৫ম বর্ষপূর্তি

এক পশলা বৃষ্টি |||| সুচিত্রা ধর

এক পশলা বৃষ্টি |||| সুচিত্রা ধর

চৈতী আজ সন্ধ্যায় পাত্র ওর বড় বোনকে নিয়ে এসে তোকে দেখে যাবে।
কেন মা পাত্র আবার কেন দেখতে আসবে? তুমি বললে ওদের পরিবারের সবাই আমাকে পছন্দ করেছেন। এখন কেবল বিয়ের দিন তারিখ ঠিক হবে।
অমিত চাইছে তোর সাথে কথা বলতে।
কেনো কথা বলে কি হবে?
এসব কি বলছিস? যার সাথে তোর বিয়ে হবে তাকে দেখবে না? কথা বলবে না? সে তোর কেবল ছবি দেখেছে। তুই তো তাও দেখলি না। আমিও চাইছি তুই অমিতকে সরাসরি দেখবি। ওর সাথে কথা বলবি। কথা বললে পরে তোর পছন্দ হলে তাহলে বিয়ে হবে। আর…….. আর কি মা!! আমার পছন্দ না হলে কি বিয়ে হবে না? অবশ্যই বিয়ে হবে না। চৈতী তুই এমন কেন করছিস মা? তোকে জিজ্ঞেস করেছিলাম তোর পছন্দের কেউ আছে কি না। তুই না করলি তোকে তো আমরা জোর করে বিয়ে দিচ্ছি না মা। আমরা চাইছি তুই ছেলে দেখবি, কথা বলবি, দুজন দুজনকে জানবি বুঝবি তারপর দিন তারিখ ঠিক করা যাবে।
উনার সাথে ৫/৭ মিনিটের বেশী তো আর কথা বলা হবে না। ধরে নিলাম এক ঘন্টা কথা হলো, এই এক ঘন্টায় কি আমরা দুজন দুজনকে বুঝে নিতে পারবো!!! এতো বুঝাবুঝির কথা আসছে কেন? তোরা কথা বলবি, তারপর দুজন দুজনকে পছন্দ হলে বিয়ের দিন তারিখ ঠিক করা হবে। তোরা বাবা কি এতো বছরে আমাকে বুঝতে পেরেছে! ভালো ভাবে চিনতে পেরেছে? না আমি তোর বাবাকে আজ অবধি পুরোপুরি বুঝতে এবং চিনতে পেরেছি!!
তোর মা ঠিক বলেছে, তোর পছন্দের কেউ নেই যখন তখন তোকে এই ভাবেই বিয়ে করতে হবে। এটাই নিয়ম। আর অমিতও চাইছে তোর সাথে সরাসরি দেখা করতে, অমিত এই ভাবে বাসায় আসতে চাইছিলো না। বলছিলো কোন রেষ্টুরেন্টে দেখা করতে, তুই তো রাজি হলিনা। আমি কোথাও গিয়ে দেখা করতে পারবো না, বিয়ে করার কোন ইচ্ছেই আমার নেই। তোমাদের যন্ত্রনায় বিয়েতে রাজি হতে হয়েছে, তোমরা যেভাবে বিয়ে বিয়ে করছো মনে হচ্ছে আমাকে নিয়ে তোমাদের দুশ্চিন্তার শেষ নেই।
