ফিচার্ড লেখালেখি

বিশ্ব এখন বিপর্যের দ্বারপ্রান্তে |||  অমলেন্দু ধর

বিশ্ব এখন বিপর্যের দ্বারপ্রান্তে |||  অমলেন্দু ধর

নানা কারণে বিশ্ব এখন বিপর্যের দ্বারপ্রান্তে উপনীত হয়েছে। গত দুই বছর ধরে কোবিড – ১৯ অতিমারী ও তার মোকাবিলায় আরোপিত নানা স্বাস্থ্যবিধি, লক ডাউন, চাকুরি হারানো, অর্থনৈতিক মন্দা বিশ্বকে বিপর্যস্ত করে তুলেছে। ডাক্তার ও বিশেষজ্ঞেরা ভেকসিন নেয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন, সরকার তাদের পরামর্শমত ভেকসিন দেয়ার বিষয়ে কড়াকড়ি আরোপ করছেন। এরই মধ্যে কিছু লোক ভেকসিনের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে বিভিন্ন দেশে বিশৃংখল পরিস্থিতি তৈরী করছে।

এমন বিপর্যয়ের মধ্যে  কিছু উচ্চাকাঙ্খী নেতা (একনায়ক)  তাদের সম্প্রসারণবাদী উদ্দেশ্য সফলের জন্য বিশ্বকে যুদ্ধের দেকে ঠেলে দিচ্ছে। ১৯৯২ সালে সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙ্গে পোল্যাণ্ড, রুমানিয়া, চেকোশ্লোভাকিইয়া, ইউক্রেন, জর্জিয়া, তাজিকিস্তান, কাজাকিস্তান, উজবেকিস্তান ইত্যাদি স্বাধীন রাষ্ট্র হিসাবে আত্মপ্রকাশ করে। রাশিয়ার বর্তমান একনায়ক ভ্লাদিমীর পুতিন আবার সোভিয়েত ইউনিয়ন প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন দেখছেন। ২০১৪ সালে পুতিন ইউক্রেনভুক্ত ক্রিমিয়া উপদ্বীপ জোরপূর্বক দখল করে নেয়। সম্প্রতি পুতিন ইউক্রেন এবং জর্জিয়াকে ন্যাটোভুক্ত করা যাবে না এবং পূর্ব ইউরোপ থেকে ন্যাটো সৈন্য অপসারণের দাবী উত্থাপন করে ইউক্রেন সীমান্তে লক্ষাধিক সৈন্য ও সর্বাধুনিক মারণাস্ত্রের সমাবেশ ঘটিয়ে যুদ্ধাতংক সৃষ্টি করেছেন।

