সিগন্যালের ত্রুটিই কাড়ল ২৮৮টি প্রাণ, করমণ্ডল দুর্ঘটনায় এমনই ইঙ্গিত রেলের প্রাথমিক তদন্তে
রেলের তরফে প্রাথমিক ভাবে একটি যৌথ পরিদর্শন রিপোর্ট প্রকাশ করা হয়েছে। সেখানে বালেশ্বরে করমণ্ডল এক্সপ্রেসে দুর্ঘটনার মূল কারণ হিসাবে দেখানো হয়েছে সিগন্যালের ত্রুটিকেই।
ওড়িশায় ট্রেন দুর্ঘটনার কারণ হিসাবে উঠে এল সিগন্যালের ত্রুটি। রেলের তরফে একটি যৌথ পরিদর্শন রিপোর্ট প্রকাশ করা হয়েছে। ঘটনাস্থল পরিদর্শনের পর ওই যৌথ রিপোর্টে সিগন্যালের ত্রুটির কথাই বলছেন রেল আধিকারিকেরা। তবে এটি প্রাথমিক রিপোর্ট। বিস্তারিত তদন্তের পর দুর্ঘটনার কারণ আরও স্পষ্ট হবে।
যৌথ পরিদর্শন রিপোর্টে বলা হয়েছে, ‘‘আপ মেন লাইনে সবুজ সিগন্যাল দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু ট্রেনটি সেই লাইনে ঢোকেইনি। ট্রেন ঢুকেছিল লুপ লাইনে। সেখানে আগে থেকে একটি মালগাড়ি দাঁড়িয়ে ছিল। তার সঙ্গে সংঘর্ষে করমণ্ডল এক্সপ্রেস লাইনচ্যুত হয়।’’
দোষীদের কড়া শাস্তি হবে’, দুর্ঘটনাস্থল-হাসপাতাল পরিদর্শনের পর আশ্বাস মোদীর
করমণ্ডল এক্সপ্রেস সহ তিনটি ট্রেন দুর্ঘটনার নেপথ্য কারণ কী? এই নিয়ে উঠছে একাধিক প্রশ্ন। এবার গ্রাউন্ড জিরোরে গিয়ে পুরো পরিস্থিতি খতিয়ে দেখলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।
শুক্রবার রাতেই এই ট্রেন দুর্ঘটনা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছিলেন তিনি। পাশাপাশি নিহতদের পরিবার এবং আহতদের জন্য আর্থিক সাহায্যও ঘোষণা করেছিলেন। শনিবার কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের উপস্থিতিতে একটি উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক করেন মোদী। ঠিক কী কারণে এই দুর্ঘটনা, প্রাথমিক রিপোর্ট, উদ্ধার কাজ বিস্তারিত আপডেট নেন তিনি।
এরপরেই গ্রাউন্ড জিরোতে পৌঁছে যান প্রধানমন্ত্রী। সেখানে গিয়ে উদ্ধারকাজ সম্পর্কিত বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ করেন। একইসঙ্গে উদ্ধারকাজে যাঁরা হাত লাগিয়েছিলেন সেই সমস্ত কর্মীদের একাংশের সঙ্গে কথা বলেন মোদী।
প্রধানমন্ত্রী এদিন বলেন, “আমি আহতদের সঙ্গে কথা বলেছি। আমার দুঃখ প্রকাশ করার ভাষা নেই। দোষীদের শাস্তি হবে। কী ভাবে এই ঘটনা ঘটল তার পূর্ণাঙ্গ তদন্ত হবে।”
তিনি আরও বলেন, “এই ঘটনা থেকেও আমরা অনেক কিছু শিখব এবং নাগরিক সুরক্ষার কথা মাথায় রেখে আমাদের ব্যবস্থাগুলিকেও এগিয়ে নিয়ে যাব।”
এদিন ঘটনাস্থল থেকেই স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে ফোন করেন মোদী। কোনওভাবেই আহতদের চিকিৎসা পেতে যাতে কোনও সমস্যা না হয় তা নিশ্চিত করার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। পাশাপাশি নিহদের পরিবারের সদস্যদের যাতে কোনও অসুবিধার সম্মুখীন হতে না সেই দিকে বিশেষ নজর রাখার জন্য ক্যাবিনেট সচিবকে নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। পাশাপাশি প্রতি মুহূর্তে যাতে তথ্য দিয়ে সাধারণ মানুষকে সাহায্য করা হয়, তা নিশ্চিত করার নির্দেশও দেওয়া হয়েছে মোদীর তরফে।
এদিন রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণবের সঙ্গেও দীর্ঘক্ষণ আলোচনা করেন তিনি। পুরো পরিস্থিতি সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য নেন। নিজেও দুর্ঘটনাস্থলে যান। পুরো পরিস্থিতি চাক্ষুস করার পর আহতদের দেখার জন্য হাসপাতালে যান তিনি। সেখানে আহতরা ঠিকমতো চিকিৎসা পরিষেবা পাচ্ছেন কিনা সেই বিষয়টি খতিয়ে দেখেন।
উল্লেখ্য, সকালেই ঘটনাস্থলে পৌঁছেছিলেন রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব। সেখানে গিয়েছিলেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও। তিনি ঘটনাস্থলে গিয়ে জানিয়েছিলেন, এই দুর্ঘটনার নেপথ্যে নিশ্চই কোনও কারণ আছে এবং তা খতিয়ে দেখতে হবে।
রেলমন্ত্রী জানিয়েছিলেন, এই ঘটনা কী ভাবে হবে তা খতিয়ে দেখার জন্য একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। ইতিমধ্যেই উদ্ধারকাজ শেষ হয়েছে। ঘটনাস্থলটি যাতে স্বাভাবিক করা যায় তার চেষ্টা করা হচ্ছে। পাশাপাশি সেখানে এই কাজে ব্যবহৃত মেশিনগুলির থেকে সাধারণ মানুষকে দূরে থাকার অনুরোধও করেন তিনি।
এই রেল দুর্ঘটনায় নিহতদের পরিবার পিছু দশ লাখ টাকা এবং গুরুতর আহতদের দুই লাখ টাকা, জখম হলে ৫০ হাজার টাকা দেওয়ার কথা ঘোষণা করা হয়েছে রেলের তরফে। পাশাপাশি নিহতদের পরিবার পিছু আরও ২ লাখের আর্থিক সাহায্য ঘোষণা করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।
-সূত্র: আনন্দবাজার ও এই সময়