প্রবাসের সংবাদ ফিচার্ড

সৌদি থেকে মানসিক ভারসাম্যহীন হয়ে ফিরলেন তিনি

সৌদি থেকে মানসিক ভারসাম্যহীন হয়ে ফিরলেন তিনি

বয়স ৩৭ বছর। কালো বোরকা পরা এই নারী বিমানবন্দরের অ্যারাইভাল হলের কর্নারের একটি বেঞ্চে চোখে একরাশ হতাশা নিয়ে বসেছিলেন। মানসিক ভারসাম্যহীন এই নারীর মুখ দেখে মনে হয়েছে দীর্ঘদিনের ক্ষুধার্ত। কাউকে আসতে দেখলেই ভয়ে চিৎকার করছেন। মানুষের প্রতি এত ক্ষোভের কারণ হয়তো তার সঙ্গে ঘটে যাওয়া বর্বর কোনো ঘটনা। কথার বিরতিতে আরবি ভাষায় কথা বলে চিৎকার করে ওঠেন। টানা তিনদিন শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এভাবেই পড়ে ছিলেন তিনি। বিমানবন্দর আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের (এপিবিএন)-১৩ সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, গত শুক্রবার রাত ১২:৫ মিনিটে ইত্তেহাদ এয়ারওয়েজের একটি ফ্লাইটে তিনি সৌদি আরব থেকে বিমানবন্দরে এসে পৌঁছান।

সঙ্গে ছিল না তেমন কিছু।
অ্যারাইভাল হলে নির্লিপ্তভাবে তাকিয়ে থেকে একটু পর পর চিৎকার করছেন। বিমানবন্দরে নামার পর থেকে খাননি কিছুই। এমনকি সামান্য পানি পানেও যেন তার অনীহা। সঙ্গে ছিল না কোনো পাসপোর্ট। কোথায় যাবেন, গ্রামের বাড়ি কোথায়- কিছুই বলতে পারছিলেন না তিনি। পরবর্তীতে ট্র্যাভেল পাস দেখে নাম-পরিচয় শনাক্ত করে বিমানবন্দর আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন (এপিবিএন)। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, এ সময় তাকে প্রচণ্ড উত্তেজিত দেখা গেছে। কারও সঙ্গে তেমন কোনো কথা বলছিলেন না। তার সঙ্গে কি হয়েছে? কি কারণে তিনি মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেছেন সেটাও প্রাথমিকভাবে ধারণা করা যায়নি। অনেক চেষ্টার পর তার পরিবারের সন্ধান মেলে। তার গ্রামের বাড়ি পাবনার ঈশ্বরদীতে। স্বামী জানান, তাদের সংসারে তিন ছেলেমেয়ে রয়েছে। অভাবের সংসারে স্বামীকে আর্থিকভাবে সহায়তা করতে পরিবারের সদস্যদের অমতে তিন বছর আগে স্থানীয় দালালদের সহায়তায় গৃহকর্মীর কাজ নিয়ে তিনি সৌদি আরব যান। পরিবারের সদস্যরা একাধিকবার তাকে ফেরানোর চেষ্টা করলেও অমান্য করে তিনি সৌদি যান। এরপর থেকে তার সঙ্গে পরিবারের সদস্যদের আর কোনো যোগাযোগ ছিল না। তিনি বেঁচে আছেন, নাকি মারা গেছেন এটাও তারা জানতেন না। এক পর্যায়ে পরিবারের সদস্যরা ধরে নেন তিনি হয়তো বেঁচে নেই। ইতিমধ্যে বেসরকারি সংস্থা ব্র্যাকের সহায়তায় তার পরিবারের সদস্যদের হাতে তুলে দেয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে ব্র্যাকের অভিবাসন বিভাগের তথ্য কর্মকর্তা মোহাম্মদ রায়হান কবীর মানবজমিনকে বলেন, ভুক্তভোগী নারী তিনদিন পর্যন্ত বিমানবন্দরেই পড়ে ছিলেন। অথচ তিনি সুরক্ষা চুক্তির মাধ্যমেই বিদেশে গেছেন। প্রায় প্রতিদিনই এ ধরনের ঘটনা ঘটে। প্রতিদিনই কম বেশি নারী এরকম মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে দেশে ফিরে আসেন। কেউ গর্ভবতী হয়ে অথবা অসুস্থাবস্থায় দেশে ফেরেন। তাদের অধিকাংশের ক্ষেত্রে মানসিক ভারসাম্য থাকে না। এ সংখ্যাটা নেহায়েতই কম নয়। আমর্ড পুলিশ ব্যাটালিয়ন-১৩ এর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জিয়াউল হক বলেন, এখন এটা বেশ কমে গেছে। একটা সময় সংখ্যাটা অনেক বেশি ছিল। প্রায় প্রতিদিনই এরকম বিদেশ ফেরত নারীকে পাওয়া যেত যারা কোনো না কোনো ভাবে মানসিক ভারসাম্যহীন। করোনার পর থেকে এ সংখ্যাটা অনেক কমেছে। এ ধরনের ভুক্তভোগী নারীদেরকে প্রাথমিকভাবে আমাদের তত্ত্বাবধায়নে রেখে পরবর্তীতে ব্র্যাকের সঙ্গে যোগাযোগ করে তাদের কাছে হস্তান্তর করা হয়।

-মরিয়ম চম্পা, মানবজমিন থেকে


 

সর্বশেষ সংবাদ

দেশ-বিদেশের টাটকা খবর আর অন্যান্য সংবাদপত্র পড়তে হলে CBNA24.com

সুন্দর সুন্দর ভিডিও দেখতে হলে প্লিজ আমাদের চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

আমাদের ফেসবুক পেজ   https://www.facebook.com/deshdiganta.cbna24 লাইক দিন এবং অভিমত জানান

সংবাদটি শেয়ার করুন