ফিচার্ড সাহিত্য ও কবিতা

আছে সেসব ।।। শীতল চট্টোপাধ্যায়

আছে সেসব ।।। শীতল চট্টোপাধ্যায়

নেই বলাটা বদলে আমরা    বলব থাকা সত্যে যত,
চোখের সামনেই আছে সেসব   তোমার এবং আমার মতো৷
একটু চোখে চাও
থাকার খুশি নাও ৷
নেই বলাকে বদলে দিতে      আছের সামনে চলব নিয়ে,
মাঠ রয়েছে, ঘাস রয়েছে       দেখবে শুধু দু’চোখ দিয়ে৷
দেখো মাটি চায়
নীরবে গান গায়৷
মনের মধ্যে মন রয়েছে        কান্না -হাসির অনুভূতি,
আনন্দতে ফুটে ওঠে            চোখের মধ্যে দীপ্ত দ্যুতি৷
মনের মধ্যে মন
বইছে সারাক্ষণ৷
মায়ের বুকে আদর-স্নেহের    জোয়ার-বানে সদাই ভরা,
মায়ের মধ্যে মা রয়েছে          অসীমতার মায়ে ধরা৷
বুকের ভেতর মা
কোথাও সরেনা৷
মাটির ঘরের হৃদয় গৃহয়        কর্তা-গিন্নি,বউ ও ছেলে,
নাতনি -নাতির বাঁধন খুলে   কেউই-কাউকে দেয়নি ঠেলে ৷
একসাথে সব্বাই
হৃদয় বড় তাই ৷
পানকে ছেঁচার হামানদিস্তায়    পান ছিঁচে খায় ঠাম্মা তাতে ,
দাদুর আছে কালির কলম      লিখছে আজও কাঁপা হাতে ৷
কালি-কলম রয়
দাদুর লেখা বয় ৷
যেমন ভরায় তেমনি ভ’রে    একটু আকাশ যায়নি সরে ,
শিশুর জন্য চাঁদের হাসি      একই রকম পড়ছে ঝ’রে ৷
চাঁদও আপনজন
মনকে সে দেয় মন ৷
গল্প বলা ঠোঁটের কাঁপন      পাশাপাশি তারায়-তারায় ,
ওই তারাদের পাড়া চিনেই    রাতটা রোজই এসে দাঁড়ায় ৷
তারারা সাঁতরায়
থৈ-থৈয়ে রাতটায় ৷
ওই তো আছে প্রবীণ সাঁকো   রঙের সাথে রঙ জুড়ে গা’য় ,
রামধনু ওই সাঁকো দিয়ে        ইলশেগুঁড়ি বৃষ্টিরা যায় ৷
রামধনু উঠলেই
সাতটা রঙে সেই ৷
মাঝে-মাঝে মেঘ বেরিয়ে       পা’কে ডুবায় নদীর জলে ,
নৌকা পালে বাতাস চেপে       উজানে সব থাকায় চলে ৷
সব থাকা সবখান
তেমনিই অফুরান ৷
হালি ধানের পাতার সবুজ       মাঠ ভরিয়ে দেয় যে ঢেলে ,
আলেতে বক থমকে দেখে      ধানের নাচন দু’চোখ মেলে ৷
আল,বক আছে ঠিক
মাঠ শোয়া চেনা দিক ৷
কৃষাণী বউ নবান্নতে       নতুন চালের পায়েস রাঁধে ,
উঠোনে ধান মরাই বেঁধে   বুকের ভেতর সুখকে বাঁধে ৷
নতুন চালের ঘ্রাণ
ছড়ায় সুখের গান ৷
দেওয়াল ঘড়ির পেন্ডুলামে   চলছে ঘড়ি সঠিক বাজায় ,
দখল করা দেওয়ালেতে    টিকটিকি বাস করছে রাজায় ৷
দুলছে পেন্ডুলাম
বয় পুরানোর নাম ৷
বাতাস ভরায়-ঘাস গালিচায়   পথ বিছানো দূরের গ্রামে ,
প্রথম রোদটা একই পথে      গাছের পাতা -পাতায় থামে ৷
গ্রামের নামে গ্রাম
আসে চিঠির খাম ৷
চাপা কলের জল রয়েছে      কলসি ভরার শব্দ ওঠে ,
