ফিচার্ড মত-মতান্তর

ষড়যন্ত্রের রক্তাক্ত অধ্যায় ।।। প্রজ্ঞা চৌধুরী প্রাপ্তি

ষড়যন্ত্রের রক্তাক্ত অধ্যায় ।।। প্রজ্ঞা চৌধুরী প্রাপ্তি
 
চির জাগ্রত উন্নত শির বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান । যাঁর বজ্রকণ্ঠে অনুরণিত হয়ে বাংলার সকল শ্রেণী – পেশার মানুষ স্বাধীনতা যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে স্বীয় প্রাণ উৎসর্গ করতেও দ্বিধা বোধ করেনি । 
১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ জাতীয় ও প্রাদেশিক পরিষদে নিরঙ্কূশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে । ১৯৭১ সালের ৩রা জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে রমনার রেসকোর্স ময়দানে আওয়ামী লীগ আয়োজিত শপথ গ্রহণ অনুষ্টানে  লাখো জনতার উপস্থিতিতে প্রাদেশিক পরিষদে নির্বাচিত সদস্যগণ শপথ বাক্য পাঠ করেন । উক্ত শপথবাক্যে জনগণের সম্পদ ৬ দফা ও ১১ দফার প্রতি অবিচল থাকার অঙ্গীকার ব্যক্ত করা হয় । কিন্তু তদানীন্তন কুচক্রি পাকশাসক গোষ্ঠী আওয়ামী লীগের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে নারাজ । ১৯৭১ সালের ৩রা মার্চ প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান জাতীয় পরিষদের অধিবেশন আহবান করেন । কিন্তু ‘Pakistan Peoples Party – এর নেতা জুলফিকার আলী ভুট্টো ‘ সে অধিবেশনে যোগদান করতে অনিচ্ছা প্রকাশ করেন । ফলে ১লা মার্চ ভুট্টোর অধিবেশনে যাওয়া অস্বীকার করাকে কারণ দেখিয়ে ইয়াহিয়া খান রেডিও ঘোষণার মাধ্যমে সেই অধিবেশন অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত করেন । শুরু হয় বাঙালির অসহযোগ আন্দোলন । বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে কোনো প্রকার আলোচনা না করে অধিবেশন স্থগিত করায় সর্বদলীয় সংগ্রাম পরিষদ ও বঙ্গবন্ধুর আহবানে ২রা মার্চ ঢাকায় ও ৩রা মার্চ সারা দেশে হরতাল পালিত হয় । হরতাল চলাকালীন পুলিশের গুলিতে অনেকে আহত ও নিহত হয় । ১৯৭১ সালের ৭ই মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান রেসকোর্স ময়দানে ( বর্তমান সোহরাওয়ার্দি উদ্যান ) এক ঐতিহাসিক ভাষণে পশ্চিম পাকিস্তানিদের শোষণ – শাসন , বঞ্চনার ইতিহাস ,বাঙালির রাজনৈতিক ইতিহাস তুলে ধরার পাশাপাশি বাংলাদেশের স্বাধীনতার ডাক দেন । তার ডাকে আপামর বাঙালি যুদ্ধে অংশগ্রহণ করে এবং বিজয় অর্জন করে । তাঁর ৭ ই মার্চের এই ভাষণকে ২০১৭ সালে UNESCO -‘ WORLD DOCUMENTARY HERITAGE ‘ হিসাবে স্বীকৃতি প্রদান করে । তাঁর বজ্রহুংকারে পাকশাসকের হৃদয়ে কম্পন আরম্ভ হয় । তারা দেশকে মেধাশূন্য করার সিদ্ধান্ত নেয় – তারা ১৯৭১ সালের ১৭ই মার্চ ” অপারেশন সার্চলাইটের ” নীল নকশা তৈরী করে এবং ২৫শে মার্চ তা বাস্তবায়ন করে । এতে বঙ্গবন্ধু ভীষণ ক্রোধান্বিত হন এবং ২৬শে মার্চ প্রথম প্রহরে ” WARELESS ” সংযোগে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন । তাঁর ঘোষণার বাংলা অনুবাদটি হলো – ” ইহাই হয়তো আমার শেষ বার্তা । আজ হইতে বাংলাদেশ স্বাধীন । আমি বাংলাদেশের জনগণকে আহবান জানাইতেছি যে , যে যেখানে আছে , যাহার যা কিছু আছে , তাই নিয়ে রুখে দাঁড়াও , সর্বশক্তি দিয়ে হানাদার বাহিনীকে প্রতিরোধ করো । পাকিস্তানি বাহিনীর শেষ সৈন্যটিকে বাংলার মাটি হইতে বিতারিত না করা পর্যন্ত এবং চূড়ান্ত বিজয় অর্জন না করা পর্যন্ত লড়াই চালিয়ে যাও । ” এই ঘোষণার পরপরই পাক – বাহিনী তাঁকে গ্রেপ্তার করে পশ্চিম পাকিস্তানে নিয়ে যায় । এর পূর্বেও বহুবার তিনি দেশ সংক্রান্ত সমস্যার দরুন কারাবরণ করেন । “অবশেষে ১৯৭১ সালের ১৬ই ডিসেম্বর বৃহস্পতিবার বিকাল ৪:৩১ মিনিটে জেনারেল নিয়াজী ৯৩,০০০ পাকসৈন্য নিয়ে আত্মসমর্পন করেন । ” যুদ্ধ শেষে ১৯৭২ সালের ১০ই জানুয়ারি দেশনায়কের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন ঘটে । দেশে ফিরেই যুদ্ধ বিদ্ধস্ত দেশের কল্যাণক্রমে কাজ শুরু করেন বঙ্গবন্ধু এবং সফল হন।   তিনি জাতিসংঘে প্রথম বাংলা ভাষায় ভাষণ দান করা ব্যক্তিত্ব।  ১৯৮৪ সাল থেকে জাতিসংঘের কার্যপ্রণালিতে বাংলা ভাষা স্থান পায়।  তাঁর জীবদ্দশায় ১৯৭৪ সালে বাংলাদেশ জাতিসংঘের ১৩৬ তম রাষ্ট্র হিসাবে সদস্যপদ প্রাপ্ত হয় । এতে প্রচণ্ড  বিদ্বেষগ্রস্থ হয় বঙ্গবন্ধু এবং স্বাধীনতাবিরোধী ব্যাক্তি ও নিষিদ্ধ ঘোষিত দলসমূহ। যার ফলশ্রুতিতে, ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট দেশী বিদেশী চক্রান্তে স্বাধীনতা বিরোধী ও আওয়ামীলীগে ঘাপটি মেরে থাকা কতেক কুলাঙ্গার এবং উচ্চাভিলাষী বিপথগামী কতিপয় সামরিক কর্মকর্তার ষড়যন্ত্রে প্রায় সদ্য স্বাধীন দেশে বঙ্গবন্ধুকে শাহাদাত বরণ করতে হয়।  বিদেশে অবস্থানরত দুই তনয়া – শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা ব্যতিত পরিবারের সকল সদস্য মৃত্যুবরণ করেন।  ভবলীলা সাঙ্গ হয় এক অকুতোভয় চেতনাশক্তির। 
আজ তাঁর মৃত্যুদিবসে তাঁর প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা ।
১৫/০৮/২০২৩ ইং
সংবাদটি শেয়ার করুন