ফিচার্ড বিনোদন

মুভি সমালোচনা -” আদি পুরুষ ” ।।। প্রজ্ঞা চৌধুরী প্রাপ্তি

মুভি সমালোচনা -” আদি পুরুষ ” ।।।  প্রজ্ঞা চৌধুরী প্রাপ্তি 
কয়দিন হলো একটি মুভি দেখলাম – নাম ” আদি পুরুষ”। ছবিটির ব্যপারে যখন প্রথম জানলাম তখন মনে এক অদ্ভুত তৃপ্তি অনুভূত হলো। আর হবে না-ই-বা কেন? এ যে স্বয়ং শ্রীরামচন্দ্রের জীবন কাহিনী অর্থাৎ রামায়ণের সারবত্তা সংগ্রহে লেখা। এর প্রধান চরিত্র অর্থাৎ শ্রী অযোদ্ধাপতি রঘুনাথের চরিত্রে অভিনয় করেছেন ” ভেঙ্কটা সূর্যনারায়ণা প্রভাস রাজু উপালাপাটি ” অর্থাৎ  বাহুবলী খ্যাত প্রভাস-কে। সে কি উৎসাহ! আবার রামায়ণের গল্প টেলিভিশন এর পর্দায় দেখে অঝোর ধারায় চোখ থেকে ঝড়বে এক পশলা শান্তি মিশ্রিত অশ্রু। যখন ডবলিউ তারকা ” রণবীর কাপুর ” অনাথ শিশুদের আদিপুরুষ দেখাবার জন্য ( যাতে অনাথ শিশুরাও হিন্দু ধর্মের সংস্কৃতি, ইতিহাস ইত্যাদি সম্পর্কে অন্ধকারে না থাকে) ” আদিপুরুষ ” রিলিজের প্রাক্কালে দশ হাজার টিকিট ক্রয় করেন তখন কে জানতো তার এতোগুলো টাকা জলে যাবে। এ কথা কেন বলা হলো তা বোধ হয় সোশাল মিডিয়া প্রেমীদের অজানা নয়। ছবিতে  আমাদের পরম আরাধ্য পবন পুত্র হনুমানজীর ডায়ালগ দৃশ্যে শোনা যায়, ” লকড়ি তেরে বাপ কি আগ তেরে বাপ কা জ্বলেগি ভি তেরি বাপ কী ” কিংবা ” কিসি নে ভি আগার হামারে বানার সেনা ও কো হাত লাগানে কি কোশিশ কী তো হাম উনকি লঙ্কা লাগাদেঙ্গে ” দেখাই যাচ্ছে যে এখানে আমাদের পরম পুজনীয়দেরে কিভাবে তুলে ধরা হয়েছে। এটি অত্যন্ত দুঃখের বিষয় যে পরিচালক প্রযোজক হিন্দু ধর্মাবলম্বী হয়েও স্বীয় ধর্মের প্রতি উদাসীনতা প্রদর্শন করে সমালোচনার ক্ষেত্র প্রস্তুত করেছেন যা কোনক্রমেই কাম্য হতে পারে না। সীতার চরিত্রে জনপ্রিয় অভিনেত্রী ” কৃতি সানন ” ও লঙ্কেশ্বেরর চরিত্রে বলিউডের নবাব ” সাইফ আলী খান “। দু’জনেই কাজের ক্ষেত্রে নিজের প্রতিভার বিকাশ ঘটাতে কখনো কার্পণ্য করেন না কিন্তু এক্ষেত্রে VFX এর কাজটা অতিরিক্ত বলে আমি বোধ করি। রাবণ যখন সীতাকে হরণ করে তখন সে চাতুরীর মাধ্যমে ভিক্ষুকের বেশ ধারণ করে সীতাকে লক্ষণ রেখার বাহিরে এনে বল প্রয়োগে রথে চড়িয়ে লঙ্কায় নিয়ে যায় কিন্তু এখানে দেখানো হয়েছে – সীতা লক্ষণ রেখা পাড় হতেই রাবণ মায়াবলে সীতাকে অপহরণ করে একটি উরন্ত বাঁদুড়ের উপর তুলে লঙ্কায় নিয়ে যায়। এ ব্যপারে পরিচালককে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন – “Sir Shita is my mother. Nobody can touch her.” কিন্তু তাই বলে তিনি যে ইতিহাস পরিবর্তন করার কোনো অধিকার রাখেননা, তা তাকে বোঝাবার সাধ্যি কার?! এছাড়া ও এখানে আরও অনেক কারিশ্মা রয়েছে। যা বোধ হয় অতোটা না দেখালেও চলতো। তন্মধ্যে একটি হচ্ছে, এখানে স্বর্ণলঙ্কার বদলে কয়লার লঙ্কা প্রদর্শিত হয়েছে। একবিংশ শতাব্দীতে এসে এতো খারাপ ক্যামেরা কোন গো-ভাগাড় থেকে তুলে আনা হয়েছে সেটি একটি বিরাট রহস্য। কারণ ১৯৮৭ সালে শুরু হওয়া স্বর্গীয় রামানন্দ সাগরজীর রামায়ণ কথার প্রত্যেকটি এপিসোড, অভিনেতা – অভিনেত্রীদের কথোপকথন বাচন ভঙ্গিমা আমাকে মুগ্ধ করেছে। প্রত্যেকটি এপিসোড দেখাকালে চোখের কোনা ভিজেছে। এটিইতো পরিচালকের সর্বশ্রেষ্ঠ প্রাপ্তি। সিরিয়ালের প্রধান চরিত্র অরুণ গভিলের স্ত্রী এর ভাষ্যমতে,” তাঁর চতুর্থ শ্রেণি পড়ুয়া পুত্রের সহপাঠীর পিতৃবিয়োগে পুত্রকে কাঁদতে না দেখে লোকজন নানা প্রশ্ন করলে সে তাদের বলে অরুণ গভিলের পুত্র আমার সহপাঠী। কাল আমি স্কুলে গিয়ে আমার বন্ধুকে বলবো তার পিতাকে বলতে আমার বাবাকে আমার কাছে ফিরিয়ে দেবার জন্য।” এছাড়াও সিরিয়ালের প্রত্যেক শিল্পী আজও মানুষের কাছে পরম শ্রদ্ধাভাজন। যা- ই হোক, ছবি Release এর দিনে ছবির net box collection ছিল, 95 crore. যা পরবর্তী দিনগুলোতে যার পর নাই নিম্নগামীতা লাভ করে।” ছবির এরূপ মুখ থুবড়ে পড়া হাল দেখে ছবির makers রা ছবির নিন্দিত dialouage সমূহ পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন এবং সেই কিঞ্চিত পরিবর্তিত ছবি লোকসম্মুখে নিয়ে আসেন। কিন্তু তাতে খুব একটা লাভ করা যায় নি। এজন্যই বোধ হয় কথায় বলে, ” ভাবিয়া করিও কাজ, করিয়া ভাবিও না।”
 
১০/০৭/২০২৩ ইং
সংবাদটি শেয়ার করুন