ক্রাইস্টচার্চে মুসলিমদের ওপর হামলা নিয়ে ছবির কড়া সমালোচনা , প্রযোজকের পদত্যাগ
নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চে দুটি মসজিদে জুমার নামাজের সময় সন্ত্রাসী ব্রেন্টন টেরেন্টের নৃশংস হামলা নিয়ে তৈরি হচ্ছে ছবি ‘দে আর আস’। কিন্তু এ নিয়ে ভয়াবহ সমালোচনার মুখে পদত্যাগ করেছেন এর প্রযোজক ফিলিপ্পা ক্যাম্পবেল। এ ছবির তীব্র সমালোচনা করেছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী জাসিন্দা আরডেন, মেয়র লিয়ানি ডালডিয়েন, মুসলিমরা। তাদের অভিযোগ, এ ছবির মাধ্যমে নিহত মুসলিমদের দিকে দৃষ্টি না দিয়ে ফোকাস করা হচ্ছে প্রধানমন্ত্রী আরডেনের ওপর। এর মধ্য দিয়ে শ্বেতাঙ্গ ফ্লেভার দেয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। এ সমালোচনার ঝড়ে ছবিটির প্রযোজক পদ ত্যাগ করেছেন ফিলিপ্পা ক্যাম্পবেল। তার মানে এই নয় যে, যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থনপুষ্ট এই ছবির কাজ বন্ধ হয়ে যাবে একেবারে। এ খবর দিয়েছে অনলাইন বিবিসি।
এতে আরো বলা হয়েছে, ২০১৯ সালের ১৫ই মার্চ ক্রাইস্টচার্চে দুটি মসজিদে নৃশংস হামলা করে সন্ত্রাসী টেরেন্ট হত্যা করে কমপক্ষে ৫১ জন মুসলিমকে। এর মধ্যে কয়েকজন বাংলাদেশিও ছিলেন। এ ঘটনা নিয়ে ‘দে আর আস’ ছবি নির্মাণ করছিলেন ফিলিপ্পা ক্যাম্পবেল। তিনি এ ছবির সঙ্গে জড়িত থাকার জন্য ক্ষমা চেয়েছেন। একই সঙ্গে এতে অনুভূতিতে আঘাত লাগবে এ বিষয়টি তিনি বুঝতে পারেন নি বলে জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, কয়েকদিনে এ নিয়ে জনগণের সমালোচনার কথা জানতে পেরেছি। জনগণের দৃষ্টিভঙ্গি কতটা শক্তিশালী তা আমি বুঝতে পেরেছি। এখন বুঝতে পারছি এই সময়ে ২০১৯ সালের ১৫ই মার্চ নিয়ে ছবি করা কতটা কাঁচা কাজ। ফলে হতাশা নিয়ে এই প্রকল্পের সঙ্গে আমি আর যুক্ত থাকবো না। প্রস্তাবিত ওই ছবিটি ২০১৯ সালে হামলার পর প্রধানমন্ত্রী জাসিন্দা আরডেনের ভূমিকার ওপর ফোকাস করা হচ্ছে।
সোমবার এই ছবি নির্মাণ নিয়ে সমালোচনা করেছেন প্রধানমন্ত্রী আরডেন। তিনি বলেছেন, এই প্রকল্পটি হাতে নেয়া হয়েছে ভুল সময়ে এবং একটি ভুল বিষয়ের ওপর জোর দেয়া হয়েছে এতে। উল্লেখ্য, ওই হামলার পর জাসিন্দা আরডেন বিশ্বজোড়া খ্যাতি পেয়েছিলেন তার ভূমিকার জন্য। তিনি যেভাবে মুসলিমদের পাশে গিয়ে দাঁড়িয়েছিলেন, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করেছেন তার প্রশংসা সবার মুখে মুখে। কিন্তু তাই বলে তার ভূমিকাকে বড় করে দেখানো হোক ছবিতে এটা একটা ভুল ধারণা বলে মনে করেন তিনি।