ছিঃ মা এমন করে কেন বলছিস? লেখাপড়া শেষ করে তুই এখন ব্যাংকে ভালো একটা চাকরী করছিস। এখন তোকে একটা সুপাত্রের হাতে তুলে দিতে পারলে আমাদের স্বস্তি, সব মা-বাবাই তো চান মেয়েকে ভালো একটা ছেলের হাতে তুলে দিয়ে নিশ্চিন্ত হতে । চৈতী কোন কথা না বলে মা-বাবার ঘর থেকে বের হয়ে নিজের ঘরে গিয়ে দরজা লাগিয়ে বসে রইলো।
মেয়েটার যে কি হয়েছে! বিয়ের ব্যাপারে কথা বললেই এতো রাগ করে, মন খুলে কিছু বলেও না, কিছু না বললে কেমন করে বুঝবো বলো? আমার কি মনে হয় জানো শিলা মেয়েটা হয়তো কারো কাছ থেকে কষ্ট পেয়েছে, না পারছে বলতে না পারছে সইতে। শিলা দেবী একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললেন সব সময় বন্ধুর মতো মেয়েটার সাথে আচরন করে এসেছি, মেয়েটাও আমাকে বন্ধু ভাবতো এতোদিন সেটাই মনে করে এসেছি কিন্তু এখন বুঝলাম মেয়েটা কখনোই আমাকে বন্ধু ভাবেনি। তা না হলে আমাকে অন্তত ওর মন খারাপের কারণটা খুলে বলতো। কাউকে পছন্দ করে কি না তা-ও বললো না এবং আমি ওকে দেখে কখনো বুঝতেই পারিনি ওর জীবনে কেউ এসেছে বা এসেছিলো।
মন খারাপ করোনা শিলা, মা-বাবা বন্ধুর মতো আচরন করলেও সন্তানরা সব কথা মা-বাবাকে বলতে পারে না। চৈতীও তেমনটি তোমার কাছে অনেক কিছু বলতে পারেনি। যাই হোক চৈতী অমিতের সাথে কথা বলুক দেখা যাক কি হয়।
হুম তুমি ঠিক বলেছে।
এই চৈতী অমিত এবং ওর বোন কাব্য চলে এসেছে, তৈরী হয়ে নেয় মা।
তৈরী হবো মানে?
তৈরী হবি মানে হলো শাড়ী পড়বি এবং সাঁজবি। এতো সব আমি পারবো না, আমি কেবল ড্রেসটা পাল্টে এই ড্রেসটা পরে যাবো।
শিলা দেবী রাগ করে বললেন – তুই এতো বাড়াবাড়ি কেনা করছিস? তোকে তো জোর করে বিয়ে দিচ্ছি না আমরা। তোর পছন্দের কেউ থেকে থাকলে বল আমাদের। আর শাড়ী পড়ে যাওয়া এবং সেঁজে যাওয়া মানে ওদেরকে সম্মান দেয়া। অমিত ছেলেটাও তো খুব সুন্দর ভাবে তৈরী হয়ে এসেছে, চৈতী আর কোন কথা না বলে শাড়ী পড়লো এবং হালকা সাঁজলো।
এখন হাতে করে কিছু কি নিয়ে যেতে হবে?
না কিছু নিয়ে যেতে হবে না, আমি যাচ্ছি ওদের সাথে কথা বলতে। তুই ঠিক এক মিনিট পরে বসার ঘরে আসবি। কথাটি বলে শিলা দেবী রাগ করে ঘর থেকে বেরিয়ে গেলেন।
