চট্টগ্রামের দৃষ্টিনন্দন- নিঃশ্বাস নেওয়ার মতো একমাত্র সেন্ট্রাল রেলওয়ে বিল্ডিং এলাকা । ছবি সিআরবি’র উইকিপিডিয়া থেকে নেওয়া। -সিবিএনএ
সেভ সিআরবি (সেন্ট্রাল রেলওয়ে বিল্ডিং, চট্টগ্রাম). SAVE CRB
পুলক বড়ুয়া।। দুঃখজনক হলেও সত্য, আজ চট্টগ্রামের মানে চট্টগ্রাম শহরের সিআরবি নিয়ে আমাদের মানে আমজনতার বা আপামর জনসাধারণের মনে ক্ষোভ-বিক্ষোভ ফুটে উঠবে ।
আরণ্যক-পাহাড়-বনানী-জনপদ নিয়ে একটুকরো আদি ও অকৃত্রিম চত্বর ।
কারণ তাকে ধ্বংস করার পাঁয়তারা চলছে হাসপাতালের নামে । আমরা কোনো হাসপাতালের বিপক্ষে নই । কিন্তু, এখানে কেন ? কোথাও একটু ফাঁকা পেলেই কি তাকে ভরাট করে ফেলতে হবে ? একটু নিঃশ্বাস-প্রশ্বাস নেওয়ার মতো জীবন্ত জায়গা কি থাকতে পারে না । এটার কি দরকার নেই ? সবকিছু কি রুদ্ধ করে ফেলতে হবে ?
একটা শহরকে কি কনসেনট্রেশন ক্যাম্প বানিয়ে ফেলতে হবে ? রড-সিমেন্ট-ইটে ভরে যাবে উন্মুক্ত প্রাঙ্গন ? তারজন্যে মৃত্তিকা-উদ্ভিদ-পর্বতকে কেবলি বলি হতে হবে ? শহর মানে কী রড-সিমেন্ট-ইটের বহর ? ধোঁয়া-ধূলি-দূষণের নহর ? বাতাবরণ ? বাঁধন ? সবুজ প্রকৃতির ছোঁয়াকে ছিঁড়ে ফেলে দিতে হবে ? শ্যামলিমাকে উচ্ছেদ করতে হবে ? শ্যামলীকে ছুঁড়ে ফেলতে হবে ? আমরা কী মূর্খের স্বর্গেবাস করছি ?
আর কতো মানুষকে বোকা বানানোর চেষ্টা করব । ভন্ডামী করে যাব । এমনিতে ত্রাহি ত্রাহি অবস্থা । শহরের প্রাণান্ত । নাভিশ্বাস । তার সুরক্ষার অভাব । তার বুকে ঠেলাঠেলি । আমাদের পরিবেশবাদী নগরপরিকল্পক নেই ? সার্বিক চিত্র দেখে তো মনে হয় না । এই কী হেলদি সিটির নমুনা ? চিন্তাধারা ?
বরং পরিবেশের ভারসাম্যহীন এই পৃথিবীতে আজ যেখানে তার সুরক্ষা ও সংরক্ষণ একান্ত জরুরী, সেখানে উল্টো তার অঙ্গহানি ? মানুষ যেখানে একটু প্রকৃতির কোলে ভালো লাগার ছোঁয়া পায়, সেই দৃশ্যপট কেন দখল করা হবে ? লুঠ হয়ে যাবে ? এখানে এখন আর কোনো ধরনের স্থাপনার মধ্য দিয়ে একে মানুষের কাছ থেকে ঢেকে দেওয়া বা কেড়ে নেওয়া মানে একটি বৈরী পদক্ষেপ । যা মানুষের মনের ওপর আঘাত । মানুষের দুদন্ড স্বস্তিকে হত্যা করা । শহরের কেন্দ্রস্থলে এরকম একটি মনোজ্ঞ মনোভূমি সৃজন করা দুরূহ । তাকে অসাড় করে ফেলার কথা আমরা কী করে ভাবতে পারি ? এসব কোনো শুভবোধের পরিচয় নয় ।
শহরে যেখানে খোলামেলা জায়গা এমনিতেই সংকুচিত, প্রকট । দিনে দিনে পুকুর, দীঘি, মুক্তাঙ্গন হারিয়ে গেছে । চিত্তবিনোদনের মতো একটুকরো নৈস্বর্গিক স্থানাভাব । সেখানে এই প্রাকৃতিক নির্বাচনগুলো লুপ্ত হয়ে গেলে কী করে হবে ?
তাই এরকম একটি স্থানের মূল্য অপরিসীম । মানুষ যাবে কোথায় । মানুষের স্বাভাবিক সুস্থতার জায়গাগুলো গলা টিপে হত্যা করার বদলে, নিত্য নতুন সিদ্ধান্ত গ্রহণের ও বাস্তবায়নের ঠাঁইয়ের কী এতই অভাব !
এটি একটি মহার্ঘ্য ভুবন । প্রতিদিন শতবর্ষী মহীরুহের কায়াময় ছায়াময় মায়াময় এ প্রাঙ্গনটি অগুনতি মানুষের পদচারণায় মুখর হয়ে ওঠে । এখানে যে শিরীষ তলায় বর্ষবরণ, বসন্তবরণ উৎসব । সে তো আজ চিরাচরিত । আমাদের চিরায়ত ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির মূলে এ তবে কোন কুঠারাঘাত ? আমাদের কৃষ্টি ও সভ্যতাকে এ কোন বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন ? প্রকারান্তরে এ তো বেদখল হয়ে যাওয়া । মুছে ফেলা । এ কোন আলামত ?
আসুন, একে মিথ্যা করে দিই । রুখে দাঁড়াই । কাঁদে কাঁদ মিলিয়ে বুক বেঁধে প্রিয় প্রকৃতির পাশে দাঁড়াই । প্রিয় প্রকৃতিকে বাঁচাই । আমাদের আত্মরক্ষা করি ।
ইতোমধ্যেই এই নয়নাভিরাম নান্দনিক অঙ্গনটি, আমাদের শহুরে কেন্দ্রভূমিতে দাঁড়িয়ে প্রাকৃতিক ঐতিহ্যের মনোরম উদযাপন নিকেতন । মনকাড়া । যে কোনো পটভূমিতে যে কোনো মানুষের কাছে এটি একটি অন্তরঙ্গ জায়গা । নজরকাড়া । আসুন, আমরা এই সুপ্রাচীন প্রশান্তিময় আপন প্রাঙ্গনটিকে সেভাবেই অবলোকন করি ।