করোনা ভীতি দূরে ঠেলে জাগছে আমেরিকা, সরব প্রবাসীরাও
লাবলু আনসার, যুক্তরাষ্ট্র: করোনায় সংক্রমের হার একেবারেই কমে আসার পাশাপাশি মৃত্যুর হারও নিয়ন্ত্রণে আসায় নিউইয়র্কসহ সারা আমেরিকা পুনরায় জেগে উঠার পথে উঠেছে। সড়ক-মহাসড়কেই শুধু ট্রাফিক জ্যাম দেখা দেয়নি, পথচারিরাও হুমড়ি খেয়ে পড়েছেন নিজ নিজ গন্তব্যে। ব্যবসা-বাণিজ্যেও গতি আসতে শুরু করেছে। গত বছরের মধ্যমার্চের পূর্ববর্তী অবস্থা দৃশ্যমান হচ্ছে নিউইয়র্ক, লসএঞ্জেলেস, ফিলাডেলফিয়া, বস্টন, ডেট্রয়েট, মায়ামী, আটলান্টা, ডালাস, হিউস্টন, ফিনিক্সসহ বাংলাদেশী অধ্যুষিত সিটিসমূহে।
এখনও প্রায় সকলেই মাস্ক পড়লেও সামাজিক দূরত্ব নিয়ে খুব বেশী মাথাব্যথা কারো আছে বলে মনে হয় না। উল্লেখ্য, সপ্তাহখানেক আগেই সিডিসি জানিয়েছে, যারা পূর্ণ ডোজের টিকা নিয়েছেন তারা মাস্ক না পড়লেও চলবে। এরপর নিউইয়র্ক, নিউজার্সি, পেনসিলভেনিয়া, কানেকটিকাট, ম্যাসেচুসেট্্স, ভার্জিনিয়া, মিশিগান, টেক্সাস, ফ্লোরিডা, জর্জিয়া, ক্যালিফোর্নিয়া, আরিজোনাসহ বেশ কটি স্টেটে রেস্টুরেন্ট, বার, ক্লাব পুরোদমে খুলে দেয়া হয়েছে। ব্যবসা-বাণিজ্য কেন্দ্রে প্রবেশাধিকার অবাধ এবং অফিস-আদালতেও সশরীরে উপস্থিতির বিধি শিথিল করা হয়েছে। গ্রীষ্মের আমেজে পরিবেশ-প্রকৃতি সবকিছুতেই প্রাণ ফিরেছে। প্রাণের সাথ প্রাণ মিশিয়ে বিশ্বখ্যাত টাইমস স্কোয়ারে তরুন-তরুণীরা আবারো উচ্ছ্বলতায় মেতে উঠেছে। প্রবাসী বাংলাদেশীরাও নিজ নিজ আঙ্গিনায় পুরনো আড্ডায় বারবিকিউ পার্টি শুরু করেছে।
সামাজিক-সাংস্কৃতিক-রাজনৈতিক সংগঠনগুলোও চিরচেনা পন্থায় বৈঠক শুরু করেছে। অনেকেই পিকনিকের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। গত বছরের জুনের পর এই সপ্তাহে করোনায় সংক্রমণের সংখ্যা দৈনিক ৩০ হাজারের নীচে এসেছে। গত বছরের গ্রীষ্মের যে কোন দিনের চেয়ে গত সপ্তাহে সবচেয়ে কম মানুষের প্রাণ ঝরেছে করোনায়। সিডিসির তথ্য অনুযায়ী, সারা আমেরিকাতেই পরিস্থিতির উন্নতি ঘটেছে। রবিবার পর্যন্ত মোট জনসংখ্যার ৫০% এর মত করোনার টিকা গ্রহণ করেছেন। যদিও সাম্প্রতিক সময়ে টিকা প্রদানের গতি স্লথ হয়ে পড়েছে।
ফুড এ্যান্ড ড্রাগ এডমিনিস্ট্রেশন ( ফেডারেল ওষধ নিয়ন্ত্রণ সংস্থা)’র সাবেক প্রধান ড. স্কট গুটলিব রবিবার সিবিএস টিভির ‘ফেস দ্য ন্যাশন’এ বলেছেন. ‘আমার ধারণা জুনের মধ্যে প্রতিদিন গড়ে প্রতি হাজার আমেরিকানের মাত্র একজন করে করোনায় সংক্রমিত হবেন। যা খুবই আশাব্যঞ্জক ঘটনা বলে মনে করছি। উল্লেখ্য, করোনায় সংক্রমণের হার রবিবার ৩% এরও কম ছিল এবং এটি হচ্ছে গত ১১ মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন। অর্থাৎ করোনার টেস্ট ব্যাপকভাবে শুরুর পর এত কম সংক্রমিত হয়নি কোনদিনই। আর এটি হচ্ছে সারা আমেরিকার দৈনিক গড় হার। গত বছরের ৫ মার্চের পর এই প্রথম ক্যালিফোর্নিয়ার সানফ্রান্সিসকো জেনারেল হাসপাতাল করোনার কোন রোগী পায়নি গত বৃহস্পতিবার। আগে থেকেই কেউ ছিলেন না। এ তথ্য জানান এই হাসপাতালের সংক্রমণ সম্পর্কিত বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ড. বিবেক জ্যাইন।
মিশিগান স্টেট ছিল অন্যতম একটি স্টেট, যেখানে অসংখ্য মানুষের প্রাণ ঝরেছে। সেখানেও রবিবার মাত্র ১৪০০ জন রোগী পাওয়া গেছে। অথচ মধ্য এপ্রিলেও দৈনিক গড়ে ৭৮০০ জন ভর্তি হয়েছে বিভিন্ন হাসপাতালে। তবে, প্রত্যন্ত এলাকা বিশেষ করে যেসব অঞ্চলে এখনও অনেক বেশী মানুষ টিকা পাননি, সে সব এলাকায় করোনার ভীতি কমেনি।
সিডিসির সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, দু’সপ্তাহ আগের যে কোন দিনের চেয়ে গত সপ্তাহে দৈনিক সংক্রমিত হবার হার কমেছে ৩৯% এবং সে সংখ্যা ২৫৭০০ জনের নীচে। মৃত্যুর হারও কমেছে ১৪% অর্থাৎ দৈনিক গড়ে ৫৭৮ জনের মৃত্যু হয়েছে দু’সপ্তাহ আগে। তবে স্বাস্থ্য-বিশেষজ্ঞরা সকলকে সতর্ক করে দিয়েছেন, যারা টিকা নেননি তারা যেন সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখেন এবং মাস্ক পড়েন। নিজের এবং আশপাশের লোকজনের স্বার্থেই বিবেক সজাগ রেখে চলাফেরা করা দরকার বলেও উল্লেখ করেছেন চিকিৎসা-বিজ্ঞানীরা। স্মরণ করা যেতে পারে, ২৩ মে পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রে মারা গেছে ৫ লাখ ৮৯ হাজারের অধিক মানুষ। এরমধ্যে হাজার খানেক বাংলাদেশীও রয়েছেন। এ যাবত আক্রান্ত হন ৩ কোটি ৩১ লাখের অধিক আমেরিকান।
এস এস/সিএ
দেশ-বিদেশের টাটকা খবর আর অন্যান্য সংবাদপত্র পড়তে হলে CBNA24.com
সুন্দর সুন্দর ভিডিও দেখতে হলে প্লিজ আমাদের চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন
আমাদের ফেসবুক পেজ https://www.facebook.com/deshdiganta.cbna24 লাইক দিন এবং অভিমত জানান