ফিচার্ড মত-মতান্তর

মন্ত্রী পরিষদ ভাল হয়েছে, তবে ‘যুদ্ধংদেহী’

বাংলাদেশের-ভবিষ্যৎ-কি

মন্ত্রী পরিষদ ভাল হয়েছে, তবে ‘যুদ্ধংদেহী’?

শিতাংশু গুহ, নিউইয়র্ক।। নির্বাচন ২০২৪ শেষ। নুতন সরকার ক্ষমতাসীন। এটি স্মার্ট সরকার। এখন পর্যন্ত কোন বিরোধী দল নেই? স্মার্ট সরকারের প্রথম দায়িত্ব হবে একটি বিরোধী দল গঠন (!) এবং একজন বিরোধী দলীয় নেতা নির্বাচন করা। কারণ ওয়েষ্ট মিনিষ্টার টাইপ গণতন্ত্রে সংসদ নেতা ও বিরোধী দলীয় নেতা অপরিহার্য। কে হবেন বিরোধী দলীয় নেতা? নির্বাচনে জিতে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, এটাই আমাদের গণতন্ত্র, আপনারা বড় দেশ আপনাদের সাথে আমাদের তফাৎ থাকবে। তফাৎ আছে, আমাদের দেশে বিরোধী নেতা হতেও সংসদীয় নেতার আশীর্ব্বাদ লাগে।

মন্ত্রী পরিষদ শপথ নিয়েছে। নবগঠিত মন্ত্রী পরিষদ যথেষ্ট ভাল হয়েছে। সবচেয়ে ভাল হয়েছে আবুল হাসান মাহমুদ আলী; সাবের হোসেন চৌধুরী এবং ডাক্তার সামন্ত সেন-র নিয়োগ। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দুই মন্ত্রীকে একসাথে বাদ দেয়ায় মনে হয়েছিলো প্রধানমন্ত্রী বিরক্ত হয়ে এ পদক্ষেপ নিয়েছেন। নুতন মন্ত্রী নিয়োগে আভাষ মিলছে যে, আওয়ামী লীগ সরকার যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপ বা পশ্চিমাদের সাথে ‘যুদ্ধংদেহী’ মনোভাব অক্ষুন্ন রাখবে। ঢাকাস্থ মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস প্রধানমন্ত্রীকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। একই সাথে নুতন পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে শুভেচ্ছা জানাতেও তিনি ভুল করেননি।

কেমন হবে নুতন সরকার? স্মার্টই তো হবার কথা? নাকি এ সরকার হবে গত ১৫ বছরের ধারাবাহিকতা? ২০২৩-শে রাজনীতি যেমনটা ছিলো, ২০২৪-এ তাই থাকবে বলেই মনে হয়। বিদেশের সাথে সম্পর্কের তেমন হেরফের হবে বলে মনে হয়না। মে ২০২৪-এ ভারতে নির্বাচন। নভেম্বরে আমেরিকায় নির্বাচন। এ দু’টি ঘটনা বাংলাদেশের জন্যে গুরুত্বপূর্ণ। মোদী হয়তো জিতছেন। বাইডেন বা ডেমক্রেটরা হোয়াইট হাউস থেকে বিদায় নেয়ার সম্ভবনা উজ্জ্বল। তেমনটি ঘটলে শেখ হাসিনা’র জন্যে আশীর্ব্বাদ হবে। ২০২৪ সালটি বর্তমান সরকারের জন্যে হবে চ্যালেঞ্জের।

দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতির ওপর সবকিছু নির্ভরশীল। বিএনপি এবং এর সমমনা দলগুলো কি করে তাও দেখার বিষয়। তবে এবারের নির্বাচনে সবচেয়ে লাভবান হয়েছে আওয়ামী লীগ এবং ভারত। সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্থ বিএনপি। খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্য ভাল যাচ্ছেনা, তার কিছু হলে দলটি এতিম হয়ে যাবে। তারেক রহমানকে সামনে রেখে বিএনপি’র পক্ষে ক্ষমতায় যাওয়া অসম্ভব। বাংলাদেশের রাজনীতি এখন ভারতমুখী। নেতাদের ওয়াশিন্টনের বদলে দিল্লী যাতায়াত বাড়বে। হয়তো এজন্যে মন্ত্রী সভায় ৩জন হিন্দু পূর্ণমন্ত্রী, ১জন প্রতিমন্ত্রী ঠাঁই পেয়েছেন। এমনটি আগে ঘটেনি। স্বাস্থ্যমন্ত্রীর চয়েসটি ভাল।

এই সরকার ভারতের সমর্থনপুষ্ট। বাইরের চাপ বাড়লে এই সরকারের দিল্লির ওপর নির্ভরতা বাড়বে। রাজনৈতিকভাবে হিন্দুরা এই সুযোগটি কাজে লাগাতে পারেন। হয়তো একই কারণে হিন্দু নির্যাতন কিছুটা কমবে। এমপি’রা সবাই শপথ নিলেন। স্মার্ট সরকারের শুরুটা হলো একটু দৃষ্টিকটু। এমপিরা সবাই মুসলমান নন, শপথ অনুষ্ঠানে শুধু কোরান তেলোয়াত হয়েছে, এটিও ব্যতিক্রমী। তবে এটি ভুল নয়, ছাপানো প্রোগ্রামে গীতাপাঠ ছিলোনা। সমালোচকরা ইতিমধ্যে বলতে শুরু করেছেন, স্মার্ট সরকার হয়তো এর স্মার্ট পলিসি জানান দিলো।

এ সরকার যদি সত্যিই স্মার্ট হতে আগ্রহী থাকে তাহলে প্রথমেই দেশে সুশাসন প্রতিষ্ঠা করতে হবে, মুক্তিযুদ্ধের মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠা এবং গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে শক্তিশালী করতে হবে। রাষ্ট্রযন্ত্রকে সত্যিকার অর্থে ধর্মনিরপেক্ষ আচরণ করতে হবে। মানুষকে কথা বলতে দিতে হবে, মিডিয়াকে মুক্ত এবং বিচার বিভাগকে স্বাধীনতা দিতে হবে। লুটপাট বন্ধ করতে হবে, ইত্যাদি। নব-নির্বাচিত সংসদ যদি কার্যকর না হয়, তবে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার’ মত স্মার্ট সরকারও শ্লোগান হয়েই থাকবে। এ মুহূর্তে বাস্তবতা হচ্ছে, প্রধানমন্ত্রীর হাতে সর্বময় ক্ষমতা, তিনি যা চাইবেন, তা-ই হবে!! ১১ই জানুয়ারী ২০২৪।

 [email protected];

সংবাদটি শেয়ার করুন