ফিচার্ড

খালাস পেলেও তিরস্কারে বিদ্ধ ট্রাম্প

খালাস
সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প

খালাস পেলেও তিরস্কারে বিদ্ধ ট্রাম্প

কংগ্রেস ভবনে নজিরবিহীন হামলার ঘটনায় প্রতিনিধি পরিষদে অভিশংসিত হলেও সিনেটে আবারও রেহাই পেলেন যুক্তরাষ্ট্রের সদ্যোবিদায়ি প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। দেশটির ইতিহাসে তিনিই প্রথম প্রেসিডেন্ট, যিনি এক মেয়াদে পর পর দুইবার পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষে অভিশংসিত হয়েছেন। আর ক্ষমতা ছাড়ার পর শুধু তাঁকে নিয়েই উচ্চকক্ষে অভিশংসনের বিচারের আয়োজন হলো।

রিপাবলিকান সিনেটররাসহ অভিশংসনপ্রক্রিয়ায় যুক্ত ডেমোক্র্যাট নেতারা মনে করেন, চূড়ান্তভাবে সিনেট থেকে অব্যাহতি মিললেও অভিশংসনপ্রক্রিয়ার আয়োজনের মধ্য দিয়ে ট্রাম্প কম তিরস্কৃত হননি; এর প্রভাব সুদূরপ্রসারীই হবে।

৬ জানুয়ারি কংগ্রেস ভবন ক্যাপিটল হিলে হামলার ঘটনার জন্য ট্রাম্পকেই ‘দোষী’ মানেন সিনেটের রিপাবলিকান নেতা মিচ ম্যাককনেলও, যদিও তিনি গত শনিবার অনুষ্ঠিত ভোটাভুটিতে অভিশংসনের বিপক্ষে রায় দেন। ৫৭-৪৩ ভোটে অভিশংসন থেকে ট্রাম্পের বেঁচে যাওয়ার পরপরই অবশ্য ম্যাককনেল বলেন, ‘ক্যাপিটল হিলে সহিংস ঘটনার আগে ট্রাম্পের আচরণ ছিল অসম্মানজনক ও কাণ্ডজ্ঞানহীন। ওই দিন সহিংসতা উসকে দেওয়ার ঘটনায় তিনি নৈতিকভাবে দায়ী।’

তিনি এও বলেন, ‘তবে যাঁরা তাঁর (ট্রাম্প) দায়িত্বজ্ঞানহীন আচরণের জন্য তাঁকে দোষী করছেন, তাঁরা লাখ লাখ ভোটারকেও অপমান করছেন। এটা দুঃখজনক বিচ্যুতি।’ ম্যাককনেল বলেন, ‘সাত কোটি ৪০ লাখ আমেরিকান ক্যাপিটল ভবনে চড়াও হননি, হয়েছিলেন কয়েক শ দাঙ্গাকারী। সাত কোটি ৪০ লাখ আমেরিকান গুজব ও ক্ষোভ ছড়ানোর কারিগর ছিলেন না, ছিলেন একজন ব্যক্তি। মাত্র একজন।’

ট্রাম্পকে অব্যাহতির পক্ষে ভোট দিলেও নর্থ ডাকোটার রিপাবলিকান সিনেটর কেভিন ক্র্যামার তাঁর তীব্র সমালোচনা করে বলেন, ‘আমি মনে করি, অভিশংসনপ্রক্রিয়াই ক্ষতির জন্য যথেষ্ট। কারণ জনগণ দেখছে কী কাণ্ডজ্ঞানহীন আচরণ তিনি সেদিন (ক্যাপিটল হিলে হামলা) করেছিলেন এবং কতটা অসংগত প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছিলেন।’ এই সিনেটর আরো বলেন, ‘আমি মনে করি, এখানে যা হচ্ছে এখন (অভিশংসনপ্রক্রিয়া) তার ভিত্তিতে তিনি (ট্রাম্প) আর সম্ভবত কখনো যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হতে চাইবেন না।’

ডেমোক্র্যাট নেতারা মনে করছেন, ট্রাম্পকে দোষী সাব্যস্ত করতে রিপাবলিকান সাতজন সিনেটর ভোট দিয়েছেন। এটিও তাঁকে কম তিরস্কার করা নয়, যদিও এতে তাঁর ভবিষ্যতে হোয়াইট হাউসে ফিরে আসার পথ বন্ধ হচ্ছে না।