পাঁচ বাড়ি বউ কলতলাতে     গল্প খানিক ঝরায় ঠোঁটে ৷
চলল ফিরে ঘর
ফাঁকাতে চত্বর ৷
ঝুলিয়ে বাঁকে সাপের পেঁড়ি    সাপুড়িয়ার নাগিন বাঁশি ,
যেই বাজালো পাড়ায় এসে    কিশোর চোখে নাচল হাসি ৷
খেলা দেখায় সাপ
পাড়াতে উত্তাপ ৷
পুকুরে ঢেউ উঠছে আজও     গাছের পাতা দুলতে ঝ’রে ,
হাঁসগুলো সব মুখ দেখে নেয়  জলকে ওরা আয়না ক’রে ৷
আয়না জলের পুকুর
যায়নি সরে দূর ৷
বাসন মাজা ঘাটে ঘোরে    মায়ের পোষা চুনো-পুঁটি ,
বাসন নিয়ে যেই নামে মা   এঁটো খাওয়ার হুটোপুটি ৷
মা ,পুঁটি ও ঘাট
পুকুর জলের পাঠ ৷
গামছা বাঁধা মুড়ি মাথায়   গ্রাম কিশোরী চলছে মাঠে ,
বাবা মাঠে লাঙ্গল চালায়  জোয়াল টেনে গরু হাঁটে ৷
চষা মাটি চুপ
গন্ধ ওঠে খুব ৷
তাল পাতাতে বুনন শিল্পে   বাবুই পাখির বাসা ঝোলে ,
অন্য পাখি বলে- বাবুই ,    দাওনা বোনার বুদ্ধি বলে ৷
বাবুই পাখির ঝাঁক
থাকায় টানে আঁক ৷
বেসুরোতেও সুরের আবেগ   কিশোর ঠোঁটের নতুন শিসে ,
আজও কিশোর উদাস বেলায় কাটায় আকাশ সঙ্গে মিশে ৷
কিশোরবেলা-কাল
যায় বয়ে উত্তাল ৷
গাই গরুটাও আছে গ্রামে   গোয়াল থেকে শুধুই তাকায় ,
যদি এসে কেউ করে যায়   একটু আদর তার কালে গা’য় ৷
আছে গোয়াল-গাই
গ্রামেতে সবটাই ৷
তুলতুলে গা ফিনফিনে রূপ   শিরীষ ফুলের গন্ধ বনে ,
লম্বা আকার বীজ শুকালেই হাওয়ায় বাজে আপন মনে ৷
শিরীষরা প্রবীণ
রেখে পেরোয় দিন ৷
ডোবার জলে ঘেসো দলে    ওই লুকালো ডাহুক ছানা ,
গুগলি খুঁজতে জেলে মাসি   দলকে ধরে দিচ্ছে টানা ৷
থাকছে ডাহুক ডাক
দিন বলে যায় থাক ৷
হেলেঞ্চা আর কলমি ফুলে   মাঠের ধারে একলা ডোবা ,
সে-ও আপন স্বাধীনতায়     রাখছে ধরে নিজের শোভা ৷
ডোবায় কলমি রূপ
শোভায় অপরূপ ৷
সাঁঝের আঁচল লুটালো যেই  জোনাক আলোর নকশা বোনা ,
পাঁচালিতে প্যাঁচার গলা    নীরব রাতে যাচ্ছে শোনা ৷
লক্ষ্মীপ্যাঁচা চায়
বসে আলনাটায় ৷
সন্ধ্যা প্রদীপ , স্বর্গবাতি       জ্বলে অতি অনুজ্জ্বলে ,
প্রথার প্রতীক হয়ে আলো   ‘জ্বলে আছি’ ভাষায় বলে ৷
প্রদীপ জ্বলে যায়
ফুরায়না শিখায় ৷
বাউল আছে এক-দোতারায়  সাঁঝে দূরের বাঁশি লুকায় ,
ধারায় ফেরে উৎসব-পার্বণ   কীর্তনে দুই চোখ ভিজে যায় ৷
বাউল ও কীর্তন
শুনে হারায় মন ৷
আছে ঋতুর আসা-যাওয়া     প্রকৃতি সাজ বদলে সাজায় ,
কতই এসব থাকার খবর       সূর্য-পাখি রোজ বলে যায় ৷
ভরপুর থাকাতেই
যাক বলা নেই-নেই ৷

ঠিকানা – জগদ্দল , উত্তর ২৪ পরগণা
পশ্চিমবঙ্গ , ভারতবর্ষ

 

 



এসএস/সিএ
সংবাদটি শেয়ার করুন
সংবাদটি শেয়ার করুন