চৈতী লিভিংরুমে ঢুকে অপুকে দেখে চমকে উঠে। নিজের চোখকে যেনো বিশ^াসই করতে পারছে না, অপুর সাথে ওর বিয়ের কথা- বার্তা হচ্ছে!! সবাই অমিত নামটা মুখে নেয়ায় সে বুজতে পারেনি। অমিতের অন্য নাম অপু সেটা চৈতী জানে, তবে কখনো অমিত নামটা ধরে না ডাকায় অমিত নামটা ও ভুলেই গিয়েছিলো ও যদি অপুর ছবিটা দেখতো তাহলে কখনোই বিয়েতে রাজি হতো না।
কেমন আছো চৈতী?
ভালো।
ঐদিন তোমার বান্ধবী রূপার বিয়েতে তোমাকে প্রথম দেখি। মা-বাবাও তোমাকে দেখেছেন। পরীর মতো সুন্দর মেয়েকে দেখে সবার পছন্দ হয়ে গেলো, অমিত বিয়েতে যায়নি তাই দেখা হয়নি। তোমরা দুজন দুজনকে পছন্দ করলে পরে মা-বাবা বাসায় এসে বিয়ের কথা-বার্তা ফাইনাল করবেন। আচ্ছা তোমরা কথা বলো। হ্যা তোমরা কথা বলো আর মা কাব্য এসো তোমার মেসোর সাথে গল্প করবে। শিলা দেবী এবং কাব্য ওদের দুজনকে কথা বলার সুযোগ করে দিয়ে লিভিং রুম থেকে বেরিয়ে গেলেন।
অপু চৈতীর পাশে গিয়ে বসতেই চৈতী একটু সরে বসলো।
এমন করছো কেন? চৈতী জবাব দিলো না।
চৈতী আমি মনে করেছিলাম আমার আর তোমার বিয়ের কথাবার্তা হচ্ছে সেটা তুমি জানো, মানে আমার সাথে তোমার বিয়ের কথাবার্তা হচ্ছে সেটা তুমি জানো কিন্তু আমাকে দেখে তুমি যেভাবে চমকে উঠলে তাতে ভুবই অবাক হয়েছি। ব্যাপারটা কি আমি বুঝতেই তো পারছি না। তুমি কি আমার ব্যাপারে কিছুই জানতে না!! আমা ছবি কি তুমি দেখো নি? চৈতী না সুচক মাথা নাড়ায়।
কথা বলো মাথা নেড়ে জবাব দিচ্ছো কেন? চৈতী এই কথারও কোন জবাব দিলো না।
এসব কি হচ্ছে চৈতী, তুমি যাকে বিয়ে করতে যাচ্ছো তার ছবিটা দেখার পর্যন্ত প্রয়োজন অনুভব করলে না? ছবি দেখেও তো পছন্দ অপছন্দের ব্যাপার আছে, তারপরে দেখা করেও কথা বলার প্রয়োজন অবশ্যই আছে, তাই না? আমি দেখা করতে না চাইলে তুমি হয়তো জানতেই পারতে না আমার সাথে তোমার বিয়ে হচ্ছে। বিয়ের দিন আমাকে দেখতে পেতে!! এসব কেনো করছো জানতে পারি? চৈতী কোন কথা না বলে আগের মতো চুপ করে বসে রইলো।

