পাকিস্তান থেকে উঠে আসা মালালাও মাঝে মাঝে জীবন নিয়ে বিভ্রান্তির হাত থেকে রেহাই পাননি। সম্প্রতি একটি ম্যাগাজিনকে এমনটিই জানিয়েছেন তিনি। গত ১০ বছরের মধ্যে তিনি নিজেকে কোথায় দেখেছেন এমন এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘এটি আমার কাছেও একটি প্রশ্ন, ঘণ্টার পর ঘণ্টা বিছানায় শুয়ে ভাবি, এরপর আমি কি করতে যাচ্ছি?’
মালালা ইউসুফজাই। ছবি: ভোগ ম্যাগাজিন
নিজের ভেতর জন্ম নেওয়া নানা প্রশ্ন নিয়ে ২৩ বছর বয়সী এই নোবেল পুরস্কার বিজয়ী বলেন, ‘কোথায় থাকব? আমার কি যুক্তরাজ্যে বসবাস করা চালিয়ে যাওয়া উচিত, নাকি আমি পাকিস্তানে বা অন্য দেশে চলে যাব? দ্বিতীয় প্রশ্ন হল, আমি কার সঙ্গে বসবাস করব? আমার কি নিজের ওপর বাঁচতে হবে? আমার কি পিতা-মাতার সঙ্গে থাকতে হবে?’
পাকিস্তানের তালেবান নিয়ন্ত্রিত সোয়াত উপত্যকার মিঙ্গোরা শহরে মেয়েদের স্কুলে যাওয়া নিষিদ্ধ ছিল। তখন ১১ বছর বসয়ী মালালা মেয়েদের অধিকারের জন্য প্রচারণা শুরু করেন। এ সময় মালালা বিবিসিতে গুল মাকাই ছদ্মনামে ব্লগিং শুরু করেন। তালেবান শাসনের অধীনে মেয়েদের জীবন-যাপন কেমন ছিল সে বিষয়ে লিখতেন তিনি। এরপর ২০১২ সালে বাসে স্কুল থেকে সহপাঠীদের সঙ্গে বাড়ি ফিরছিলেন। এসময় একজন তালেবান বন্দুকধারী তাকে এবং দুই সহপাঠীকে গুলি করে।
পরে যুক্তরাজ্যে চিকিৎসা নেন এবং পরিবারের সঙ্গে সেখানেই বসবাস করতে শুরু করেন। সুস্থ হওয়ার পর শিশুদের শিক্ষা ও অধিকার নিয়ে কাজ শুরু করেন তিনি। পিতা জিয়াউদ্দিনের সঙ্গে শিশুদের জন্য কাজ করতে মিলে গঠন করেন মালালা তহবিল।
মালালা ইউসুফজাই। ছবি: ভোগ ম্যাগাজিন
তলেবানদের হামলার শিকার মালালা মেয়েদের অধিকার নিয়ে তার সক্রিয়তা দিগুণ হয়েছে বলে মনে করেন তার বাবা জিয়াউদ্দিন, মা তূর, ছোট ভাই অটল ও খুশল।
মালালার হত্যাচেষ্টার ঠিক এক বছর পর তার আত্মজীবনী ‘আই এম মালালা’ প্রকাশিত হয়। বইটি আন্তর্জাতিক বেস্টসেলার হয়ে ওঠে। এরপর তিনি বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীদের সঙ্গে সাক্ষাত করেছেন। এছাড়া তার ১৬ তম জন্মদিনে জাতিসংঘের যুব সমাবেশে ভাষণ দিয়েছেন এবং বিশ্বজুড়ে পরিবর্তনের জন্য তার মতামত ব্যক্ত করেছেন।
মালালার নামে জাতিসংঘ স্বীকৃত আন্তর্জাতিক দিবস রয়েছে। ২০১৩ সালের ১২ জুলাই তার ১৬ তম জন্মদিনে ‘মালালা দিবস’ ঘোষণা করে জাতিসংঘ।
সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার সঙ্গে সাক্ষাত করেন মালালা।
২০১৩ সালে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা ও ফাস্ট লেডি মিশেল ওবামার সঙ্গে দেখার করার জন্য হোয়াইট হাউসে গিয়েছিলেন মালালা ইউসুফজাই। এসময় তার ভদ্রতা, প্রজ্ঞা ও মেয়েদের অধিকার আদায়ে আন্তরিক বিশ্বাসকে প্রশংসা করেন তারা।
গুলিতে আহত হওয়ার পর কড়া নিরাপত্তার মধ্যে প্রথমবারের মতো ২০১৮ সালে নিজ দেশ পাকিস্তানে ফেরেন নোবেল শান্তি পুরষ্কার বিজয়ী মালালা ইউসুফজাই।
গত ১০ নভেম্বর মালালা ইউসুফজাই বিয়ে করেছেন। পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ডের কর্মকর্তা আসার মালিককে জীবনসঙ্গী হিসেবে বেছে নেন তিনি। লন্ডনের বার্মিংহামে তাদের বিয়ে হয়েছে। এক টুইট বার্তায় নিজের বিয়ের খবর জানান তিনি।
পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ডের কর্মকর্তা আসার মালিককে বিয়ে করেন মালালা।
২০১৪ সালের ১০ অক্টোবর শিশুদের প্রতি অবিচারের বিরুদ্ধে ও শিক্ষার অধিকারের লড়াইয়ের জন্য মালালা ইউসুফজাইকে নোবেল শান্তি পুরস্কার প্রদান করা হয়। মাত্র ১৭ বছরে মালালা এই পুরস্কারলাভের সময় বিশ্বের সর্বকনিষ্ঠ নোবেলজয়ীর সম্মান লাভ করেন।
মালালা ইউসুফজাই ১৯৯৭ সালের ১২ জুলাই পাকিস্তানের উত্তর-পশ্চিম খাইবার পাখতুনখাওয়া প্রদেশের সোয়াত জেলায় পশতুন জাতিগোষ্ঠীর এক সুন্নি মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। –ইত্তেফাক