এখানেই তার মহত্বের প্রকাশ। কারণ, বাকি বিশ্ব যখন নিজের প্রচারণায়, নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত তখন তাকে নিয়ে একটি ছবি নির্মাণ হচ্ছে। এতে তার ভূমিকাকে জোরালোভাবে দেখানো হচ্ছে। এতে তার খুশি হওয়ার কথা। কিন্তু না, তিনি অন্যদের মতো নন। নিজেকে নিয়ে এমন ছবি নির্মাণ একটি ভুল ধারনা বলে মন্তব্য করেছেন।
প্রধানমন্ত্রী জাসিন্দা আরডেন স্থানীয় একটি মিডিয়াকে বলেছেন, আমার দৃষ্টিতে, এটা অবশ্যই একান্ত আমার ব্যক্তিগত দৃষ্টিভঙ্গি- আমার মনে হচ্ছে নিউজিল্যান্ডের জন্য এ কাজটা খুব বেশি তাড়াতাড়ি করা হচ্ছে এবং বিষয়টি কাঁচা। এখানে অনেক কাহিনী আছে, এখনও সেসব কথা বেরিয়ে আসবে। তাই এর মধ্যে আমাকে রাখা হোক এটা আমার বিবেচনা নয়। উল্লেখ্য, ২০১৯ সালের নৃশংস হামলার পর জাসিন্দা আরডেন যে বক্তব্য দিয়েছিলেন সেখান থেকে শব্দ নিয়ে ছবিটির নাম প্রস্তাব করা হয়েছে ‘দে আর আস’।
ওই হামলায় নিহত হয়েছিলেন আয়া আল উমারির ভাই হোসেন। তিনি বলেছেন, যে কথা বলা উচিত, এই ছবিতে তা নেই। এ অবস্থায় এ ছবিটি বাতিল করার আহ্বান জানিয়েছে ন্যাশনাল ইসলামিক ইয়ুথ এসোসিয়েশন। তাদের এমন আবেদনে সাড়া দিয়ে স্বাক্ষর করেছেন কমপক্ষে ৬০ হাজার মানুষ। এতে যুক্তি দেখানো হয়েছে যে, এ ছবির কেন্দ্রীয় চরিত্রে একজন শ্বেতাঙ্গ নারীকে (জাসিন্দা আরডেন) দেখানোর পরিবর্তে এই ভিকটিম, যারা বেঁচে আছেন তাদেরকে দেখানো উচিত। কিন্তু তাদেরকে একপেশে করে রাখা হয়েছে। এতে আরো বলা হয়েছে, এই ছবিটি নির্মাণের বিষয়ে স্থানীয় মুসলিম সম্প্রদায়ের সঙ্গে যথাযথভাবে পরামর্শও করা হয়নি।
এমন ছবির বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন ক্রাইস্টচার্চের মেয়র লিয়ানি ডালজিয়েল। তিনি বলেছেন, এই ছবির ক্রুদেরকে তার শহরে স্বাগত জানানো হবে না। ছবি সংশ্লিষ্টদের সমালোচনা করে তিনি বলেন, এখানে এটা করা ঠিক হবে তারা এমনটা ভেবেছেন। এ বিষয়টি আমাকে ক্ষুব্ধ করে। উল্লেখ্য, এই ছবিতে মধ্য-বামপন্থি নেত্রী হিসেবে দেখানোর কথা অস্ট্রেলিয়ার অভিনেত্রী রোজ ব্রায়ানকে। এ ছবি থেকে তাকে সরে যেতে আহ্বান জানানো হয়েছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত তিনি সাড়া দেননি।
উল্লেখ্য, ২০১৯ সালের সন্ত্রাসী হামলা চালানো স্বঘোষিত শ্বেতাঙ্গ আধিপত্যবাদী ব্রেন্টন টেরেন্টকে প্যারোলবিহিন যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে। নিউজিল্যান্ডের ইতিহাসে সে-ই প্রথম এমন শাস্তি ভোগ করছে। ২০১৯ সালের ১৫ই মার্চ সে আল নূর মসজিদে নামাজ আদায়রত মুসল্লিদের ওপর এলোপাতাড়ি গুলি করে এবং সেই দৃশ্য ফেসবুকে সরাসরি সম্প্রচার করে মাথায় থাকা হেডক্যামের মাধ্যমে। এরপর সে ছুটে যায় লিনউড ইসলামিক সেন্টারে। সেখানে লোকজনের ওপর গুলি করে। এরপর গুলি করে জানালায়।