সাহিত্য ও কবিতা

দুগ্গারা ||||| শীতল চট্টোপাধ্যায় 

দুগ্গারা ||||| শীতল চট্টোপাধ্যায় 

মহালয়ার ভোর পেরিয়ে
লাল পদ্মের মতো ফুটে উঠেছে পুবের আলো,
আলোয় সূচিত হয়েছে দেবীপক্ষের আলো,
ঠিক তখনই – বাইরের দরজায় ঠুক -ঠুক শব্দের
আলতো ছোঁয়া, দরজা খুলি –
দুগ্গা এলো, কাজের দুগ্গা ৷
একটুও দেরি না করে, যুদ্ধ শুরু করে সে,
দু’হাতে – দশহাতের সমান শক্তি নিয়ে
বাসনগুলোকে বশীভূত করাতে যুদ্ধ চালায় কলতলায়,
হঠাৎই ঝন-ঝন শব্দে কাচের গ্লাস বা প্লেট ভাঙলো
শব্দ পাওয়া গেল,
না, দুগ্গাকে একটুও সাড়া দিইনি, ভয়-লজ্জা পেতে,
ভেবেছি-  এ সময় দুগ্গাকে কিছু বলতে নেই৷
পুজো শুরু হয়ে গেছে৷
রাস্তা দিয়ে যেতে- যেতে
চিৎকার করে ডাক দিই-
দুগ্গামাসি…,ও.. দুগ্গামাসি..,
দূর থেকে দুগ্গামাসি বলল- না- রে বাপ্ ..,
আজ চুনো মাছ ধরিনি, তোদের গেরামে
ঠাকুর দেখতে যাচ্ছি ৷
মনে – মনে বলেছি, যাও দুগ্গামাসি,
দুর্গা দেখে দুর্গারূপ জাগিয়ে রাখো মনের ভেতর,
তাহলেই জীবন যুদ্ধ চালানোর
বল খুঁজে পাবে সারা বছর৷
মাঠের ধারের পুকুরটায় পদ্ম তুলতে যাওয়ার সময়-
দেখি, গাইগোরুটার দড়ি ধরে
আলে ঘাস খাওয়াচ্ছে দুগ্গা,
অন্য পাড়ায় থাকা চেনা দুগ্গাকে বলি-
কী-রে দুগ্গা, পুজোতলায় যাবিনি?
এক মুখ হেসে দুগ্গা বলল-
গাভিন গাইগোরুটার পেট খালি রাখা যাবেনা রে,
ওর পেট ভরিয়ে তারপর যাবো দুর্গার কাছে,
জানি, তাতে খুব খুশি হবে দুর্গা, বলেই-
বিশ্বাস ও পরিতৃপ্তির হাসি হাসলো আবার দুগ্গা,
পুকুরের পদ্মের আগেই
পদ্ম প্রাপ্তি হয়ে গেল দুগ্গার হাসিতে৷
গাঁয়ের এক কোণায় মুদি দোকানে গিয়ে
অষ্টমী পুজোর জন্য
ধুপ, বাতাসা, সিঁদুর, আলতা নিয়ে
শিবু মুদিকে দাম জিজ্ঞেস করতেই বলল-
আজ আর এগুলোর দাম দিতে হবেনি, নিয়ে যা,
দুর্গার জন্য নিলি যে, কী ক’রে দাম নিই বলতো?
আমাকে সবাই শিবু নামে ডাকলেও
আমার ভালো নাম যে ‘শিব’ ৷



২৪ পরগণা, পশ্চিমবঙ্গ , ভারতবর্ষ 


এসএস/সিএ
সংবাদটি শেয়ার করুন