ফিচার্ড লেখালেখি

২৬ মার্চ বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতা দিবস ।। বিদ্যুৎ ভৌমিক

২৬ মার্চ বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতা দিবস ।। বিদ্যুৎ ভৌমিক

বাংলাদেশ  স্বাধীনতার ৫১তম বছরটি এসেছে আলোকিত বাংলাদেশের ব্যতিক্রমী বার্তা নিয়ে। ২৬ মার্চ বাঙালির জাতির জীবনে অনন্যসাধারণ ও গুরুত্বপূর্ণ একটি দিন। একসাগর রক্তের বিনিময়ে  বীরত্ব ও সৎসাহস নিয়ে অর্জিত বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতার ৫১ বছর পূর্তির এক গৌরবোজ্জ্বল দিন আজ। গত বছর মহান স্বাধীনতার ৫০তম সুবর্ণজয়ন্তী যথাযোগ্য মর্যাদার সাথে পালিত  হয়েছিল- যা ছিল ভিন্ন এক গৌরবের আমেজ, বীরত্ব ও সৎসাহস নিয়ে এক ভিন্ন অনুভূতি। বাঙালির রক্তের দামে কেনা স্বাধীনতার সূর্য পূর্ব দিগন্তে উদিত হয়েছিল ১৯৭১ সালে; সেই বাংলাদেশ এখন ৫১তম মহান স্বাধীনতা দিবস উদযাপন করছে। কেননা মহান স্বাধীনতা সর্বদা অমলিন, চিরদিন, চিরকালের।

ব্রিটিশ শাসনাধীন দুইশত বছরের উপনিবেশিক শোষণ ও শাসন এবং পাকিস্তানী দুঃশাসনের ২৪ বছরের শোষণ-বঞ্চনার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়ে নিজেকে মুক্ত বাতাসে নিঃশ্বাস নেয়ার দিন হল গৌরবোজ্জ্বল ২৬ মার্চ মহান স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী দিবস । ১৯৭১ এর ২৫ মার্চ ছিল সেই ভয়াল ও বীভৎস কৃষ্ণপক্ষের কালরাত্রি । মানব সভ্যতার ইতিহাসে একটি কলঙ্কিত ও বিভীষিকাময় হত্যাযজ্ঞের ভয়ঙ্কর রাত ।  ব্যস্ত নগরী ঢাকায় ঘরে ঘরে সাধারণ মানুষ অনেকে ঘুমিয়েও পড়েছে ।  রাত সাড়ে এগারোটায় ক্যান্টনমেন্ট থেকে অত্যাধুনিক ট্যাঙ্ক, রাইফেল, মেশিনগান ও মর্টার নিয়ে বের হলো  নরঘাতক  কাপুরুষ পাকিস্তান সেনাবাহিনী এবং ছড়িয়ে পড়ল শহরময় । বিশ্বাসঘাতক ও নরঘাতক  কাপুরুষ পাকিস্তান সেনাবাহিনী ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ তাদের সব মূল্যবোধ ও ন্যায়নীতি লঙ্ঘন করে মধ্যরাতে গণহত্যার নিষ্ঠুরতম নীলনক্সা ‘অপারেশন সার্চ লাইট’ এর নামে তাদের ভয়ংকর মৃত্যুক্ষুধা মেটাতে  দানবীয় নিষ্ঠুরতায় ঝাঁপিয়ে পড়লো নিরস্ত্র ও ঘুমন্ত বাঙালীর ওপর । পাকিস্তানী নরঘাতকরা অত্যাধুনিক সমরাস্ত্র নিয়ে পিলখানা, ইপিআর, রাজারবাগ পুলিশ লাইন্স, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ছাত্রাবাস ও শিক্ষকদের বাসস্থানে হামলা চালায় এবং বিভিন্ন স্থানে আগুন জ্বালিয়ে ভয়ংকর ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছিল। সর্বএই এরা চালালো বর্বরোচিত নিধনযজ্ঞ আর ধ্বংসের উন্মত্ত তান্ডব চালিয়েছিল রাস্তায় রাস্তায় ।

