ভক্তঃ একটা কোথা তোমায় বলবো ভাবছি। তোমার জন্য আমার বড় চিন্তা হয়। প্রযুক্তি যেভাবে এগিয়ে যাচ্ছে। সবার হাতে মুঠো phone. আর এই মুঠোর মধ্যেই তো সব জ্ঞান। তাই মা তোমায় তো যুগের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে হবে।

দেবীঃ তুই ঠিক বলেছিস। তাইতে তোদের কার্ত্তিক দা facebook এ একটা account খুলে দিয়েছে।

ভক্তঃ খুব ভালো করেছে মা। আমি তো এই কথা টাই বলতে চাচ্ছি। পাছে তুমি মনে কিছু কর। আজকাল তো বড়বড় celebrity এর facebook, twiter, instagram এ multiple account আছে। তা মা তোমার ভক্ত সংখ্যা কতো?

দেবীঃ খুব ভালো নারে। তবে তোদের কার্ত্তীক দার কিন্তু অনেক fan. তোদের কার্ত্তীক দা তো কৈলাস wood এর মারদেঙ্গা hero। তা যা বলছি, আজকাল কেউ জ্ঞানের কথা শুনতে চায় না। আজ তো ঘরে ঘরে পণ্ডিত। তোরা তো জানিস, আমি লিখতে পছন্দ করি। প্রকৃতির কাছ থেকে একটু বর্ণ, একটু গন্ধ নিয়ে তোদের মাঝে ছড়িয়ে দিতে চাই। অথচ জানিস – কেউ আমায় like দেয় না। আচ্ছা, তোরা এতো কৃপণ কেন রে? তোরা ইদানীং এতো স্বার্থপর হয়েছিস কেন রে?

ভক্তঃ মা, স্বার্থপর আমরা বরাবরই ছিলাম। আগে তো facebook ছিল না তাই বুঝতে পার নাই। মা, আজকে আমাদের বিচিত্রা অনুষ্ঠানের একটা ছবি কিন্তু তোমার সাথে tag করবো।

দেবীঃ দেখ, এই tag টা আমার বড় অপছন্দের জায়গা। এটা মানবাধিকার লঙ্ঘনের সামিল । সেদিন কে যেন আমার time line এ পুঁটি মাছের recipe দিয়েছে। আমি নিরামিশাশি মানুষ। আমার time line এ পুঁটি মাছ কেমন লাগে বল?

ভক্তঃ মা তোমরা celebrity মানুষ । তোমার সাথে tag করা মানে একটা prestige matter. ঠিক আছে মা তুমি কিন্তু like দিও …

দেবীঃ আমি তোকে , তোকে কেন সবাইকে like দেব। তার বিনিময়ে তোরা ক্ষুদ্র স্বার্থ, সংকীর্ণতা তাগ করে এক হয়ে যা বাবা। একে অন্যের দুঃখ শোকে সহমম্মিতা, ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র সাফল্যে অনুপ্রেরণা দিয়ে একে অপরকে কাছে টেনে নে। দেখবি ভালবাসা ও ক্ষমার মাঝে কতো সুখ, কতো প্রাপ্তি।

ভক্তঃ মা, তুমি ধন্য মা, তোমের বানীই সবাইকে পৌঁছে দেব। মা, তুমি আবার এসো। তুমি আস বলেই আমরা দশটা মানুষ এক জায়গায় হোই। জীবনের সব দুঃখ কষ্ট ভুলে মুহুতে এক হয়ে যাই। তুমি আস বলেই এ তুষারে বসন্তের ফুল ফোটে। তুমি আবার এসো মা।

 

সরস্বতী পূজাতে রচিত শ্রুতিনাটক ।।। সুশীল কুমার পোদ্দার , ওয়াটারলু, কানাডা নিবাসী ।  ফলিত পদার্থ বিদ্যা ও ইলেকট্রনিক্স,  মাস্টার্স,  ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় , বাংলাদেশ ইলেক্ট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং, মাস্টার্স,   ইহিমে বিশ্ববিদ্যালয়, জাপান। ইলেক্ট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং, পি, এইচ, ডি,   ইহিমে বিশ্ববিদ্যালয়, জাপান। সিস্টেম ডিজাইন ইঞ্জিনিয়ারিং, ইলেক্ট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং, মাস্টার্স,  ওয়াটারলু, বিশ্ববিদ্যালয়, কানাডা ।।


সর্বশেষ সংবাদ

দেশ-বিদেশের টাটকা খবর আর অন্যান্য সংবাদপত্র পড়তে হলে CBNA24.com

সুন্দর সুন্দর ভিডিও দেখতে হলে প্লিজ আমাদের চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

আমাদের ফেসবুক পেজ   https://www.facebook.com/deshdiganta.cbna24 লাইক দিন এবং অভিমত জানান

 

সংবাদটি শেয়ার করুন