রাতে থানায় থেকেছেন সাংবাদিক রোজিনা ইসলাম, হাতে-গলায় নখের আঁচড়
সিবিএনএ অনলাইন ডেস্ক / ১৭ মে, ২০২১। রাতে থানা হেফাজতে থাকছেন প্রথম আলোর জেষ্ঠ সাংবাদিক রোজিনা ইসলাম। সোমবার (১৮ মে) তাকে স্বাস্থ্যমন্ত্রণালয়ে হেনস্তা করে পরে থানায় হস্তান্তর করা হয়। পরে অনেক রাতে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের উপসচিব ডা. মো. শিব্বির আহমেদ ওসমানী বাদী হয়ে প্রথম আলোর জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক রোজিনা ইসলামের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন। তিনটি ধারায় অভিযোগ এনে মামলাটি করা হয়েছে। ধারাগুলো হচ্ছে ৩৭৯, ৪১১ এবং অফিসিয়াল সিক্রেসি অ্যাক্ট এর ৩/৫ ধারা। যা বলা আছে ধারাগুলোয়।
এসময় থানা কর্তৃপক্ষ জানান, মামলায় রোজিনা ইসলামকে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে। আগামীকাল আদালতে নেওয়া হবে। রাতে সাংবাদিক রোজিনা এখানেই থাকবে।
উল্লেখ্য, সোমবার (১৭ মে) পাঁচ ঘণ্টারও বেশি সময় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে আটকে রেখে শাহবাগ থানায় হস্তান্তর করা হয় সাংবাদিক রোজিনা ইসলামকে।
রোজিনা ইসলাম পেশাগত দায়িত্ব পালনের জন্য সোমবার (১৭ মে) বেলা সাড়ে তিনটার দিকে সচিবালয়ের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে যান। পরে খবর পাওয়া যায় তাকে সেখানে কর্মকর্তারা একটি কক্ষে আটকে রেখেছেন।
রোজিনা ইসলামকে আটকে রাখার খবর পেয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমের সাংবাদিকরা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ওই ভবনে যান। কিন্তু দীর্ঘ সময় ধরে রোজিনাকে আটকে রাখার কারণ সম্পর্কে গণমাধ্যমকর্মীরা জানতে চাইলেও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা কিছুই জানাননি।
একপর্যায়ে নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা জানান, রোজিনা ইসলামের বিরুদ্ধে কিছু নথি সরানোর অভিযোগ এনে পুলিশ ডাকা হয়েছে। পরে রোজিনা ইসলামকে শাহবাগ থানায় নিয়ে রাখা হয়েছে। পুলিশ জানায়, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে সাংবাদিক রোজিনা ইসলামকে থানায় আনা হয়েছে।
প্রথম আলোর ব্যবস্থাপনা সম্পাদক সাজ্জাদ শরীফ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘সাম্প্রতিক সময়ে রোজিনা ইসলাম এই মন্ত্রণালয়ের দুর্নীতি, অব্যবস্থাপনা নিয়ে বেশ কিছু রিপোর্ট করছিলেন। যার মধ্যে নিয়োগ সংক্রান্ত দুর্নীতির রিপোর্ট ছিল। আমরা মনে করছি, এতে তিনি মন্ত্রণালয়ের আক্রোশের শিকার হয়ে থাকতে পারেন।’
‘রোজিনার হাতে-গলায় নখের আঁচড়’
প্রথম আলোর সিনিয়র রিপোর্টার রোজিনা ইসলামের দুই হাতে নখের আঁচড় আছে বলে জানিয়েছেন তার ভাই মো. সেলিম। সোমবার দিবাগত রাতে রোজিনার সঙ্গে দেখা করে এসে একথা জানান তিনি। এ সময় তিনি আরও জানান, তার গলায়ও নখের আঁচড় আছে। আর রোজিনা জানিয়েছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের একজন অতিরিক্ত সচিব তার হাত দিয়ে বুকে চেপে ধরে। পরে হাঁটু দিয়েও বুকে চেপে ধরেন।
তিনি বলেন, আমরা অনেক উৎকণ্ঠার মধ্যে আছি। রোজিনা মানসিকভাবে অনেক ভেঙে পড়েছেন। সচিবালয়ের মধ্যে একজন অতিরিক্ত সচিব তার বুকের ওপরে হাঁটু দিয়ে চেপে ধরেছে, হাত দিয়ে গলা চেপে ধরেছে। সে এও জানিয়েছেন, আমি এমন কোনও অন্যায় করিনি, আমার সঙ্গে অন্যায়-অবিচার করা হয়েছে।
রোজিনা তার ভাইকে আরও জানান, মহিলা অতিরিক্ত সচিব তার বুকে চেপে ধরেছে এবং কনস্টেবল বলেছে- মাটির নিচে দাবিয়ে দিতে। তার স্বাস্থ্য খাতের করা প্রতিবেদনের কারণেই এই কাজগুলো করা হয়েছে বলে রোজিনা ইসলাম অভিযোগ করেন।
তিনি আরও জানান, সেখানে চার পাঁচজন ছিল। এর মধ্যে কনস্টেবল মিজানকে চিনতে পারেন রোজিনা ইসলাম। আর অতিরিক্ত সচিবকে চিনতে পেরেছেন। আর কাউকে চিনতে পারেননি।
সেসময় রোজিনা ভাইয়ের কাছে জানতে চান, সাংবাদিকরা কেউ তাকে ভুল বোঝেননি তো, সবাই তার পাশে আছে কি?
তিনি আরও বলেন, আমরাও পরিবারের পক্ষ থেকে শঙ্কা প্রকাশ করছি। সচিবালয় থেকে যখন নিয়ে আসা হলো তখন বলা হচ্ছিল হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার কথা, কিন্তু থানায় নিয়ে আসে। এখন আবার কোন হাসপাতালের কথা বলে কই নিয়ে যায়। এজন্য আমরা চিন্তা করেছি এখানেই রাতে থাকবে। সকালে আমরা সবাই কোর্টে যাব।
তিনি সাংবাদিকের সংগঠনগুলোর কাছে করজোড়ে অনুরোধ করেছেন, তাদের পাশে থাকতে।
রোজিনার শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে তিনি বলেন, তার স্বামী অনেক কষ্টে তাকে অল্প একটু খাইয়ে দিয়েছে।
শারীরিক নির্যাতনের অভিযোগে মামলা করবেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, এখনও সিদ্ধান্ত নেয়নি। আপনাদের অনেক সংগঠন আছে। যার যার জায়গা থেকে করতেই পারেন আমরা সেটাও আশা করছি। -বাংলা ট্রিবিউন ( রাতে থানায় থেকেছেন সাংবাদিক রোজিনা ইসলাম, হাতে-গলায় নখের আঁচড় )
এস এস/সিএ
দেশ-বিদেশের টাটকা খবর আর অন্যান্য সংবাদপত্র পড়তে হলে CBNA24.com
সুন্দর সুন্দর ভিডিও দেখতে হলে প্লিজ আমাদের চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন
আমাদের ফেসবুক পেজ https://www.facebook.com/deshdiganta.cbna24 লাইক দিন এবং অভিমত জানান