সেদিন ‘যার যা আছে তাই নিয়ে’ বাংলাদেশের কৃষক, শ্রমিক ও ছাত্র জনতা আমাদের প্রাণপ্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশকে রক্ষা করার বলিষ্ঠ চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে স্বা‌ধীনতার মশাল ও অস্ত্র হাতে নিয়ে রক্তলিপ্সু পাকিস্তানী হানাদারদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ও মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল১৯৭১ সালে ২৫ মার্চ মধ্যরাতের পর অর্থাৎ ২৬ মার্চ প্রথম প্রহরে গ্রেফতার হওয়ার আগেই মহান স্বাধীনতার মহান স্থপতি  বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান তৎকালীন ইপিআরের ওয়ারলেসের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাধীনতার ও সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের ঘোষণা দেন। স্বাধীনতার ঘোষণা ও মুক্তিযুদ্ধের সূচনার এই সময়টি ২৬ মার্চ জাতি নিবিড় আবেগের সঙ্গে স্মরণ করে ।  ২৬ মার্চ প্রথম প্রহরে গ্রেফতার হওয়ার আগেই জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের ইংরেজীতে স্বাধীনতার যে ঘোষণা দিয়েছিলেন সেটির বাংলা অনুবাদ হলো ‘এটাই হয়ত আমার শেষ বার্তা, আজ থেকে বাংলাদেশ স্বাধীন, বাংলাদেশের জনগণ তোমরা যে যেখানে আছ এবং যার যা কিছু আছে তাই নিয়ে শেষ মূহুর্ত পর্যন্ত দখলদার সৈন্যবাহিনীকে প্রতিরোধ করার জন্য আমি তোমাদের আহ্বান জানাচ্ছি । চূড়ান্ত বিজয় অর্জিত না হওয়া পর্যন্ত তোমাদের যুদ্ধ চালিয়ে যেতে হবে । সেই সঙ্গে তিনি বাংলার যে ভাষণটি দিয়েছিলেন সেটি হলো ‘পাকিস্তানী সেনাবাহিনী অতর্কিতভাবে পিলখানা ইপিয়ার ঘাঁটি, রাজারবাগ পুলিশ লাইন আক্রমণ করেছে এবং শহরের রাস্তায় রাস্তায় যুদ্ধ চলছে । আমি বিশ্বের জাতিসমূহের কাছে সাহায্যের আবেদন করেছি ।’ এর আগে স্বাধীনতার মহান স্থপতি ও জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ ঐতিহাসিক রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমান সোহ্রাওয়ার্দী উদ্যান) দাঁড়িয়ে জাতিকে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানিয়ে বলেছিলেন ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম আমাদের স্বাধীনতার সংগ্রাম’।   বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান ৭ই মার্চ বাঙালি জাতির প্রতি  ভাষণের মাধ্যমে  স্বাধীনতার যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত হওয়ার আহবান জানিয়েছিলেন । আর স্বাধীনতার যুদ্ধ শুরু হলো ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে অর্থাৎ অত্যাচারী ও রক্তলিপ্সু পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানের লেলিয়ে দেওয়া পাক বাহিনীর বিরুদ্ধে বাংলার গণমানুষের সশস্ত্র প্রতিরোধের মাধ্যমে । নিজস্ব রাষ্ট্র বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার ভিত্তি তথা চূড়ান্ত লড়াই ১৯৭১ সালে ২৬ মার্চ থেকেই শুরু হয় । ২৬ মার্চ হল বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবস । ভারতের সাহায্য ও সহযোগীতায় দীর্ঘ নয় মাসের নিরন্তর মুক্তির লড়াইয়ের পর বিজয়ী হয় বাঙালী জাতি। অবশেষে ত্রিশ লাখ মানুষের জীবন ও দুলক্ষ মা-বোনের ইজ্জতের বিনিময়ে আমাদের চূড়ান্ত বিজয় সূচিত হলো একই বছরের অর্থাৎ ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর। আমার প্রাণপ্রিয় পিতাও মুক্তিযুদ্ধের সময় শহীদ হয়েছিলেন । আমরা ছিনিয়ে এনেছি আমাদের মহান স্বাধীনতা, আমাদের স্বাধীন বাংলাদেশ । একটি সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে বিশ্বের মানচিত্রে স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠিত হয়। বীরত্ব, সাহস ও তেজস্বীতার স্বকীয় বৈশিষ্ট্যে  বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের  ছিলেন ভাস্বর। স্বাধীনতার মহান স্থপতি হিসাবে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংগালি জাতির জন্য সম্ভাবনার অসীম দিগন্ত উন্মোচন করিয়া গিয়াছেন । কিন্তু আজ বঙ্গবন্ধু নেই। তাঁরই নির্দেশিত পথে তাঁরই কন্যা শেখ হাসিনার হাত ধরে সারা বিশ্বে বাংলাদেশ আজ উন্নয়নের বিস্ময়, দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম প্রাণশক্তি, সারা বিশ্বে উন্নয়নের অন্যতম রোল মডেল। ২০২১তার সপ্ন এদেশের মানুষের অর্থনৈতিক মুক্তি আজ আংশিকভাবে পূরণ হয়েছে ।  জাতিসংঘ বাংলাদেশকে উন্নয়নশীল দেশ হিসাবে ঘোষণা করেছে । বঙ্গবন্ধুর আদর্শের অনুসারীরা তাঁরই জেষ্ঠা কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বেই বর্তমান সরকার টানা তৃতীয়বারের মতো সাফল্যের সাথে দেশ পরিচালনা করছে। গত ২২-২৬ ফেব্রুয়ারি২০২১ নিউইয়র্কে জাতিসংঘের কমিটি ফর ডেভেলপমেন্ট পলিসির (সিডিপি) বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে এলডিসি স্ট্যাটাস পর্যালোচনা করে বাংলাদেশকে এলডিসি থেকে উন্নয়নশীল দেশের তালিকায় উত্তরণের সুপারিশ করা হয়। এটা বাংলাদেশের জন্য সত্যি এক গৌরবময় অর্জন।

