সিদ্ধার্থ সিংহের তিনটি কবিতা
১. বর্ষাদিন
আমাকে দেখলে ও ভাবে মুখ ফিরিয়ে নাও কেন?
আকাশে রামধনু উঠলে সবাই হাঁ করে তাকিয়ে থাকে
রামধনু কাউকে বলে না—
তাকিয়ে আছ কেন গো?
পুকুরে থোকা-থোকা কচুরিপানা ফুটলে
তার ছটা সকলের নজর কাড়ে
কেউ কেউ পা ডুবিয়ে জল থেকে তুলে আনে একটা-দুটো,
কাউকে অপছন্দ হলেও
একটু তফাতে সরে গিয়ে কচুরিপানা কখনও বলে না—
আমাকে একদম ছোঁবে না।
ঝলসে যাওয়া পৃথিবীতে যখন ঝিরঝির করে বর্ষা নামে
সবাই ঘর থেকে বেরিয়ে পড়ে
বর্ষা কাউকে বিমুখ করে না।
তুমি স্কুলবাসে যাও, আসো
মাঝে মাঝেই দাঁড়াও ঝুল-বারান্দায়
আমাকে দেখলে ও ভাবে মুখ ফিরিয়ে নাও কেন?
———————————————————————–
———————————————————————–
২. কালো অক্ষর
আমার সঙ্গে প্রেম করতে হলে
সতীন নিয়েই প্রেম করতে হবে।
দিনে অন্তত ষোলো ঘণ্টা আমি তার সঙ্গে কাটাব
তার সঙ্গেই মুখোমুখি বসে কফি খাব কোনও নির্জন রেস্তোরাঁয়
স্নানঘরে ঢুকে দু’জনে মিলে বৃষ্টির ফোয়ারায় তুমুল স্নান করব…
করব খুনসুটি।
আমার সঙ্গে প্রেম করতে হলে
ওই সতীন নিয়েই আপনাকে প্রেম করতে হবে।
আমি তার ভ্রু আঁকব
ঠোঁট রাঙাব
পায়ের নখেও লাগাব লাল নীল সবুজ নেলপালিশ।
আমার সঙ্গে প্রেম করতে হলে
আমার প্রথম এবং একমাত্র শর্তই হল
ওই সতীনকে মেনে নিয়েই প্রেম করতে হবে।
সতীন মানে রক্ত, মাংস, হাড়গোড়
কিংবা একটা নিটোল ছলাৎ ছলাৎ মন নয়
সতীন মানে, সাদা কাগজের উপরে
কালো অক্ষর… কালো অক্ষর… কালো অক্ষর…
————————————————————————
————————————————————————
৩. হাইট
লোকটার নাম শুনেছিলাম।
সবাই বলতেন, লোকটার হাইট সাত ফুট তিন ইঞ্চি
ইয়া ছাতি
লম্বা লম্বা হাত।
আমি বিশ্বাস করতাম না।
দূর থেকে যে দিন দেখলাম
বুঝলাম, কেউ মিথ্যে বলেননি।
সাত ফুট তিন কী?
ঠিকঠাক মাপলে, দু’-চার ইঞ্চি বেশিই হবে।
এর ক’দিন পরেই
লোকটার সঙ্গে আমার আলাপ হল,
ভাল করে চিনলাম।
একদিন ফিতে দিয়ে মাপতে গিয়ে দেখি
তাঁর হাইট মাত্র পাঁচ ফুট চার ইঞ্চি।
পাঁচ ফুট চার!
মাপে কোনও গণ্ডগোল হচ্ছে না তো!
পরের দিন মাপতে গিয়ে দেখি
তিন ফুট ছয়,
তার পরের দিন
কোনও রকমে টেনে-টুনে দু’ফুট।
দু’ফুট! এর পরের দিন মাপতে গেলে
হয়তো আরও কমে যাবে…
আমি ছিটকে চলে এলাম।
মানুষকে আর কত ছোট হতে দেখব!
কত!
———————————————————————————
———————————————————————————