সিনেটে অভিশংসন থেকে খালাস পাওয়ার পরপরই ট্রাম্পের দেওয়া বিবৃতিতেও সেই ইঙ্গিত স্পষ্ট। তাঁর ‘মেক আমেরিকা গ্রেট’ আন্দোলন সবে শুরু হয়েছে উল্লেখ করে ট্রাম্প বলেন, ‘আমরা একটি উজ্জ্বল ও অসীম সম্ভাবনার ভবিষ্যতের লক্ষ্য নিয়ে উদ্ভাসিত হব।’ তিনি বলেন, ‘আমাদের সামনে অনেক কাজ।’

অন্যদিকে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেন, ‘ইতিহাসের এই দুঃখজনক অধ্যায় আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে গণতন্ত্র ভঙ্গুর।’ এ জন্য গণতন্ত্রকে সর্বদা রক্ষা করা দরকার। এ জন্যই সবাইকে সব সময় সতর্ক থাকতে হবে।

সিনেটে ট্রাম্পকে দোষী সাব্যস্ত করতে দুই-তৃতীয়াংশ সিনেটরের সমর্থন প্রয়োজন ছিল। অবশ্য দলীয় প্রতিনিধির সংখ্যায় আধাআধি ভারসাম্যে থাকা এই উচ্চকক্ষে ডেমোক্র্যাটদের আনা অভিশংসনের বিচার থেকে এবারও যে ট্রাম্প রেহাই পেয়ে যাবেন, তা অনুমিতই ছিল।

ক্যাপিটল হিলে নজিরবিহীন সেই হামলায় উসকানি দেওয়ার অভিযোগে ট্রাম্পকে দোষী সাব্যস্ত করার পক্ষে তাঁর দল রিপাবলিকান পার্টির সাতজন সিনেটরকে পাশে পেয়েছেন ডেমোক্র্যাটরা। তবে দরকার ছিল ১৭ জন রিপাবলিকানের সমর্থন।

সিনেটের অভিশংসন বিচার মূলত একটি রাজনৈতিক প্রক্রিয়া, ফৌজদারি বিচার নয়। প্রতিনিধি পরিষদে কোনো প্রেসিডেন্ট অভিশংসিত হলে তাঁকে পদ থেকে অপসারণের জন্য সিনেটেও দোষী সাব্যস্ত হতে হয়।

গত ৪ নভেম্বরের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে পরাজিত ট্রাম্প এরই মধ্যে তাঁর মেয়াদ শেষে হোয়াইট হাউস থেকে বিদায় নিয়েছেন। ২০ জানুয়ারি প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নিয়েছেন ডেমোক্রেটিক দলের প্রার্থী জো বাইডেন। এ কারণে সিনেটের ভোটে ট্রাম্প দোষী সাব্যস্ত হলেও তাঁর অপসারণের কোনো অবকাশ ছিল না। তবে ডেমোক্র্যাটরা আশা করেছিলেন, ট্রাম্প দোষী সাব্যস্ত হলে তাঁর পুনরায় প্রেসিডেন্ট হওয়ার পথ রুদ্ধ হওয়ার সুযোগ তৈরি হতে পারে।

তবে সে চেষ্টায় সফল হতে পারেননি তাঁরা। ট্রাম্প আগামী ২০২৪ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে একজন বৈধ প্রার্থীই বিবেচিত হবেন, যদি দল তাঁকে মনোনয়ন দেয়। ক্যাপিটলে হামলায় উসকানি দেওয়ায় গত ১৩ জানুয়ারি ট্রাম্পকে অভিশংসিত করে প্রতিনিধি পরিষদ।

ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগে ২০১৯ সালে একবার প্রতিনিধি পরিষদে অভিশংসিত হন ট্রাম্প। সেবারও সিনেটের ভোটাভুটিতে তিনি রক্ষা পান।

সূত্র : সিএনএন, এএফপি, রয়টার্স, বিবিসি।

বাঅ/এমএ


সর্বশেষ সংবাদ

দেশ-বিদেশের টাটকা খবর আর অন্যান্য সংবাদপত্র পড়তে হলে CBNA24.com

সুন্দর সুন্দর ভিডিও দেখতে হলে প্লিজ আমাদের চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

সংবাদটি শেয়ার করুন