আমরা মনে করি, বর্তমান সরকারের সামনে প্রধান কাজটিই হচ্ছে বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গড়ার স্বপ্ন বাস্তবায়নে দৃঢ়ভাবে এগিয়ে যাওয়ার লক্ষ্যে দেশে অবশ্যই আইনের শাসন প্রতিষঠা করতে হবে, দেশে ন্যায় বিচারের স্বার্থেই প্রশাসনের প্রভাব থেকে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিশ্চিন্ত করতে হবে, ডিজিটেল নিরাপওা আইন শীঘ্রই বাতিল করতে হবে,  দূর্নীতিবাজ, ভূমিদষ্যু ও অপরাধীরা যতই শক্তিশালী হউক-তাদের আইনের আওতায় এনে কঠোর হস্তে দমন করতে হবে। মহান স্বাধীনতার ৫১তম বার্ষিকীতে,  আসুন আমরা এমন গঠনমূলক চিন্তাচেতনায় উদ্বুদ্ধ হই, মহান স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় গনতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষ অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশই আগামীতে সত্যিকার অর্থে বাংলাদেশকে এগিয়ে চলার পথ মসৃন করবে।

মহান স্বাধীনতার ৫১তম  বার্ষিকীতে আসুন আমরা শপথ করি, যে অসাম্প্রদায়িক, গণতান্ত্রিক, ধর্মনিরপেক্ষ ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গঠনের স্বপ্ন নিয়ে এ দেশের কৃষক, শ্রমিক ছাএজনতা তথা সাধারণ মানুষ অস্ত্র হাতে তুলে নিয়েছিল, জীবনপণ শপথ নিয়েছিল, ছিনিয়ে এনেছিল আমাদের মহান স্বাধীনতা -তা বাস্তবায়ন করার দায়িত্ব সরকার, রাজনৈতিক দল, বুদ্ধিজীবি, ছাএজনতাসহ আমাদের সবার । মহান স্বাধীনতার দিবসে আমাদের আরও শপথ হউক, মহান স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃতি প্রতিরোধ করা, ধর্মনিরপেক্ষ, গনতান্ত্রিক ও অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করা, সর্বক্ষেত্রে স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা সমুন্নত রাখা, স্বাধীনতা বিরোধী উগ্র মৌলবাদী ও সাম্প্রদায়িক শক্তির কার্যকলাপ ও আস্ফালন ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিরোধ করা, সর্বোপরি প্রজন্ম থেকে প্রজন্মকে ২৫ মার্চের নারকীয় হত্যাযজ্ঞ,  আমাদের বীরগাথা মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতা সংগ্রাম সম্পর্কে নূতন প্রজন্মকে জানানোর দায়বদ্ধতা সরকার, রাজনৈতিক দল আমার আপনার অর্থাৎ আমাদের সকলের। গভীর শ্রদ্ধাঞ্জলী জ্ঞাপন করছি বীর মুক্তিযোদ্ধাদের। বিনম্র শ্রদ্ধাঞ্জলী জ্ঞাপন করছি মুক্তিযুদ্ধে নিহত সকল শহীদদের প্রতি । আপনাদের সকলের প্রতি রইলো  মহান স্বাধীনতার ৫১তম বার্ষিকীর প্রীতি, শুভেচ্ছা, ভালোবাসা  ও অভিনন্দন।

বিদ্যুৎ ভৌমিক। কলামিষ্ট, লেখক ও সিবিএনএ’এর উপদেষ্টা

মন্ট্রিয়ল, ক্যানাডা, ২৫ মার্চ, ২০২২ খ্রী:

 




সর্বশেষ সংবাদ

দেশ-বিদেশের টাটকা খবর আর অন্যান্য সংবাদপত্র পড়তে হলে CBNA24.com

সুন্দর সুন্দর ভিডিও দেখতে হলে প্লিজ আমাদের চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

আমাদের ফেসবুক পেজ   https://www.facebook.com/deshdiganta.cbna24 লাইক দিন এবং অভিমত জানান

 

সংবাদটি শেয়ার করুন