হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নিরাপত্তা স্ক্যানারে জটিলতা দেখা দেওয়ার পর দেশ থেকে ইউরোপিয়ান ইউনিয়নে প্রায় তিন সপ্তাহ ধরে শাক-সবজি রপ্তানি একেবারেই বন্ধ হয়ে গেছে। তৃতীয় দেশে স্ক্যানিং ব্যবহার করে সীমিত পরিসরে তৈরি পোশাকসহ অন্যান্য পণ্য রপ্তানি চালুর সুযোগ থাকলেও তাতে ব্যয় পড়ছে অনেক বেশি।
রপ্তানিকারকদের অভিযোগ, গত ১০ অক্টোবর নিরাপত্তা স্ক্যানারে জটিলতা দেখা দেওয়ার ৭২ ঘণ্টার মধ্যে তারা বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের কাছে চিঠি দেন, যাতে মেশিনটি দ্রুত চালুর উদ্যোগ নেওয়া হয়। কিন্তু গত ৩ সপ্তাহেও সেটি ঠিক হয়নি।
দেশের আকাশপথের প্রধান গেটওয়েতে নিরাপত্তা স্ক্যানিং মেশিন সচল করার ক্ষেত্রে দীর্ঘসূত্রতার বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ ফ্রুটস ভেজিটেবল অ্যান্ড অ্যালাইড প্রোডাক্টস এক্সপোর্টাস অ্যাসোসিয়েশন। তারা বিষয়টি নিয়ে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন জানিয়ে প্রয়োজনীয় সাড়া না পেয়ে এখন সমস্যা সমাধানে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের দ্বারস্থ হয়েছেন। গত ২৮ অক্টোবর তারা উদ্বেগ জানিয়ে চিঠি দেন।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানো ওই চিঠিতে বলা হয়েছে, বিমানবন্দরে স্থাপিত ইডিএস স্ক্যানিং মেশিনটি গত ১৮ দিন ধরে বন্ধ থাকায় তাজা শাক-সবজি, ফলমূল ও অন্যান্য খাদ্যপণ্য রপ্তানি সম্পূর্ণভাবে বন্ধ রয়েছে। যার ফলে কৃষক তার উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছে, রপ্তানিকারকরাও আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।
যোগাযোগ করা হলে অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি এস এম জাহাঙ্গীর হোসেন জানান, দেশের প্রধান বিমানবন্দরের মতো একটি স্পর্শকাতর জায়গায় ৩ সপ্তাহ ধরে নিরাপত্তা স্ক্যানার নষ্ট থাকার ঘটনাটি আমাদের বিস্মিত করেছে।
তিনি জানান, বিষয়টি নিয়ে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষকে গত ১৩ অক্টোবর চিঠি দিলেও তাদের উদ্বেগের বিষয়টিতে যথেষ্ট সাড়া মেলেনি কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে।
জাহাঙ্গীর হোসেন জানান, শাক-সবজি, ফলমূল পচনশীল পণ্য হওয়ায় বাড়তি টাকা খরচ করে তৃতীয় দেশের মাধ্যমেও স্ক্যানিং সুবিধা নিতে পারছেন না তারা। ফলে স্ক্যানার নষ্টের পর থেকে দেশ থেকে একেবারেই তাদের পণ্য রপ্তানি বন্ধ হয়ে গেছে।
রপ্তানিকারকরা জানান, বিশ্ববাজারে বাংলাদেশি শাক-সবজি ও ফলের প্রচুর চাহিদা রয়েছে। ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন, মধ্যপ্রাচ্যসহ বিশ্বের প্রায় ৫০টি দেশে সবজির পাশাপাশি রপ্তানি বাড়ছে দেশের মৌসুমি ফল ও খাদ্যপণ্যের। বৈশ্বিক করোনা মহামারীর কারণে দীর্ঘদিন ফ্লাইট বন্ধ থাকায় এ খাতে চাহিদা বেড়েছে দ্বিগুণ। বিমান চলাচল শুরুর পর যখন বাংলাদেশের রপ্তানিকারকরা তাদের পণ্য রপ্তানি বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছেন তখনই স্ক্যানার জটিলতার ইউরোপে হুমকির মুখে পড়েছে বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের অন্যতম এই খাতটি।
অবশ্য স্ক্যানার সচল করার বিষয়ে গাফিলতির বিষয়টি অস্বীকার করেছে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক)। প্রতিষ্ঠানটির সদস্য (নিরাপত্তা) শহীদুজ্জামান ফারুকী বলেন, স্ক্যানার সচল করার জন্য ভারত, মালয়েশিয়া ও দুবাই থেকে প্রকৌশলীরা বাংলাদেশে এসে কাজ শুরু করেছেন। দু-এক দিনের মধ্যে এটি সচল হবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
শহীদুজ্জামান ফারুকী জানান, স্ক্যানার সচল করার বিষয়টি তাদের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকারে রয়েছে। কারণ এর সঙ্গে নিরাপত্তা ইস্যু জড়িত। এ ছাড়া ইডিএস মেমিশনটি নষ্টের পর রপ্তানিকারকদের তৃতীয় দেশে স্ক্যানিং করে পণ্য রপ্তানি করতে হচ্ছে। এতে খরচও বাড়ছে। এই বিষয়টিও ভাবতে হচ্ছে তাদের।
বেবিচকের এই অতিরিক্ত সচিব বলেন, বিমানবন্দরে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে এই স্ক্যানারটি স্থাপন হয়েছিল। ফলে এখন এটি মেইনটেন্যান্সের বিষয়টিও ওই বেসরকারি কোম্পানিটির মাধ্যমেই হচ্ছে। এছাড়া কোভিড-১৯ পরিস্থিতির কারণেও বিদেশ থেকে প্রয়োজনীয় টেকনেশিয়ান আনায় কিছুটা বিলম্ব ঘটেছে বলে জানান তিনি।
সূত্রঃ বিডি প্রতিদিন
বাঅ/এমএ
দেশ-বিদেশের টাটকা খবর আর অন্যান্য সংবাদপত্র পড়তে হলে CBNA24.com
সুন্দর সুন্দর ভিডিও দেখতে হলে প্লিজ আমাদের চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন