ফিচার্ড বিশ্ব

ফিলিস্তিন-ইসরায়েল শান্তি প্রতিষ্ঠা, অন্তরায় ‘দুমুখো’ যুক্তরাষ্ট্র?

গাজায় সংঘাত গড়াল দ্বিতীয় সপ্তাহে প্রাণহানি ছাড়াল ২০০

ফিলিস্তিন-ইসরায়েল শান্তি প্রতিষ্ঠা, অন্তরায় ‘দুমুখো’ যুক্তরাষ্ট্র?

জাহাঙ্গীর সুর / ১৭ মে, ২০২১। জোর যার মুল্লুক তার’? দীর্ঘ বহুদশক ধরে চলমান ফিলিস্তিন-ইসরায়েল সংঘাতে প্রবাদই যেন প্রতিম হয়ে উঠছে। গাজায় চলতি আগ্রাসন দুই সপ্তাহে গড়ানোর বেলাতেও ‘জোরের জয়’ দেখা যাচ্ছে; যুক্তি কিংবা মানবতার পথে যেন কেউ নেই। উল্টো, শান্তির বুলি আওড়ানো, ‘বিশ্বমোড়ল’ তকমায় আত্মতৃপ্ত যুক্তরাষ্ট্র ‘দুমুখো’ আচরণ করছে- যুদ্ধবিরতিসহ অন্তত আপাত শান্তি প্রতিষ্ঠায় এক সপ্তাহে তিন দফায় বাধ সেধেছে পশ্চিমা দেশটি। সেজন্য, ওবামা আমলে যেমন, ঠিক তেমন বাইডেন আমলেও একই প্রশ্ন উঠেছে, ফিলিস্তিন-ইসরায়েল শান্তি বিনির্মাণে আসল অন্তরায় কি তবে যুক্তরাষ্ট্রই?

অধুনা যে সংঘাত (যুদ্ধ বলাই অধিক যৌক্তিক) চলছে, এর শুরু অবশ্য হামাসের হাত ধরে। পশ্চিমারা এদের ‘জঙ্গিগোষ্ঠী’ বলে অ্যাখ্যা দেয়। তবে, গাজা নিয়ন্ত্রণ করা সশস্ত্র এ গোষ্ঠী নিজেদের ফিলিস্তিনের ‘মুক্তিকামী দল’ বলে দাবি করে। ১০ মে গাজা থেকে ওরা ইসরায়েলের ওপর রকেট হামলা চালায়। ব্যস, কার না আছে ‘আত্মরক্ষার অধিকার’- পাল্টা বিমান হামলা চালানো শুরু হলো গাজার ওপর। ইসরায়েলের দাবি, তারা হামাসের ‘জঙ্গি’ নিধন করছে, কিন্তু মরছে তো নিরীহ নারী আর শিশুরাও। তেল আবিবের দাবি, একত্রিশশর বেশি রকেট হামলা করেছে হামাস; এতে নিহত হয়েছেন দ্ইু শিশুসহ ১০ ইসরায়েলি। যুদ্ধবিমানসহ ভারী ভারী প্রতিআক্রমণে গাজায় প্রাণহানির সংখ্যা ছাড়িয়ে গেছে দুইশ; এদের মধ্যে ৫৯ শিশু ও ৩৫ নারী রয়েছেন। ইসরায়েল বলছে, নিহত ফিলিস্তিনিদের মধ্যে ১৩০ জনই ‘জঙ্গি’।

কিন্তু হামাস কেন হামলা করে? এর শেকড় এক সপ্তাহ, এক মাস, এক বছর, এক দশকই নয়, বরং এক শতাব্দীকাল আগে প্রোথিত আছে। সহজে চোখে দেখা যায় এমন যুদ্ধ-শেকড় অন্তত ১৯৪৮ সালের ‘জোর দখল’-এর ঘটনা, সেবার সাত লাখ ফিলিস্তিনিকে নিজঘর, নিজ ভূমি থেকে তাড়িয়ে দিয়ে দখল নিয়েছিল ইহুদিরা, একটি ‘ইহুদিরাষ্ট্র’ গঠনের আরও প্রাচীন প্রকল্প সেবার বাস্তবতার প্রথম ভিত তুলে দিয়েছিল।

তো, নিজ জমি থেকে উৎখাত হয়ে যাওয়ার দাগ এবং ক্রমাগত অবশিষ্ট আশ্রয় থেকে উচ্ছেদের আতঙ্ক- কী করে শান্ত থাকবে মুক্তিকামী মানুষেরা। ফলে, কে আগে দামামা বাধাল, এর চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো, কার কারণে এই হাঙ্গামা, কীজন্য এই অশান্তি।

সেই ‘কারণ’টা আর যা-ই হোক, অশান্তি বাধিয়ে রাখার অনুঘটক হিসেবে সম্ভবত যুক্তরাষ্ট্র দায় এড়াতে পারে না।

এই যেমন ওয়াশিংটন পোস্টের -যারা নিজ দেশের সরকারের ‘অপ-পদক্ষেপ’ বা ‘অন্যায় হস্তক্ষেপ’ নিয়ে হাটে হাঁড়ি ভাঙে- সোমবারের প্রতিবেদন বলছে, ৫ মে ইসরায়েলের কাছে ৭৩ কোটি ৫০ লাখ ডলারের সামরিক অস্ত্র বিক্রির অনুমোদন দিয়েছেন বাইডেন। এর মাত্র দিন চারেক পরই চলমান সংঘাত শুরু।

এতেই বোঝা যায়, দীর্ঘদিন ধরে ফিলিস্তিন-ইসরায়েল শান্তি প্রতিষ্ঠায় মোড়লগিরির ভূমিকায় থাকার ‘ভান’ করে আসছে যুক্তরাষ্ট্র। একদিকে বলছে, শান্তি চাই, অন্যদিকে অস্ত্র দিচ্ছে এবং অতি-অবশ্যই এই সামরিক সমর্থন একপক্ষকে, ইসরায়েলকে। যেন ওদের অস্ত্রবিক্রিই আসল কথা, ‘শান্তির বারতা’ সে তো কৌশলী হাতিয়ার মাত্র।

এমনকি, বাইডেনশিবিরের এক ডেমোক্র্যাট সংসদের নিম্নকক্ষের পররাষ্ট্রবিষয়ক কমিটিকে বলেছেন, ‘চাপ প্রয়োগ করে যুদ্ধবিরতিতে ইসরায়েলকে রাজি না করিয়ে স্মার্ট বোমার এই চালান অনুমোদনের অর্থ হলো, হত্যাযজ্ঞ আরও উসকে দেওয়া।’

আত্মরক্ষার নামে ইসরায়েল যা করছে, তা যে গণহত্যার শামিল, এ কথা প্রতিধ্বনিত হচ্ছে বিশ্বদেয়ালে। শুধু ‘বধির’ যুক্তরাষ্ট্র সম্ভবত তা শুনতে পাচ্ছে না। নইলে, মোড়ল হিসেবে ফোন করে কথা বলার সময় প্রধানমন্ত্রীকে বাইডেন কেন বলবেন, ‘ইসরায়েলের আত্মরক্ষার অধিকার আছে’।

যুক্তরাষ্ট্রই বা একা দায় নেবে কেন? ‘এক্ষুণি হামলা বন্ধ করুন’ বললেও জার্মানির চ্যান্সেলর অ্যাঞ্জেলা মেরকেলও বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুকে ফোন করে আশ্বস্ত করেছেন, ‘ইসরায়েলের পাশে জার্মানি আছে; গাজার হামলা থেকে নিজেদের রক্ষার অধিকার আছে আপনাদের।’

যুদ্ধবিরতির প্রশ্নে ইসরায়েলের অবস্থান অবশ্য পরিষ্কার- বিরতির সুযোগে নিজেদের আরও সংঘবদ্ধ করে হামাস যদি মাসখানেক পর ফের রকেট ছুড়ে, তেল আবিবকে বাধ্য করে পাল্টা হামলা করতে, তা হলে আর যুদ্ধবিরতির কী মানে। দেশটির কূটনীতিক মার্ক রেগেভ যেমন বলেছেন, ‘আমাদের স্থায়ী একটা সমাধান দরকার।’

সম্ভবত বাইরের কোনো শক্তি শান্তির এই সমাধান এনে দিতে পারবেন না। যেমনটা মনে করছেন মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক মুখ্য পরামর্শক ডেনিস রস। বিবিসিকে তিনি বলেছেন, ‘বাইরে থেকে নয়। শেষাবধি, এই দায়িত্ব নিতে হবে ইসরায়েলি ও ফিলিস্তিনিদেরই।’- আমাদের সময়

আপনার মতামত দিন
সংবাদটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

five × four =