ন্যাটোর উপর চাপ সৃষ্টি করে ঐ মর্মে একটি লিখিত গ্যারাণ্টি আদায় করতে চাচ্ছেন। ন্যাটো দেশসমুহ এমন অন্যায্য দাবী মানতে নারাজ হলে রাশিয়া আরও আক্রমণাত্মক ভূমিকা গ্রহণ করে। রাশিয়া ও চীন একে অন্যকে সহযোগিতা করার অঙ্গিকার করেছে। এমন পরিস্থিতিতে যুক্তরাষ্ট্র ও ন্যাটোভুক্ত দেশসমুহ নড়েচড়ে উঠেছে। তারা আলোচনার মাধ্যমে সমস্যা সমাধানের চেষ্টার পাশাপাশি যুদ্ধপ্রস্তুতিও শুরু করেছে। রাশিয়া এবং চীন দুটোই একনায়কতান্ত্রিক দেশ হওয়ায় তারা দ্রুত চুক্তিবদ্ধ ও যুদ্ধ প্রস্তুতি গ্রহন করতে পেরেছে। সে তুলনায় ন্যাটোভুক্ত দেশসমুহ এখনও সমন্বিত কোন যুদ্ধ কৌশল ঠিক করতে পেরেছে বলে মনে হয় না। তারা রাশিয়ার উপর কঠোর অর্থনৈতিক অবরোধ আরোপের প্রস্তুতি নিচ্ছে। রাশিয়ার সহযোগী চীনও তার সম্প্রসারণবাদী নীতি অব্যাহত রেখেছে। চীন ইতিমধ্যে তাইওয়ানকে ধমকাতে শুরু করেছে। চীন তার নিকট প্রতিবেশী ভারতের বিরাট ভূখন্ডের উপর দাবী উত্থাপন করে লাদাখ ও অরুণাচল সীমান্তে ৭০ হাজারের অধিক সৈন্যের সমাবেশ ঘটিয়ে যুদ্ধাবস্থার সৃষ্টি করেছে। তারা ভিয়েতনাম, ফিলিপাইন, জাপান, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, অষ্ট্রেলিয়া ইত্যাদি দেশে ভূখণ্ড ও সমুদ্রসীমার উপর দাবী উত্থাপন করে সকল প্রতিবেশীকে উদবিঘ্ন করে তুলেছে। এশীয় প্রশান্ত মহাসাগরীয় এলাকায় চীনের আদিপত্য মোকাবিলায় যুক্তরাষ্ট্র, ভারত, অষ্ট্রেলিয়া ও জাপান মিলে QUAD নামে এক সহযোগিতা চুক্তি স্বাক্ষর করে যুদ্ধ প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে। সবকিছুমিলে ইউরোপ এবং এশিয়া এখন সম্পূর্ণ যুদ্ধের হুমকিতে রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রসহ বহু দেশ ইউক্রেনে অবস্থানরত তাদের নাগরিকদের দ্রুত সেদেশ ত্যাগ করার নির্দেশ দিয়েছে। রাশিয়া যে কোন মুহুর্তে ইউক্রেন আক্রমণ করতে পারে মর্মে যুক্তরাষ্ট্র সকলকে হুশিয়ার করেছে। রাশিয়া ইউক্রেন আক্রমণ করলে ্ন্যাটো তাতে জড়িয়ে পড়ার নিশ্চিত সম্ভাবনা রয়েছে। এই সুযোগে চীন চাইবে তাইওয়ান দখল করে নিতে। চীন ও পাকিস্তান ভারতের বিরুদ্ধেও যুদ্ধ শুরু করার সমুহ সম্ভাবনা রয়েছে। এতদিন ধারণা করা হয়েছিল চীন-ভারত যুদ্ধে রাশিয়া নিরপেক্ষ থাকবে, কিন্তু সাম্প্রতিক ঘটনাবলী বলে দিচ্ছে রাশিয়া চীনের পক্ষেই যাবে। তখন ভারতকে অবশ্যই যুক্তরাষ্ট্রের দিকে ঝুকে থাকতে হবে। অবস্থা দৃষ্টে মনে হচ্ছে ন্যাটোভুক্ত ইউরোপের প্রায় সব ক’টি দেশ, যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, অষ্ট্রেলিয়া, জাপান, ভারত, ইন্দোনেশিয়া ইত্যাদি দেশ এক পক্ষে এবং রাশিয়া, চীন, পাকিস্তান, ইরাণ, উত্তর কোরিয়া, ইত্যাদি অপর পক্ষে যুদ্ধে জড়িয়ে পড়লে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হয়ে যেতে পারে। প্রথমে আণবিক অস্ত্র প্রয়োগে বিরত থাকলেও শেষ পর্যন্ত আণবিক অস্ত্র ব্যবহৃত হবে না সে নিশ্চয়তা কেউই দিতে পারবে না। আর আণবিক যুদ্ধ শুরু হলে মানব তথা পৃথিবীর যাবতীয় প্রাণীকূলের অস্তিত্ব বিপন্ন হবেই। তাছাড়া চরম অর্থনৈতিক বিপর্যয়, নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য সরবরাহ, বিদ্যুৎ, তৈল ইত্যাদির ঘাটতি সৃষ্টি হয়ে মানব জাতি মহা বিপর্যয়েরমুখে পতিত হবার সম্ভাবনা রয়েছে। যাই হোক যুদ্ধ এড়ানোর শেষ চেষ্টা হিসেবে প্রেসিডেন্ট বাইডেন শনিবার পুতিনের সাথে ফোনে বৈঠক করবেন বলে জানা গেছে। এই বৈঠকের ফলাফলের উপর অনেকটাই নির্ভর করছে বিশ্বের ভবিষ্যত।

-লেখক, প্রাক্তন এডভোকেট

 


সংবাদটি শেয়ার করুন