চৈতী আমার দিকে তাকাও…….. তাকাও……….. বলছি………., কি হলো তাকাও………..। উফ্ তুমি এসব কি শুরু করলে। আমার উপর এতোই অভিমান তোমার কার সাথে বিয়ে দেয়া হচ্ছে……. কার সাথে বাকী জীবনটা কাটাতে যাচ্ছো সেটা জানার আগ্রহ পর্যন্ত নেই!! মাই গড!! তুমি কি আমার দিকে তাকাবে? কথাটি বলে অপু চৈতীর কাছে গিয়ে বসলো। আমাকে ঘৃনা করে নিজের জীবনটা কেন নষ্ট করতে যাচ্ছিলে!! বিয়ের জন্য আমার পরিবার আমাকে চাপ দিচ্ছিলেন, অনেক গুলো মেয়ের ছবির সাথে তোমার ছবিটি যখন দেখলাম তখন আর নিজেকে আটকাতে পারলাম না, যখন জানতে পারলাম তোমার পরিবারের সবাই আমাকে পছন্দ করেছেন তখন ভাবলাম তুমি আমার সাথে সারাটা জীবন কাটাতে চাইছো, কি যে আনন্দে দিনগুলো কাটছিলো, প্রথমে ভাবলাম তোমার ফোন নাম্বারটা নিয়ে কথা বলবো। পরে ভাবলাম সরাসরি দেখা করবো। এতো দিন পর আমাকে দেখে তোমার অনুভূতিটা সরাসরি দেখার খুব ইচ্ছে হলো, তাই……… কিন্তু আমাকে দেখে তোমার চমকে যাওয়াটা দেখে মনটা খুবই খারাপ হয়ে গেলো, আশ্চর্য চৈতী তুমি কথা বলছো না কেন? এই দিকে তাকাও……… এই বলে অপু চৈতীর গালে স্পর্শ করতে যাবে চৈতী একটু দূরে সরে গেলো, অপু একটা দ্বীর্ঘশ্বাস ছাড়ে। কিছ্ক্ষুন চুপ থেকে আবার বললো চৈতী ঐদিন তুমি যখন রেষ্টুরেন্টে ঢুকে দেখলে আমি একটা মেয়ের সাথে হেসে হেসে কথা বলছি তুমি আমাকে কোন কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে রাগ করে বেরিয়ে গেলে, তুমি যদি আর পাঁচটা মিনিট ঐখানে দাঁড়িয়ে থাকতে তাহলে সত্যটা তোমার চোখের সামনেই দেখতে পেতে। আমার বন্ধু হিমেলের গার্লফ্রেন্ড ছিলোও। একটা কল আসায় হিমেল বাইরে গিয়ে ফোনে কথা বলছিলো, তোমাকে কম হলেও হাজারটা কল দিয়েছিলাম। তুমি আমার কল ধরলে না। ফেইসবুক তুমি ডিএক্টিভেট করে দিলে। ওয়াটসাপ তুমি ডিলেট করে দিলে। তারপর কি করলে…….. তোমার ফোন নাম্বারটা তুমি পালটে ফেললে। তোমার বান্ধবী টিনার কাছ থেকে তোমার ফোন নাম্বারটা নিতে চেয়েছিলাম ও যেভাবে আমার দিকে রাগ করে তাকালো!! নাম্বারটা নেয়ার আর সাহসই পেলাম না। এখন তুমিই বলো আমার আর কি করার ছিলো!! তোমার কি উচিত ছিলো না সত্যাটা জানার, আমাদের ভালোবাসাটা কি এতোই টুনকো ছিলো চৈতী? এইভাবে তুমি কিভাবে হারিয়ে যেতে পারলে? প্রায় দেড় বছর হতে চললো, নিজেকে কষ্ট দিচ্ছিলে সাথে আমাকেও। তুমিই বলো চৈতী আমাকে এইভাবে কষ্ট দেয়াটা কি তোমার উচিত হলো। আমি প্রতিটা দিন তোমার কলের প্রতীক্ষায় কাটিয়েছি, প্রতিটা মূহুর্ত মনে হতো এই বুঝি তুমি আমাকে কল করবে, আমার সাথে দেখা করতে আসবে, কাল রাত অবধি তোমার ফোনের প্রতীক্ষায় থেকেছি। ভেবেছিলাম বিয়ের কথা বার্তা হচ্ছে তুমি হয়তো বা কল করবে, কেমন আছি জানতে চাইবে।
চৈতী কোন কথা না বলে নিঃশ^ব্দে কাঁদতে থাকে, এই চৈতী কাঁদছো কেন? কি হয়েছে? চৈতী কোন কথা না বলে অপুকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে লাগলো। চৈতী কেউ এসে পড়লে খুব অস্বস্থিকর পরিস্থিতিতে পড়ে যাবো, প্রিজ কেঁদোনা স্বাভাবিক হও। চৈতী অপুর কথা শুনলো না। আগের মতোই জড়িয়ে ধরে কাঁদতে লাগলো।


# সুচিত্রা ধর গল্পকার । মন্ট্রিয়ল


সর্বশেষ সংবাদ

দেশ-বিদেশের টাটকা খবর আর অন্যান্য সংবাদপত্র পড়তে হলে CBNA24.com

সুন্দর সুন্দর ভিডিও দেখতে হলে প্লিজ আমাদের চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

সংবাদটি শেয়ার করুন